নিজস্ব প্রতিবেদন

আজ পশ্চিমবঙ্গের বালিগঞ্জ বিধানসভা ও আসানসোল  লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ। উপ-নির্বাচন হলেও এ্ই আসন দুটি রাজ্য রাজনীতিতে বেশ আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হিসেবেই মনে করছেন রাজ্যবাসী। এর কারণ এই উপনির্বাচনে তৃণমূল থেকে যে দু’জনকে প্রার্থী করা হয়েছে তারা দু’জনই বিজেপি থেকে দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আর সেই কারণে শাসক বা বিরোধীদল কেউই ভোটে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ।

ওই দুই কেন্দ্রে মূলত: লড়াই হবে ত্রিমুখী। নির্বানের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই ওই দুই কেন্দ্রে ভোটের প্রচার  তুঙ্গে ওঠে। রবিবার দিনভর সেই প্রচার উত্তেজনা আর বিপরীতমুখী তরজার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে।  প্রচারপর্ব শেষ হতেই  তৃণমূলের দুই প্রার্থী দফায় দফায় এজেন্ট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে চলেছেন। তারা ভরসা রাখছেন সংগঠনে। উল্টোদিকে বিজেপি-সহ সমস্ত বিরোধী দল তৈরি তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে।\

বালিগঞ্জএর শূণ্য আসনে তৃণমূল থেকে প্রার্থী করা হয়েছে বিজেপি থেকে দলবদল করে আসা প্রাক্তন সাংসদ ও মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে। অপর দিকে  আসানসোলের লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছে বলিউডের প্রখ্যাত শিল্পী ও বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ ও মন্ত্রী শত্রুঘ্ন প্রসাদ সিনহা-কে।

এদিকে আসানসোল ও বালিগঞ্জে তৃণমূলের দুই হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে বিজেপি নেতৃত্ব খুব চিন্তা-ভাবনা করেই প্রার্থী নির্বাচন করেছে বিজেপি। বিজেপি আসানসোলে তৃণমূলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন প্রসাদ সিনহা-র বিপরীতে প্রার্থী করেছে আসানসোলের বিধায়ক ও সেখানকারই কণ্যা অগ্নিমিত্রা পলকে। রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত মুখ অগ্নিমিত্রা পল। অন্যদিকে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে বাবুল সুপ্রিয়র বিপরিতে লড়বেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র কেয়া ঘোষ। বিগত দুই নির্বাচনে এই কেন্দ্র তৃণমূলকে গোহারা হারিয়েছিল বিজেপি। এবারও এই কেন্দ্রটি ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপি। তৃণমূল মনে করছে এই আসনে এবার তাদের জয় কেউ আটকাতে পারবে না।  তেমনই বালিগঞ্জ কেন্দ্রে  বরাবর তৃণমূলের জেতা আসন। তাই এই আসনটি ধরে রাখতে তৃণমূলের কোনও সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।

বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় ও কেয়া ঘোষের বিপরীতে বামদল প্রার্থী দিয়েছে সায়রা শাহ হালিমকে। বাম নেতা তথা বিশিষ্ট চিকিৎসক ফুয়াদ শাহ হালিমের স্ত্রী সায়রা।  অন্যদিকে আসানসোল  কেন্দ্রে  বামদল  প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম শ্রমিক নেতা  পার্থ মুখোপাধ্যায়কে। উল্লেখ্য, রাজ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর খুব শ্লথ গতিতে হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বামেদের। তাই বামদল বালিগঞ্জে তৃণমূল ও বিজেপির বিপরীতে এমন একজন প্রার্থী নির্বাচন করেছেন যিনি উচ্চশিক্ষিত করপোরেট জগতের একজন দক্ষ নারী নেত্রী।তবে তৃণমূলের তরফে বাবুল সুপ্রিয় ও শত্রঘ্ন প্রসাদ সিনাহার নাম প্রর্থী ঘোষণার পর থেকেই বালিগঞ্জে ও আসানসোলে শুরু হয় জোর বিতর্ক। বালিগঞ্জে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তরফে বাবুল সুপ্রিয় পরিবর্তন করে অন্য কাউকে প্রার্থী দেয়ার জন্য তৃণমূল নেত্রীর কাছে অনুরোধ জানানো সত্বেও তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়।। তাদের বক্তব্য, বিজেপিতে থাকা কালিন বাবুল এনআরসি ইস্যুসহ বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিভিন্ন সময় নানা রকম খারাপ মন্তব্য করে বিতর্কীত হন। তাকে বালিগঞ্জে প্রার্থী করায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশীর ভাগ ভোটার ক্ষুব্দ হয়ে আছে। তাছাড়া বালিগঞ্জে অনেক অবাঙালিদের বসবাস রয়েছে। বাবুল সুপ্রিয়কে প্রার্থী হিসেবে তাদেরও পছন্দ নয়। বাবুল-বিরোধী সংখ্যালঘুর একটা বড় অংশ বামপ্রার্থী সায়রার সমর্থনে পাশে দাড়িয়ে বাবুলকে ‘নো-ভোট’ ঘোষনা দিয়ে প্রতিবাদীরা বালিগঞ্জে বাবুল সুপ্রিয়কে  হারাতে ৰামপ্রার্থী সায়রা শাহহালিমই তাদের কাছে যোগ্যতম প্রাথী মনে করছেন। নাগরিক সমাজের একাংশ ও এনআরসি, সিএএ বিরোধী আন্দোলনের শরিক এই প্রতিবাদীরা শনিবার সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কছে বাবুল এবং বিজেপিকে হারানোর ডাক দেয়ার ঘোষনাও দেয়।

প্রসঙ্গত: আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের জন্য যেদিন থেকে শত্রুঘ্ন প্রসাদ সিনহাকে প্রার্থী হিসেবে  নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল তখন থেকে্‌ই  ‘‌বহিরাগত’‌–র তকমা লেগে গিয়েছে শত্রুঘ্ন সিনহার গায়ে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীদের পক্ষে প্রাচারে আসা কেন্দ্রীয় নেতা-নেত্রীদেরকে মমতা বন্দোপাধ্যায়সহ তৃণমূলের তাবড় নেতারা তাদেরকে বহিরাগত বলে প্রচার করেছিল। এখন শত্র্ঘ্ন সিনহাকে বাংলার ভোটে প্রার্থী করায় বিজেপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল তাকে বহিরাগত প্রার্থী বলে প্রচার করছে। রাজনেতিক মহল বলছেন, তৃণমূলের বহিরাগত তকমা এখন বুমেরাং হয়ে তৃণমূলের কাছেই ফেরানো হচ্ছে।