বিশেষ প্রতিনিধি
মহারাষ্ট্র : আস্থা ভোটের আগেই পদত্যাগ করে মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছাড়লেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্বব ঠাকরে। রাজ্য পালের ডাকা মহারাষ্ট্রে বিধানসভায় আস্থা ভোটে হওয়ার কথা। কিন্তু এই আস্থা ভোট স্থগিত রাখার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শিবসেনা শিবির। রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ার নির্দেশে এই আস্থা ভোট হওয়ার কথা আজ (বৃহস্পতিবার)। যার বিরোধিতা করেছিল উদ্ধব ঠাকরের সরকার।
বুধবার রাতে আস্থা সেই ভোটের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে শিবসেনার তরফে জানানো আবেদন নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টা শুনানি হয়। কিন্তু তারপরে ঠাকরের সেই আবেদন নাকচ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জেবি পাড়িয়ালার বেঞ্চ রাজ্যপাল-র নির্দেশ মেনেই আস্থাভোট গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
এরপরে বুধবার রাতেই ফেসবুক লাইভ করে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন উদ্ধব ঠাকরে। মুখ্যমন্ত্রিত্বের পাশাপাশি তিনি বিধান পরিষদের সদস্যপদ থেকেও ইস্তফা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে জানানো হয়, ফ্লোর টেস্ট স্থগিত রাখা হবে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিস হবেন মহারাষ্ট্রের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের ২০তমমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে পারেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ফড়নবিশের বাড়িতে আসছেন বিজেপির নেতা কর্মীরা। এদিন সকাল ১১টা নাগাদ ফড়নবিশের বাড়িতে বিজেপি কোর বৈঠক হওয়ার কথা। সকাল ১০টার সময় গোয়ার দ্য তাজ হোটেলে শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করবেন একনাথ শিন্ডে। এরপর সন্ধ্যায় শিন্ডে ও বিজেপির মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা আছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন একনাথ শিন্ডে।
একই সঙ্গে মহা বিকাশ অঘাডী সরকারের বেসুরো বিধায়ক একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে অন্যান্য বিক্ষুব্ধ বিধায়কেরাও আস্থাভোটে অংশ নিতে গোহাটি থেকে মুম্বই ফিরেছেন।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের পর মহারা্ষ্ট্রের চলমান সংকটের মাঝেই ভারতীয় জনতা পার্টি মহারাষ্ট্রে নিজেদের সরকার গঠনের রাজনীতি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিজেপি তাদের বিধায়কদের সজাগ থাকার কথা জানিয়েছে।
মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং শিবসেনার বিদ্রোহী মন্ত্রী একনাথ শিন্ডের সমর্থকরা ইতোমধ্যে মিলেঝিলে সরকার বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। মিলেঝিলে এই সরকার তৈরি হলে সেখানে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীস হবেন মুখ্যমন্ত্রী, একনাথ শিন্ডে হবেন উপমুখ্যমন্ত্রী। মোটামোটি এই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে তাদের মধ্যে। এছাড়াও মহারাষ্ট্রের ক্যাবিনেটে শিন্ডের সহযোগীদের মধ্যে ১১ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদ পাবেন এবং ৩ জন রাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন বলে জানা গিয়েছে।
অপরদিকে বিজেপির তরফ থেকে ১৬ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং ১৩ জন রাষ্ট্রমন্ত্রী সহ মোট ২৯ জন মন্ত্রী হতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। আরও জানা গিয়েছে যে শিন্ডের সহযোগী বিধায়কদের হাতে আগে যে দফতরগুলি ছিল সেইগুলিই তারা ফেরত চেয়েছেন।
এই সরকার তৈরি হলে বিজেপির তরফে মন্ত্রী হতে পারেন, চন্দ্রকান্ত পাটিল, সুধীর মুনগান্টিওয়ার, আশিস শেলার, গণেশ নায়েক, রবীন্দ্র চৌহান, প্রবীণ দারেকর, সঞ্জয় কুটে, মদন ইরাওয়ার, চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলে, সম্ভাজি নিলাঙ্গেকর, সুভাষ দেশমুখ/বিজয় দেশমুখ, গিরিশ মহাজন, রাধাকৃষ্ণ ভিখে পাতিল, জয়কুমার রাওয়াল এবং রাম শিন্ডে।
রাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন, রাহুল কুল, জয়কুমার গোরে অথবা শিবেন্দ্র রাজে, রাম সতপুতে, রঞ্জিত সিংহ মোহিতে পাটিল, গোপীচাঁদ পডলকার, অতুল সাভে, যোগেশ সাগর, নীতেশ রানেরি, সন্দীপ ধুরভে, রঞ্জিত সাভারকার, দেবযানী ফারান্দে, রানা জগজিৎ সিং, মেঘনা বর্দিকর.
শিন্ডের সহযোগীদের মধ্যে মন্ত্রী হতে পারেন ভরত গোগাভেলে, দীপক কেসারকর, গুলাবরাও পাটিল, উদয় সামন্ত, দাদা ভুসে, আবদুল সাত্তার, সঞ্জয় রাঠোড়, শম্ভুরাজ দেশাই, বাচ্চু কাডু, তানাজি সাওয়ান্ত।
অন্যদিকে রাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন সন্দীপন ভুমরে এবং সঞ্জয় সিরসাত। পুরো বিষয়টি আটকে আছে পাঁচটি বড় মন্ত্রকের উপর। বর্তমান সরকারের নগরোন্নয়ন মন্ত্রক একনাথ শিন্ডের কাছে রয়েছে।