নিজস্ব প্রতিবেদন
রাজ্য নির্বাচন ইতোমধ্যে জারী করলো কলকাতা পুরনিগমের ভোটবিজ্ঞপ্তি। প্রায় দুবছর পর কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচন অনু্ষ্ঠিত হতে চলেছে।এই নির্বাচন স্বশাসিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এর একটা সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব রয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্টার ক্ষেত্রে।বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে এই নির্বাচনটি গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয়সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা স্থানীয় পর্যায়ের সমস্ত কাজ করা ছাড়াও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিভিন্ন সরকারী স্কীমসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে ‘সেতুবন্ধন’ হিসেবে কাজ করে। তাই মূলত বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের সুবিধা পাওয়র ক্ষেত্রে সরকারীদল সবসময় চাইবে পুরনিগম বা পুর নির্বাচনে তাদের প্রার্থীরা যেন বেশীকরে সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে। অপরদিকে বিরোধী দলগুলোও তাদের ম্যান্ডেট নিয়ে দলকে সমানে এগিয়ে নিয়ে জনগণের দূয়ারে পৌছানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে বেশী।
তাই কলকাতা পুরকর্পোরেশন-র নির্বাচনবিজ্ঞপ্তি হওয়ার পর থেকেই পুরোদমে শরু হয়েছে রাজনৈতিক তৎপরতা। কোভিড পরিস্তির সেই ভয়াবহ নির্জনতাকে দূরে রেখে মুখরীত হয়ে উঠেছে তিলোত্তমা কলকাতা। শুরু হয়েছে দেয়াল লিখন, পোস্তার ফেস্টুনও। নগরীর রাজনৈতিক দলগুলোর আফিস প্রাঙ্গন অধিক রাতপর্যন্ত প্রার্থীবাছাইসহ বিভিন্নকাজে কর্মচঞ্চল থাকে।
কলকাতায পৌর কর্পোরেশনের ১৪৪ টি ওয়ার্ডের ভোট হবে ১৯ ডিসেম্বর। কমিশন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার থেকেই মনোনয়ন পেশ করা যাবে। পয়লা ডিসেম্বর মনোনয়ন পেশের শেষ দিন। ২ ডিসেম্বর হবে স্ক্রুটিনি। ৪ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। ভোট গণনা ও ফল প্রকাশ ২১ ডিসেম্বর। করোনা বিধি মেনেই ভোট হবে, জানিয়েছে কমিশন। কলকাতায় মোট বুথের সংখ্যা ৪৭৪২ । কলকাতা পুরভোট প্রচারের ক্ষেত্রে এবার বেশ কয়েকটি নিয়ম পরিবর্তন করলো কমিশন। এই বদল কোভিডের কারণে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।কমিশনের তরফে বৈঠকে জানানো হয় প্রচারের জন্য ছোট সভার এর উপর জোর দিতে হবে, বড় মিটিং হলে সেটা বড় জায়গায় করতে হবে।
সবার আগে কলকাতা পুরভোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে চমক সৃষ্টি করেছে বামফ্রন্ট। ১২০টির বেশি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তারা। বিধানসভা ভোটের মতো-ও এবারও তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়েছে তারা। প্রার্থীতালিকায় মহিলাদেরকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।৫৬ মহিলাকে প্রার্থী তালিকায় তারা স্থান দিয়েছে। সংখ্যালঘু প্রার্থীর সংখ্যাও ১৭ । কংগ্রেসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে জোট না করেই। কলকাতার ১২০ ওয়ার্ডের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলো বামফ্রন্ট। ৫০ বছরের কম বয়সি প্রার্থীর সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। ৬৬ নং ওয়ার্ডে ২২ বছর বয়সি শাকিবক আখতারকে প্রার্থী করে আরও চমক দিল বামেরা।
শুক্রবার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে ওই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সিপিএম কলকাতা জেলা কমিটির আহ্বায়ক কল্লোল মজুমদার জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক কিছু নির্বাচনে ভোট- পূর্ব জোটের পথে হেঁটেছিল বামেরা। কিন্তু তাতে এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যার সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল ছিলনা। তাই এবার রণকৌশলগত পরিবর্তন আনা হয়েছে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। এর জন্য বাম নেতারা দফায় দফায় বৈঠকে বসে তারপরই আসন নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় রাজ্য নেতৃত্বকে । পুরভোটে তৃণমূল ও বিজেপিকে হারানোই বামেদের মূল লক্ষ্য। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই এই বার্তা স্পষ্ট করল বাম নেতৃত্ব। শাসক দল ও গেরুয়া শিবিরকে পরাজিত করার জন্য কিছু আসনে অন্য দলকে সমর্থন করার বার্তা দিয়েছে বামেরা। সেই তালিকায় কংগ্রেস, আইএসএফও থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক কল্লোল মজুমদার। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের একাধিক জায়গায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। তার আগেই আমরা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছি। তবে বেশ কয়েকটি আসনে আলোচনা বাকি রয়েছে। বামফ্রন্ট ঐক্যগতভাবে লড়াই করবে। ১৫-১৬টি আসনে আমরা প্রার্থী দিলে শুধু ভোট কাটাকাটিই হবে। তাই ওই আসনে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে অন্য কাউকে সমর্থন দেওয়া হবে। আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র সহ একাধিক ইস্যুকে সামনে রেখে ভোটে লড়বে। মানুষের না পাওয়াগুলো তুলে ধরাই হবে বামফ্রন্টের মূল লক্ষ্য।
এদিকে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে কালীঘাটে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। শুক্রবার রাতে তারা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে বলেল তৃণমূল সূত্র জানায়।।
কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দেবে বিজেপি। এলাকার স্থানীয় লোক, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে বিজেপির কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত, এমন ব্যক্তিদের অগ্ৰাধিকার দেওয়া হবে। জনপ্রিয় কোনও নেতা খুব বেশি থাকছে না প্রার্থী তালিকায়। তবে সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিদের রাখার চেষ্টা করা হবে। পুরনো আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যদেরও প্রার্থী করার ভাবনা রয়েছে বিজেপির। বিজেপিও আজ রাতে বা শনিবার তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে বলে সূত্র জানায়।
তবে পুরভোট নিয়ে মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্ট। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় রাজ্য বিজেপি। শুক্রবার দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে রাজ্য সরকার চালায়। সে কারণেই পুরভোটের বিষয়টি নিয়ে আদালতে শুনানি চললেও কমিশনকে ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করতে হল। একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, তৃণমূল কলকাতা দখলে এতটাই মরিয়া, পুনর্নির্বাচনের সময় পর্যন্ত রাখতে চায়নি।