নিজস্ব প্রতিবেদন

আজও উত্তরপ্রদেশে যে কোনও নির্বাচনে দল নয়, নীতি-আদর্শ-বিচারধারা নয়, জাতপাতের  নির্ণায়ক শক্তি হিসেবেই বিবেচিত হয়।। এখানে মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে একাকার হয়ে থাকে জাতপাতের জটিল সমীকরণ। এর কারণ হল, রামমোহন-বিদ্যাসাগরের মতো কোনও সমাজসংস্কারক উত্তরপ্রদেশে জন্মাননি। ফলে পশ্‌চিমবঙ্গ বা  বাংলাদেশের  মতো নজাগরণও এখানে কখনও সংগঠিত হয়নি। তাই ভোটারদের কাছে টানতে ধর্ম আর জাতপাতের বিশল্যকরণী হলো সব দলের রক্ষাকবচ।

তিনি বলেন, এর আগে  পিতা মুলায়ম সিংকে কার্যত গৃহবন্দি করে ২০১১-র উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন ছিল অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি (সপা)। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। তখন সপা-বসপার জোট সত্ত্বেও বিজেপি ঝোলায় পুরেছিল ৫০ শতাংশ ভোট। পাঁচ বছর আগে বিজেপির পাশে ওবিসি না থাকলে ৩১২ সংখ্যাটা নেমে যেত ১৬৯-এ। কারণ এই রাজ্যে  ৮৬ টি আসনে নির্ণায়ক শক্তি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ( ওবিসি)-র ভোট। এমনকি গোটা দেশের ওবিসি ভোট না পেলে উনিশের  লোকসভা ভোটেও  মোদিকে ২০০-র কিছু বেশি আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও মোদিকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছিল ওবিসি।  ২০১৭-তে যে অমিত শাহ তিল তিল করে উত্তরপ্রদেশে প্রায় সব দলিত নেতাকে গেরুয়া পতাকাতলে শামিল করেছিলেন। তাই এই রাজ্যে জাতপাতের রাজনীতিতে যে যখন সফল হন, মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেন সেই দলের নেতা। কখনও মুলায়ম, কখনও মায়া। আবার বাবরি ধ্বংসের পর ১৯৯৩ সালের ভোটে মায়ার সঙ্গে জোট করে মুখ্যমন্ত্রী হন মুলায়ম। ১৯৯৫ সালের ২ জুন মুলায়ম সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেন মায়াবতী ।

২০২২-র বিধানসভা নির্বাচনে যোগি আদিত্যনাথের উপর বিভিন্ন কারণে ভরসা রাখতে রাজী নয় ওবিসি বা দলিতরা।  তাই বাইশের ভোর্টের দোরগোড়ায় এসে সেই ওবিসি নেতারা  যাদব (ঠাকুর)  অখিলেশের ভোট  তরণীতে সওয়ার হচ্ছেন দেখা যাচ্ছে, কিন্তু মোদি-আমিতশাহ-র প্যারাডক্স অর্থৎ কুটকাচালির  কাছে তা কতটুকু অর্থবহ হবে তা প্রশ্নের বিষয়, কেননা মোদি শাহের বিজেপিতে প্যারাডক্স হল, দলের মানসিকতা বর্ণহিন্দু, অথচ ভজনা করেন ওবিসি ভোটের, আর সাধনা করেন দলিত ভোট -র। মোদি নিজেই বলেন, তিনিই দেশের প্রথম ওবিসি প্রধানমন্ত্রী। তাই ওবিসি-দলিতদের শেষমেস বিজেপি মুখী করতে এই দুই চানক্যর কাছে কোন ব্যাপার নয়। আর যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে তবে অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশে ৪৪-৪৫ শতাংশ ওবিসির মধ্যে ৯-১০ শতাংশ যাদব, মৌর্য এবং কুশওয়াহা মিলে ৬ শতাংশ, কুর্মি ৪ শতাংশ, ৩.৫ শতাংশ লোদি। মায়াবতী নিজে  জাটভ ঘরের কন্যা। মায়া এবার তার রাজ্যে কার্যত শীতঘুমে। ওবিসি নেতাদের বিজেপি ছাড়ার হিড়িক যদি ভোটের বাক্সে  সত্যিকার অর্থেপ্রতিফলন ঘটায়, সে ক্ষেত্রে যাদব, জাটভ, ওবিসি, দলিত, জাঠ ও মুসলমান (১৯ শতাংশ) সব ভোটই সপা-র ভোট বাক্সে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

উত্তর প্রদেশের নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যের রাজনৈতিক মহলে নান জল্পনা শুরু হয়েছে। এবারের উত্তর প্রদেশ নির্বাচন বিজেপির কাছে ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। যে কোনও ভাবেই রাজ্যের ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি।

এবারের উত্তর প্রদেশ নির্বাচন অনেকগুলি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। অনেকেই বলেন, দিল্লির রাস্তা উত্তর প্রদেশ হয়ে যায়। সেই কারণে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রাজ্যের নির্বাচন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। চারদফার নির্বাচন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল লখিমপুর খেরি।কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী এই আসন থেকেই প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই কেন্দ্র, যেখানে এসইউভি চালিয়ে পিষে মেরে ফেলা হয়েছিল বিক্ষোভরত চারজন কৃষককে। এছাড়াও, স্পটলাইটে রয়েছে রায়বেরেলি কেন্দ্রের পাঁচটি আসন, যা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। উত্তর প্রদেশে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে মুখ করেই লড়াইতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কংগ্রেস। তার নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশে থেকে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা, সেদিকেই  নজর এখনসকলের।

এদিকে নির্বাচনের  শুরু  থেকেই আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে সমাজবাদী পার্টি প্রধান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের। বারবার তিনি দাবি করে এসেছিলেন এবারের উত্তর প্রদেশ নির্বাচনে বিজেপি ধাক্কা খাবে এমনকি সমাজবাদী পার্টি ৩০০-র বেশি আসন পাবে বলেও অখিলেশের দাবি। কেননা এবার উত্তর প্রদেশের জনগণের সঙ্গে বিজেপির সরাসরি লড়াই হচ্ছে।