ভিওসি নিউজ
জঙ্গিরা ফের ২৬/১১-র ধাঁচে দিল্লিতে হামলা করার পরিকল্পনা করছিল। ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপের নেপথ্যে পাক-যোগ রয়েছে। সম্প্রতি দিল্লিসহ ভারতের বিভিন্নস্থান থেকে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেলের জেরায় বুধবার এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেলের দাবি, এর আগে আজমল কাসভ যে প্রশিক্ষণ শিবিরে ট্রেনিং নিয়েছিল, সেই শিবিরেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল দিল্লিতে ধৃত ২ জঙ্গিও। গোয়েন্দা জেরায় তারা জানিয়েছে, করাচির কাছে সেনা ছাউনিতে তাদের আইইডি তৈরি ও একে-৪৭ চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিল পাক-সেনা অফিসার। তাছাড়া পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত ঐ জঙ্গি দলে ১৪-১৬ জন বাংলাভাষীও রয়েছে বলেও তারা জানায়। ওই বাংলাভাষীরা কোন দেশের নাগরিক? তারা কি বাংলাদেশ বা ভারতীয় নাগরিক তারা কি ইতিমধ্যেই ভারতে ঢুকে পড়েছে? এমন নানা প্রশ্নে শঙ্কিত দিল্লি পুলিশ।
প্রসঙ্গত উৎসবের মরশুমে রাজধানীতে বড়সড় নাশকতার ছক বানচাল করে দিয়েছে দিল্লির পুলিসের স্পেশাল সেল। একাধিক জায়গায় অভিযানে পাকড়াও ৬ জইশ জঙ্গি। ধৃতদের জেরা করছেন গোয়েন্দারা। তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তকারীদের অনুমান, দিল্লিতে হামলা ছক হিমশৈল চূড়ামাত্র! এদেশের জঙ্গি কার্যকলাপের জাল ছড়িয়েছে আরও গভীরে। তদন্তে জানা দিয়েছে, শুধু দিল্লিতে নয়, বিধানসভা ভোটের মুখে উত্তরপ্রদেশ, এমনকী মহারাষ্ট্রের জনবহুল এলাকায় হামলার ছক কষেছিল জঙ্গিরা। কোথায় বিস্ফোরণ ঘটানো যায় সেই রেকিং কাজ চলছিল পুরোদমে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ভারতে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে কাজ করছিল জঙ্গিরা। একটি দল মূলত সীমান্ত দিয়ে ভারতে অস্ত্র ঢোকানো ও বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজ ছিল। আর হাওয়ালা মারফৎ অর্থের জোগান দেওয়ার দায়িত্বে ছিল দ্বিতীয় দলটির কাজ। শুধু তাই নয়, এই জঙ্গি কার্যকলাপের মূলচক্রী হিসেবে উঠে এসেছে দাউদ ইব্রাহিমের ভাই আনিস ইব্রাহিমের নাম। সে জঙ্গিদের অর্থের জোগান দিয়েছিল ।
সম্প্রতি দিল্লি পুলিসের স্পেশ্যাল সেলের অফিসাররা একাধিক জায়গায় অভিযান চালিয়ে ছয় জঙ্গির একটি মডিউলকে পাকড়াও করেছে। দিল্লি পুলিসের স্পেশ্যাল সেলের কমিশনার নীরজ ঠাকুর জানান, এদের মধ্যে একজনকে কোটা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জনকে দিল্লি থেকে এবং তিনজনকে উত্তরপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম জিশান, কামার জামান, ওসামা, জান মহম্মদ আলি শেখ এবং মহম্মদ আবু বাকার।
অপর এক খবরে জানা যায়, আফগানিস্তানে ‘তালিবানরা কাবুল দখলের পর থেকে দুই বাংলায় নতুন করে সক্রিয় হয়েছে জেএমবি সংগঠন। ইতোমধ্যে নতুন করে তারা সাজাতে শুরু করেছে নিজেদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি হঠাৎ ‘মজলিশ-ই-শুরা-র বৈঠক ডাকে তারা। নিম্ন অসমের বরপেটা বা ধুবড়ির একটি গোপন আস্তানায় এই বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে দুই বাংলার জঙ্গিদের মধ্যে যে সব কথোপকথন হয়েছে তার ‘ডিকোড করে এই তথ্য পেয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সেখানে এপার বাংলার ‘অনুরাগী-দের পাশাপাশি বাংলাদেশের কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গিকে আমন্ত্রণ জানানোর বার্তা ছিল সোসাল মিডিয়ার ওই কথোপকথনে। এমনকি জঙ্গিরা অন্য নামে একটি সংগঠন গড়ার কাজও শুরু করেছে তারও স্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, ওই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানা য়ায়, জেএমবি-র সঙ্গে যুক্ত এপারের (ভারতের) জনৈক জাকির কথা বলছিল ওপারের (বাংলাদেশের) এক আমিরের সঙ্গে। শুধু জাকিরই নয়, এ রাজ্যের মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা ও মুর্শিদাবাদের কমপক্ষে ১০ জন ‘জেএমবি ঘনিষ্ঠ’ নিয়মিত ‘ডার্ক ওয়েব’ মাধ্যমে ওপারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। এই গোপন খবর সামনে আসার পর সক্রিয় হয়েছে অসম পুলিসও। অসমের জঙ্গি সংগঠন ‘মুসলিম ইউনাইটেড লিবারেশন আর্মি-র (মুলটা) সদস্যরা সরাসরি জেএমবি- র খাতায় নাম লিখিয়েছে। গত জুলাই মাসে ধুবড়ি থেকে সেরকম দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসাম পুলিশ।
গোয়েন্দারা বলছেন, ডিকোড করা কথোপকথনে ‘শুরা, ‘অসম, ‘বেঙ্গল, ‘এসার’এবং ‘উলায়েত-র মতো কিছু শব্দ সামনে এসেছে। শুরা মানে যে জঙ্গি সংগঠনের সর্বোচ্চ কমিটি ‘মজলিশ –ই-শুরা তা বোঝা গিয়েছে। ‘এসার’ শব্দটির অর্থ নিচুতলার কর্মী বা ক্যাডার। সংগঠনে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথাও কথোপকথনে উঠে এসেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে গোয়েন্দারা জেনেছেন, আইএস আদর্শে বিশ্বাসী জেএমবি এই উপমহাদেশের বাংলাভাষী ক্যাডারদের জন্য একটি নতুন সংগঠন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বেঙ্গল উলায়েত। এখন থেকে এই নামেই দুই বাংলায় তারাকাজকর্ম করবে। আবার ডিকোড করা বার্তালাপে জাকিরের কথায় ‘আল বাঙ্গালি ‘ শব্দের উল্লেখ মিলেছে। এই মুহূর্তে জেএমবি-র মজলিশ-ই-শুরায় যে ক’জন রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের সাংগঠনিক নামের শেষে রয়েছে এই শব্দটি। তারা হল—আুব আমের আল বাঙ্গালি, আবু রুহাম আল বাঙ্গালি, আবু আদনান আল বাঙ্গালি, আবু দুজানা আল বাঙ্গালি এবং আবু আহেসান আল বাঙ্গালি। জাকির এদেরই কারও সঙ্গে কথা বলছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। তাদের আরও দাবি, আফগানভূমে তালিবান রাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এইউপলক্ষে বিস্তর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সেই সব অনুষ্ঠানে একইসঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশ বিরোধী জিগিরও তোলা হচ্ছে বলে খবর গোয়েন্দাদের।