নিজস্ব প্রতিবেদন
উত্তর পূর্বের পড়শী রাজ্য ত্রিপুরায় নিজেদের খাতা খুলল তৃণমূল কংগ্রেস। ত্রিপুরায় পুরভোটে মোট ৩৩৪টি আসনের মধ্যে ৩২৯টি-তেই জয়ী বিজেপি। বামেরা পেল তিনটি আসন, আমবাসা পুরপরিষদে একটি আসনে জিতে উত্তর পূর্বের পড়শী রাজ্য ত্রিপুরায় নিজেদের খাতা খুললো  তৃণমূল কংগ্রেস। একটিতে জিতেছে টিআইপিআরএ দল।  পুরনিগমসহ ১৩টি পুরসভা, ৬টি নগর পঞ্চায়েতে যে ভোট হয়েছিল তার সবকটিই বিজেপির দখলে। অন্যদিকে বামেদের হাতছাড়া হল আগরতলা পুরনিগম। ৫১টি আসনের সবকটিতেই জয়ী হয়ে  বিজেপির দখলে গেল আগরতলা পুরনিগম। এই পুরনিগমের ১৩টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল। ৯টি ওয়ার্ডে সিপিএম। তবে এই ভোটে উল্লেখযোগ্যভাবে ২৬টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল তৃণমূল কংগ্রেস। এখানে বিজেপির সঙ্গে লড়াই হচ্ছে তৃণমূলের। মাত্র সাত মাসে তৃণমূলের এই উত্থান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

ধর্মনগরের ২৫টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই জয়ী হয়েছে বিজেপি। পানিসাগরের ১২টি আসনে জিতেছে বিজেপি, একটি পেয়েছে সিপিএম। কুমারঘাটে ১৫টি আসনের সব কটিতেই জিতল বিজেপি। আমবাসায় ১৫টির মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ১২টি, একটি করে পেয়েছে তৃণমূল, সিপিএম, টিআইপিআরএ দল। তেলিয়ামূড়া, সোনামূড়া, অমরপুর, বিলোনিয়ার সবকটি আসনেও জয়ী হয়েছে গেরুয়া শিবির।

ভারতের একটি ছোট রাজ্য ত্রিপুরা, ২৫ লক্ষ মানুষের বাস। তবুও রাজনৈতিকভাবে সবার নজরে ছিল ত্রিপুরার পুরভোট নিয়ে। রসায়ন ছিল ত্রিপুরার সমীকরণ নিয়ে। ত্রিপুরায় কি তৃণমূল খাতা খুলতে পারবে, নাকি বিরোধী দল হিসেবে ঘুরে দাঁড়াবে বাম ও কংগ্রেস। ত্রিপুরার নির্বাচনী ফলাফল সামনে আসার পর স্পষ্ট হয়ে যায় বিজেপিই জিততে চলেছে ত্রিপুরায়।

রবিবার সকাল থেকেই ত্রিপুরায় পুরভোটের গণনা চলে। ফল ঘোষনাকে কেন্দ্র করে যাতে রাজ্যে ফের কোন অশান্তি সৃষ্টি না হয়, তার জন্য ত্রি-স্তরীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগরতলা পুরনিগম, ১৩টি পুর পরিষদ এবং ৬টি নগর পঞ্চায়েত মিলিয়ে মোট ৩৩৪ আসনে এই নির্বাচন হয়েছে। তার মধ্যে ১১২টি আসনে অন্য কোনও দল প্রার্থী না দেওয়ায়, সেই আসনগুলিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় বিজেপি। গণনার শুরু থেকেই আজ এগিয়ে থাকে গেরুয়া শিবির।

বিজেপির এই জয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে টুইটে অভিনন্দন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলকে পরাজিত করার জন্য ত্রিপুরার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা  জানিয়েছেন শুভেন্দু।

তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিক বলেন, “ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই ধরনের নির্বাচন দেখিনি। এখানে  তৃণমূল কংগ্রেস দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে। এত বড় স্বৈরাচারি শক্তির সঙ্গে লড়াই করতে আমাদের সৈন্যরা প্রস্তুত। সমস্ত বুথ দখল করে, ছাপ্পা মেরে ভোট হয়েছে।”

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘ ত্রিপুরায় মাত্র কয়েকমাসের সংগঠনকে ঠেকাতে এত হামলা,মামলা, তাণ্ডব। তারপরও বহু ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে তৃণমূল। ত্রিপুরা নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ দলদাসেরপরিচয় দিয়েছে। তার পরেও  এত ভোট দিয়েছে মানুষ সেই জন্য  দলের লড়াই আর মানুষের সমর্থনকে ধন্যবাদ জানাই। ২০২৩  বিধানসভায় আমরাই থাকবো।’

ত্রিপুরায় তৃণমূলের এই ফল নিয়ে কটাক্ষ করেছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘বিজেপি প্রার্থী না দিলে হয়তো টিএমসির জেতার সুযোগ ছিল। দিলীপ ঘো্য বলেন, “ত্রিপুরার সমস্ত মানুষকে আমি অভিনন্দন জানাই।  তারা বিজেপিকে সমর্থন করেছে এবং যে দল ওখানে অশান্তি করছিলো তাদেরকে যোগ্য জবাব দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস একটা সিট পেয়েছে। মানুষ নিরাশ করেনি। আমরা চাই ভবিষ্যতে ভাল কাজ করুক তৃণমূল। ত্রিপুরায় ভোটের প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের পুরসভা ভোটের উপরও পড়বে।”

ভোটগ্রহণের আগে থেকেই শাসকদলের বিরুদ্ধে ভয় দেখানো, হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিআই(এম)। ভোটের দিন তৃণমূলের একাধিক কর্মী আক্রান্ত হওয়ায় তারা থানা ঘেরাও করে। সিপিআইএমের তরফেও থানা ঘেরাও করা হয়। দুই দলই পুনর্নিবাচনের দাবি জানিয়েছে।