এম এ রহিম, বেনাপোল সীমান্ত থেকে
বেনাপোল, ( বাংলাদেশ) : আন্তর্জাতিক স্থল সিমান্তপথে পাসপোর্ট যাত্রীদের চলাচলের ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশের ইমিগ্রেসন বিধি সহজিকরণ ও উদারনীতি চালু বিরাট দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে দু’দেশর যাত্রী সাধারণের মনে। ইতোমধ্যে ভ্রাত্রীপ্রতিম এই দুটির রাষ্ট্রের মধ্যে সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির অংশ হিসাবে দুর হয়েছে সমস্ত বাধা। এর ফলে আরও উৎসাহিত হবে দু’দেশের ভ্রমণ পিয়াসীরা।
বেনাপোল ও পেট্টাপোল সীমান্তে ইমিগ্রেশন সহ বিভিন্ন চেকপোস্ট দিয়ে চালু হয়েছে টুরিস্ট স্টুডেন্ট মেডিকেল ও বিজনেস ভিসা। সাড়ে ৫শ টাকা ভ্রমনকর পরিশোধ করে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকেরা যাতায়াত করতে পারবে। তা ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করতে লাগছেনা কোন করোনা সার্টিফিকেটও। বৃহস্পতিবার থেকে উঠেগেছে ওই বিধি নিষেধ । এর আগে দুই ডোজ করোনা টিকা গ্রহণকারী ভারতীয় নাগরিকদের করোনা নেগেটিভ সনদ দরকার না হলেও ভারতে প্রবেশে বাংলাদেশীদের জন্য নির্ধারিত ছিল। যাত্রীদের অভিযোগ আারতীয়দের নেগেটিভ সার্টিফিকেট না লাগলে বাংলাদেশীদের জন্য কেন লাগবে সেই সনদ। এই বিধানের কারণে যাত্রীদের ব্যাপক হয়রানির শিকার ছাড়াও অর্থঅর্থাপচয় ও সময় ক্ষেপণ হয়। এই কারণে বাংলাদেশী যাত্রীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন ওসি রাজু আহমেদ ভিসি প্রতিনিধিকে জানান, করোনা নেগেটিভ সনদের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গোচরে আনা হলে নিমিষেই বিষয়টির সুরাহা হয়। শুধুমাত্র দুই টিকা গ্রহণের সনদ থাকলেই যাতায়াত করতে পারবে সব ধরনের ভিসায় ভ্রমণকারীরা।উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ রোধে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ পাসপোর্ট যাত্রীদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারী করে ভারত। কোভিড সংক্রমণ কিছুটা কমে আসলে মেডিকেল ও বিজনেস ভিসা চালু করা হয়, কিন্তু সেই অব্দি পর্যটক ভিসা বন্ধ ছিল যাতায়াত। পরবর্তীতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন অফিস ট্যুরিস্ট ভিসা চালু করলেও সে সব ভিসায় বিমানে যাওয়ার অনুমতি থাকায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে বন্ধ ছিল ভ্রমন ভিসায় চলাচল।
কিন্তু বিধিনিষেধ উঠানো হলে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে গত তিনদিনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছে। এর মধ্যে নতুন ট্যুরিস্ট ভিসায় ১৪৭ জন দু দেশের যাত্রী বেনাপোল দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে মধ্যে যাতায়াত করেছে। ইমিগ্রেশন সূত্রে জানায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় প্রায় ১০ লাখ পাসপোর্টধারীযাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে। যাত্রীদের কাছ থেকে ভিসা ফি বাবদ ভারতীয় দূতাবাসের আয় হয় একশো কোটি টাকার কাছাকাছি। আর ভ্রমণ কর বাবদ বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দিলে ১৩ মার্চ সীমান্ত বন্ধ করে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। এতে বন্ধ হয়ে যায় যাত্রী যাতায়াত। পরে করোনা সংক্রমণ কমে আসলে ৬ মাস পর মেডিকেল ও পরে বিজনেস ভিসা চালু হয়। তবে এসব ভিসায় জটিলতা বেশি থাকায় ভ্রমণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে দুই দেশের মানুষের দাবি ছিল ট্যুরিসভিসা চালুর মাধ্যমে যাতায়াত সহজ করা।অবশেষে গত ২৫ মার্চ থেকে ভারতীয়দের ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন গ্রহণ করে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশদূতাবাস। পরে ৩০ মার্চ থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসগুলো বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ভিসা প্রদান করে। সহজভাবে ভিসা মেলায় যাতায়াতে স্বস্তি ফিরেছে যাত্রীদের মাঝে। বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে ভারতীয় দূতাবাস ৮৪০ টাকা চার্জ নিচ্ছে। আর বাংলাদেশ দূতাবাস ভিসা ফি নিচ্ছে ৮২৫ রুপি। সীমান্ত অতিক্রমের সময় বাংলাদেশ সরকার ভ্রমণ কর বাবদ ১২ বছরের উর্ধ্বে প্রত্যেক যাত্রীদের ৫০০ টাকা, ৫ থেকে ১২ বছরের মধ্যে যাত্রীদের ২৫০ টাকা আদায় করছে। ৫ বছরের নিচে শিশুদের ভ্রমণ কর মওকুফ রয়েছে। ভারতগামী ট্যুরিস্ট ভিসা ভ্রমণকারী যাত্রী মনোরজ্ঞন সরকার জানান, মেডিকেল ও বিজনেস ভিসায় অনেক ভোগান্তি। এখন সহজে ট্যুরিস্ট ভিসা মিলছে তাই অনেক খুশি আমরা। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি মোহাম্মদ রাজু জানান, ট্যুরিস্ট ভিসা চালু হওয়ায় যাত্রী যাতায়াত বেড়েছে। তবে নতুন ট্যুরিস্ট ভিসা যাদের তারা কেবল ভারতে যেতে পারছেন। পুরানো ট্যুরিস্ট ভিসায় যাতায়াত আপাতত বন্ধ রয়েছে। ভারত যাওয়ার সময় বাংলাদেশি যাত্রী যারা করোনার ডাবল ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ লাগছেনা আার। ভারত থেকে ফেরার সময় করোনা পরীক্ষাও করতে হবে না। বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, দুই বছর পর মঙ্গলবার থেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত শুরু হয়েছে। যাত্রী সেবায় অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। যাত্রী সেবায় সব ধরনের ব্যাবস্থা গ্রহননকরা হয়েছে। যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে ট্রলি। কমছে দালালের উৎপাত। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। যাত্রীযাতায়াতে স্বস্তি ফিরেছে বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষসহ ভুক্তভোগীরা।