প্রণব ভট্রাচার্য্য
দার্জিলিং পাহাড়ের বিভিন্ন দূর্নীতি, অনিয়মসহ নানা সমস্যা মেটাতে এবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানকার দীর্ঘদিনের অভাব ও বিভিন্ন সমস্যাসহ গোর্খাদের দাবি দাওয়ার সমাধান কি ভাবে বা কোন পথে করা যেতে পারে, তা নিয়ে আজ এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার বিকেলে রাঝধানীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দফতরে ওই বৈঠকে অমিত শাহ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা।
বৈঠকে বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা এক বিবৃতিতে গোর্খা জনজাতি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এর মধ্যে বিশেষ করে পাহাড়ে গণতন্ত্রের অভাব এবং একেবারে নিচু তলার মানুষ তাদের প্রয়োজনে প্রশাসনের দুয়ারে পৌঁছোতে পারেননা। এই সব ক্ষেত্রে যে সমস্ত অভাব ও সমস্যা রয়েছে, সব নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বিজেপি সাংসদ জানিয়েছেন, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জিটিএ-র মতো ‘স্টপ-গ্যাপ’ আধা-স্বায়ত্তশাসিত শাসন ব্যবস্থা যে পাহাড়ের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তা আজ আবারও ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে।
বৈঠকে সাংসদ রাজু বিস্তা আরও জানিয়েছেন, “পাহাড়ে কোন গণতন্ত্র নেই এই কথা বার বার তুলে ধরে, আমরা জানিয়েছি ২০০১ সাল থেকে এই এলাকায় কোনও পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়নি। ২০১৭ সাল থেকে তৃণমূল ক্যাডারদের পরিচালিত পর্ষদ হিসেবে জিটিএ পরিচালিত হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আমরা কেন্দ্রীয় আহ্বান জানিয়েছি বৈঠকে।”
তফসিলি উপজাতি তালিকায় পাহাড়ের যে ১১ টি গোর্খা উপ-উপজাতি বাদ পড়েছিল, সেগুলিকে পুনরায় যাতে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেই নিয়েও আজকের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং সিকিম সরকার ইতিমধ্যেই এই বাদ পড়ে যাওয়া উপ-উপজাতিগুলিকে তফসিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে। কেন্দ্রও ইতিমধ্যে উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে তিনটি কমিটিও গঠন করেছে বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার জন্য।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ফের নভেম্বরে দীপাবলীর পর দ্বিতীয় দফা আলোচনা বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সেই সংক্রান্ত দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। একইসঙ্গে রাজ্য সরকারকে বিশেষভাবে বলা হয়েছে, যাঁরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত, এমন শীর্ষ আধিকারিকদের পরবর্তী দফার বৈঠকে পাঠাতে বলা হয়েছে।।
র্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন (জিটিএ)-র নির্বাচন এবং ১১টি গোর্খা জনজাতির স্বীকৃতী-সহ পাহারের একধিক ইস্যুতে ত্রিপাক্ষিক এই বৈঠকে পাহাড়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা, দার্জিলিঙের বিধায়ক নীরজ জিম্বা,কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বি পি বজগৈন, কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা, জিএনএলএফ প্রধান মন ঘিসিং সহ পাহাড়ের অন্যান্য গোষ্ঠীর নেতারাও ছাড়াও পশ্চিবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।সূত্রের খবর, বৈঠকে অমিত শাহ জানিয়েছেন, পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্স উন্নয়ন করাতে মোদি সরকার বদ্ধপরিকর। সেজন্য কেন্দ্র গোর্খা এবং ওই অঞ্চলের সবাইকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।।
গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের আধা-স্বশাসিত প্রশসন কর্তৃপক্ষ। জিটিএ ১৯৮৮ সালে স্থপিত হয়, যা আগে গোর্খা পার্বত্য পরিষদ নামে পরিচিত ছিল।