রায়কে স্বাগত সব বিরোধী দলের

নিজস্ব প্রতিনিধি

পশ্চিমবঙ্গের বিরভূম জেলার রামপুহাটের বগটুইয়ের নৃশংস হত্যা-কান্ড গোটা রাজ্য যখন স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে, তখন এই জঘণ্য হত্যাকান্ডের
আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য মামলাটি তদন্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
রামপুর হাটের ওই নারকীয় ঘটনার পরই হাইকোর্ট স্বত:প্রনোদিত মামলা করে। আজ সকালে ঘটনায় দায়ের হওয়া সেই মামলার রায়
ঘোষণা করে ওই হত্যাকান্ডের তদন্তভার সিবিআই-র হাতে দেয়া হয়। রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট জানায়, “ঘটনার সবটা্ শুনেছি। ‘শকিং’ এই ঘটনার বিচারের জন্য সত্য উদ্ঘাটনের প্রয়োজন আছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থেই তদন্তভার সিবিআই হাতে তুলে দেওয়া হল।হল। হাইকোর্টের নজরদারিতে এই মামলার তদন্ত হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ, দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করতে হবে সিবিআইকে। ১৩ দিনের মধ্যে স্টেটাস রিপোর্ট তৈরি করে আগামী ৭ এপ্রিল আদালতে তা জমা দিতে হবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে।কলকাতা হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, ” তদন্ত করার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। সিবিআই তদন্ত করে এই ঘটনার রিপোর্ট দেবে। রাজ্য্ প্রশাসনের গঠিত বিশেষ তদন্ত টিম(সিট) আর তদন্ত করতে পারবে না। শুধু কাগজপত্রই নয়, ধৃত ও অভিযুক্তদের সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে মূল দোষীদের ধরতে হবে । একইসঙ্গে আদালত সিটের তদন্ত নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে। আদালত বলেছে, “২২ তারিখ সিট গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তদন্তে কোনও কার্যকরী অগ্রগতি হয়নি। যতটা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা উচিত ছিল, তা হয়নি। অভিযোগ আছে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের। তাই এই ঘটনার তদন্তভার নিরপেক্ষ সংস্থার হাতে দেওয়া হল।”  বগটুই কাণ্ডে হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরই তাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধীরা। বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ”সিবিআই তদন্তভারের নির্দেশ সংগত। স্বাধীনভাবে রাজ্যের পুলিস কাজ করতে পারছে না। মুখ্যমন্ত্রী, অনুব্রত মন্ডলকেও তদন্তের আওতায় আনা উচিত।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশকে স্বাগত।” তবে আদালতের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান তিনি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত। আগামীদিনে সিবিআই তদন্তের মাধ্যমে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র বের হবে।” অন্যদিকে, হাইকোর্টের রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তৃণমূল নেতা সাংসদ শান্তনু সেন পাল্টা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। শান্তনু সেন বলেন, “হাইকোর্টের রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আগে একাধিক ঘটনার সুরাহা করতে পারেনি সিবিআই।”

এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডে তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের য়োগ রয়েছে বলে মৃত পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পরে থানা বা পুলিস স্কট খুব কাছে থাকা সত্বেও আগ্নিকান্ড ঘটানোর সময় বাড়ির লোকজনের শত আহাজারী শুনেও পুলিশ তাদের সাহায্য করতে ঘটনাস্থলে যায়নি। তাদের অভিযোগ অনুব্রত মন্ডলের নির্দেশেই সেদিন পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি। উল্লেখ্য, আগে থেকেই  গরু পাচার কয়লা পাচার, তোলাবাজি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল। বারবার তলব করা সত্ত্বেও হাজিরা দিচ্ছেন না তিনি। আর এবার বগটুই-কান্ডে আদালতের এই নির্দেশ অনুব্রত-র চাপ বাড়াবে বলে যখন মনে করা । এ দিন সিবিআই তদন্তের নির্দেশের কথা শুনে অনুব্রত মণ্ডল বললেন, কোর্ট রায় দিয়েছে। কোর্টের ওপর আর কিছু হয় না। কোর্ট যা বলবে, তাই হবে। আইন আইনের পথে চলবে। আর বগটুই-কান্ডের তদন্তে পুলিশ যে কোনও খামতি রাখছে না, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। তিনি জানান, অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন, বাকিরাও গ্রেফতার  হবে।রামপুরহাটে বগটুই গ্রামের একই বাড়ি থেকে সাতজনের দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় গত মঙ্গলবার। তার আগের দিনই তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখের মৃত্যু হয় বোমাবাজিতে। ভাদুর মৃত্যুর জেরেই রাতে গ্রামের একাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই গ্রামের এই ঘটনাকে গণহত্যা বলে দাবি করেছে সিপিএম-বিজেপি-কংগ্রেস।তবে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের তত্ত্ব ছিল, এ ঘটনা শর্ট সার্কিটের জেরে ঘটেছে। যা নিয়ে সমালোচনার ঢেউ ওঠে।