প্রণব ভট্রাচার্য্য
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর রবিবার বিকেল ৪টা থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির পর্যালোচনা বৈঠক। কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভাপতি সনিয়া গান্ধীর সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। এই বৈঠকের দিকেই এখন সকলের নজর। বিধান ভোটে বিপুল হারের পর তড়িঘড়ি সোনিয়া গান্ধী দলের ও এই বৈঠক ডাকেন। এই বৈঠকের প্রাক্কালে দলে গান্ধী পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে তৈরি হয়েছে জোর জল্পনা। আগামীতে দলের রাশ কার হাতে থাকবে, সেই বিতর্কের মাঝেই গান্ধী পরিবারের হয়ে সওয়াল করলেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের বর্ষীয়ান নেতা অশোক গেহলটকে। অশোকের কথায়, কংগ্রেসে ঐক্য বজায় রাখতে গান্ধীদের উপস্থিতিতে অপরিহার্য। পাশাপাশি তার আরও দাবি, দলের সভাপতি হওয়া উচিত রাহুল গান্ধীর। গেহলটের এই মন্তব্য এমন এক সময় এল যখন দিল্লির রাজনৈতিক মহলে গান্ধীদের পদত্যাগের গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
সোনিয়া গান্ধী রাহুল গান্ধীকে একটা সময়ে কংগ্রেসের সভাপতি পদে বসিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯-র লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের বিপুল পরাজয়ের পর সেই হারের দায় মাথায় নিয়ে সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাহুল । তারপরেই দলে ফের নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়। শেষে সোনিয়া গান্ধীকেই সাময়িক ভাবে সভাপতি পদে নিযুক্ত করা হয়। বার বার ভোটে শোচনীয় অবস্থার কারণে জি-২৩ সথে থাকা বিদ্রোহী নেতারা এবার গান্ধী পরিবারের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন তারা। কংগ্রেসের বিদ্রহী গ্রুপ( জি-২৩) নেতারা প্রথম থেকেই গান্ধী পরিবারের বাইরে কাউকে শীর্ষ নেতৃত্বে চাইছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছেন দলের বর্ষিয়ান গুলাম নবি আজাদ, কপিল সিবলের মত নেতারা। তারা প্রথম থেকেই রাহুল গান্ধী বা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ছত্রছায়া দল চালানোর বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন এবার গান্ধী পরিবারের বাইরে কাউকে দলের রাশ দেওয়া হোক। ২০২২-র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের শোচনীয় ভরাডুবির পর তাদের সেই দাবি আরও জোরাল হয়। কংগ্রেসের সভাপতি পদে মুকুল ওয়াসনিককে করার দাবি তাদের। কিন্তু ওই বিদ্রোহীগ্রুপের বাইরে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীরাই সেই গান্ধী পরিবারের উপরেই আস্থা রাখতে চাচ্ছেন। তারা বলেন, সদ্য প্রকাশিত পাঁচ রাজ্যের ফল প্রকাশের পরই গান্ধী পরিবারের উপর দোষ চাপাতে কোমর বেধে নেমেছে কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ ‘জি ২৩’। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে পঞ্জাবের হার কংগ্রেস তথা গান্ধী পরিবারকে তারা সবচেয়ে বেশি দোষারপ করছেন, কারণ এই রাজ্যে সরকার ছিল কংগ্রেসেরই। যদিও পঞ্জাবের হারের ক্ষেত্রে রাহুল গান্ধীর দোষ দেখছেন না অশোক গেহলট।
সংবাদ সংস্থা-কে অশোক গেহলট বলেন, ‘পঞ্জাবে কংগ্রেস হেরেছে দলীয় কোন্দলের জেরে। ২০১৭ সালে কংগ্রেস একজোট ছিল, তাই পঞ্জাবে আমরা জিতেছিলাম। চরণজিৎ সিং চান্নি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর পরিস্থিতি ভালো হয়েছিল। এক মাত্র অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে আমরা পঞ্জাবে হারলাম।’ গেহলট আরও বলেন, ‘দলের সভাপতি হওয়া উচিত রাহুল গান্ধীর। প্রায় তিন দশক ধরে গান্ধী পরিবারের কেউ প্রধানমন্ত্রী হননি। এটা বোঝা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসের ঐক্যের জন্য।’
এরপর বিজেপিকে তোপ দেগে অশোক গেহলট বলেন, ‘মেরুকরণের রাজনীতি খুবই সহজ। বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার চালাচ্ছে যে কংগ্রেস মুসলিমদের দল। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য দেশের ঐক্য বজায় রাখা। ভোটের সময় ধর্ম সামনে চলে আসে। মূল্যস্ফীতি এবং কর্মসংস্থানের মতো ইস্যু পিছনের সারিতে চলে যায়।’ উল্লেখ্য, গেহলট গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। রাজস্থানে সচিন পাইলটের ‘বিদ্রোহের’ সময়ও ১০ জনপথের বাসিন্দারা গেহলটের পাশে ছিলেন। এহেন গেহলট এবার রাহুল গান্ধীর হয়ে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কথা বলছেন। প্রসঙ্গত, ভোটের আগে পঞ্জাবে রাহুল গান্ধী চন্নিকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন। তবে সেই চন্নি দুটি আসন থেকেই হেরেছেন। পঞ্জাবে কংগ্রেসের এই ধরনের ভরাডুবির সামনাসামনি এর আগে কোনওদিন হতে হয়নি কংগ্রেসকে। এই পরিস্থিতিতে গান্ধী ঘনিষ্ঠ বনাম বিক্ষুব্ধদের দ্বন্দ্ব দলের অন্দরের ফাটল রেখা আরও চওড়া করতে পারে।
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মোদী ঝড়ে কংগ্রেস উড়ে যাওয়ার পর এরকমই এক ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী দলের পদ ছাড়ার কথা বলেছিলেন। যদিও সেই সময় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা গান্ধী পরিবারকে পদত্যাগ করতে বারণ করেছিলেন। একে অ্যান্টনি ছিলেন সেই নেতাদের মধ্যে অন্যতম।
প্রসঙ্গত, একে অ্যান্টনি তিনদিন আগে সনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে নির্বাচনী রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে চান তিনি। ভোটের ময়দান থেকে সরে দাঁড়ানোর আর্জির পর এইবারে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে একে অ্যান্টনির অনুপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। উল্লেখ্য, রবিবারের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ৫৭ জন কংগ্রেস নেতাকে ডাকা হয়েছে।