প্রণব ভট্রাচার্য্য
সোমবারআনুষ্ঠানিকভাবে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট শেষ হয়েছে। এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ভারতের জাতীয় রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। তাই ভোট প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেই সর্বভারতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম তাদের বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে উত্তর প্রদেশেই একমাত্র ভালো অবস্থায় বিজেপি। মণিপুরে মন্দের ভালো। আর পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড ও গোয়ায় প্রায় কোণঠাসা গেরুয়া শিবির।
বুথ ফেরত ঔই সব সমীক্ষা অনুযায়ী, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে এবারও দেশের সবচেয়ে বড় বিধানসভায় ক্ষমতা ধরে রাখতে পার বিজেপি। সমীক্ষক সংস্থা সি ভোটারের ইঙ্গিত, উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি আসনের মধ্যে ২২৮ থেকে ২৪৪টি আসনে জিতে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে বিজেপি ও তার সহযোগীরা।অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ও জয়ন্ত চৌধুরীর অরএলডি জোট জিততে পারে ১৩২ থেকে ১৪৮টি আসনে।১৩ থেকে ২১টি আসনে জিততে পারে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে ৪ থেকে ৮টি আসন।২ থেকে ৬টি আসন যেতে পারে অন্যদের ঝুলিতে। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও তার সহযোগীরা পেতে পারে ৪১ শতাংশ ভোট। ৩৪ শতাংশ ভোট যেতে পারে সমাজবাদী পার্টি ও তার জোটের পক্ষে।মায়াবতীর বিএসপি পেতে পারে ১৭ শতাংশ ভোট।৫ শতাংশ ভোট যেতে পারে কংগ্রেসের ঝুলিতে।এবং অন্যরা প্রায় ৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে উত্তরপ্রদেশে।
উত্তরাখণ্ডে রাজ্যে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতার পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা রয়েছে। রাজ্যটি গঠনের পর থেকেই বিজেপি ও কংগ্রেস প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সরকার গঠন করেছে। আর সি ভোটার বুথ ফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত অনুযায়ী, এই রাজ্যে এবারও সেই ধারাবাহিকতাই অক্ষুন্ন থাকতে পারে। সি ভোটার সমীক্ষার ইঙ্গিত অনুযায়ী, এই রাজ্যে ক্ষমতা বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে কংগ্রেস। সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছে, ৭০ আসনের উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় কংগ্রেস পেতে পারে ৩২ থেকে ৩৮টি আসন। ক্ষমতা হারিয়ে বিজেপি পেতে পারে ২৬ থেকে ৩২টি আসনে। আম আদমি পার্টি সর্বোচ্চ ২ এবং অন্য দলগুলি ৩ থেকে ৭টি আসনে জয়ী হতে পারে। উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় ভোটের নিরিখে কংগ্রেস বিজেপির থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, আসনের ক্ষেত্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে দুই দলের মধ্যে। এই রাজ্যে প্রাপ্ত ভোটেরর শতাংশের নিরিখে কংগ্রেস পেতে পারে ৩৯ শতাংশ ভোট। ৪১ শতাংশ ভোট যেতে পারে বিজেপির ঝুলিতে। এছাড়া আম আদমি পার্টি ৯ শতাংশ এবং অন্যরা ১১ শতাংশ ভোট পেতে পারে উত্তরাখণ্ডে। এই রাজ্যে সরকার গঠনের ম্যাজিক ফিগার ৩৫।
সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষানুযায়ী পাঞ্জাবে এবার ক্ষমতা দখল করতে পারে আম আদমি পার্টি। সমীক্ষায় ইঙ্গিত,পাঞ্জাব বিধানসভার ১১৭টি আসনের মধ্যে আম আদমি পার্টি একাই জয়ী হতে পারে ৫১ থেকে ৬১টি আসনে। অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগার ছুঁয়ে ফেলার ইঙ্গিত। ২২ থেকে ২৮টি আসন পেতে পারে কংগ্রেস। ২০ থেকে ২৬টি আসনে জয়ী হতে পারে শিরোমণি অকালি দল ও বিএসপি জোট। বিজেপি ও অমরিন্দর সিংহের দলের জোটের ঝুলিতে যেতে পারে মাত্র ৭ থেকে ১৩টি আসন। ১ থেকে ৫টি আসন পেতে পারে অন্য দলগুলি। প্রাপ্ত ভোট শতাংশের নিরিখে,৩৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে আম আদমি পার্টি।কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে ২৭ শতাংশ ভোট। ২১ শতাংশ ভোট পেতে পারে শিরোমণি আকালি দল।এছাড়া বিজেপি-অমরিন্দর জোট ১০ শতাংশ ও অন্য দলগুলি ৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে বলে সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত।
দেশের সবথেকে ছোট রাজ্য গোয়াতে, কংগ্রেস- বিজেপি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে অনেক সমীক্ষাতেই অন্যান্য বেশকিছু রাজনৈতিক দলের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস এবার গোয়াতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, তাতে কংগ্রেস বিজেপি থেকে সামান্য এগিয়ে থাকলেও, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। সমীক্ষায় অন্যান্য বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে বেশ কিছু আসন পেতে দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, এই অন্যান্য বিরোধী দল গুলির মধ্যে তৃণমূল রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, গোয়া নির্বাচনে এবার খাতা খুলতে পারে তৃণমূল। সমীক্ষয় ইঙ্গিত,
বিজেপির দখলে থাকা গোয়া বিধানসভায় এবার ত্রিশঙ্কু অবস্থা হওয়ার সম্ভাবণা রয়েছে। সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত,৪০ আসনের গোয়া বিধানসভা নির্বাচনে ১৩ থেকে ১৭টি আসনে জিততে পারে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস পেতে পারে ১২ থেকে ১৬টি আসন। তৃণমূল ও মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি-র জোট ৫ থেকে ৯টি আসনে জিততে পারে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ১ থেকে ৫ এবং অন্য দলগুলি সর্বোচ্চ ২টি আসন জিততে পারে বলে ইঙ্গিত সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষায়। ভোট শতাংশের নিরিখে, বিজেপি পেতে পারে ৩৩ শতাংশ ভোট। ৩০ শতাংশ যেতে পারে কংগ্রেসের পক্ষে। ১৫ শতাংশ ভোট যেতে পারে আম আদমি পার্টির ঝুলিতে।এছাড়া তৃণমূল ও মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টি-র জোট ১১ শতাংশ এবং অন্য দলগুলি ১১ শতাংশ ভোট পেতে পারে ।
য়ার পাশাপাশি মণিপুর বিধানসভার ফলও হতে পারে ত্রিশঙ্কু! এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছে সি ভোটার সমীক্ষা। ইঙ্গিত অনুযায়ী, মনিপুরে ৬০ আসনের বিধানসভায় শাসক দল বিজেপি ২৩ থেকে ২৭টি আসন জিততে পারে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের পাওয়ার সম্ভাবণার রয়েছে ১২ থেকে ১৬টি আসন।ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১০ থেকে ১৪টি আসন পেতে পারে। নাগা পিপলস ফ্রন্ট ৩ থেকে ৭টি আসন ও অন্যান্যরা ২ থেকে ৬টি আসন পেতে পারে। সমীক্ষার ইঙ্গিতে, কোনও দলই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না মনি পুরে। এই রাজ্যে প্রাপ্ত ভোট শতাংশের নিরিখে, বিজেপি ৩৮ শতাংশ ভোট পেতে পারে। কংগ্রেস পেতে পারে ২৯ শতাংশ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১১ শতাংশ, নাগা পিপলস ফ্রন্ট ৯ শতাংশ এবং অন্যান্যরা ১৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে। তবে চূড়ান্ত ফল জানা যাবে আগামী ১০ মার্চ ভোট গণনার পর।