কাস্টমস বিজিবি ভূমিকায়  জনগণের মধ্যে  ক্ষোভ বাড়ছে , দেশটির উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরী

 

ঢাকা থেকে  কিশোর সরকার

ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের বর্তমান সরকারের শাসনকালে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছাড়াও ব্যাবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই সুসম্পর্ক নষ্ট করতে নানা ধরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু আমলা-সহ পাকিস্তানপন্থীরা। এর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী দেখলেই নানাভাবে বেনাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিভিন্নভাবে হয়রানি ও অত্যাচার করছে, তার চেয়েও বেশী অত্যাচারিত হতে হচ্ছে ভারত থেকে বিজনেস ভিসা নিয়ে যারা ব্যবসায়িক কাজে বাংলাদেশে আসছেন তারা। ওই সমস্ত ভ্রমণকারীরা সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার পর মনে করছেন,  বিজনেস ভিসা নিয়ে বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকা  সত্যিকার অর্থেই একটি অভিশাপ ! ইমেগ্রেশন থেকে কাস্টমস এবং তারপরে বেনাপোল থেকে যশোর পযর্ন্ত ঘাটে ঘাটে বিজেবির লাগেজ তল্লাশির নামে হয়রানি ও অত্যাচারে ভারতীয় যাত্রীরা অতিষ্ঠিত। এ বিষয়ে বাংলাদেশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে দাবি করেছন বেনাপোলের স্থানীয় বাসিন্দা, পরিবহন মালিক এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এরই মধ্যে এমন্‌ই একজন ভারতীয় নাগরিক রিয়াজ মন্ডল  বিজনেস ভিসা নিয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশের বেনাপোল সিমান্ত দিযে গেলে তাকে হয়রানি, নির্যাতন, ভয়ভীতি এমনকি হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। রিয়াজ জানান, এমনকি তার পাসপোর্টের ভিসার উপরে কলম দিয়ে দাগ টেনে তার ভিসা নষ্ট করে দেয়া হয়। রিয়াজ মন্ডলের গুরুতর অভিযোগ,  বেনাপোল কাস্টমসের উপ-কমিশনার আব্দুল কায়ূম তার পাসপোর্টে সংস্লিষ্ট ভিসায়  একাধিক কালির দাগ কেটে  নষ্ট করে  দেয়। ভারতীয় নাগরিক রিয়াজ মন্ডলের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তার প্রেক্ষিতে ভারত ও বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী বৈধভাবে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ভীতি ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে অন্যান্য যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২৯ ডিসেম্বর সকালে রিয়াজ বিজনেস ভিসায় ভারতের পেট্টাপোল হয়ে বেনাপোলে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সংস্লিষ্ট কাস্টমসের তল্লাশি কেন্দ্রে ব্যাগ স্ক্যান করে সিস্টেমে চলে আসেন। কিন্তু এ সময় যাত্রী টার্মিনালের প্রবেশমুখে বিজিবির তল্লাশি চৌকিতে আটকানো হয় তাকে। সেখান থেক  কাস্টমসের ডিসি আব্দুল কাইয়ুম ওই যাত্রীকে বিজিবি চেকপোস্ট থেকে কাস্টমসে ফের প্রবেশের নির্দেশ দেন। প্রবেশের পরে যাত্রী রিয়াজ মন্ডলকে নিয়ে যাওয়া হয় উপ-কমিশনারের টেবিলে। সেখানে রিয়াজের সাথে বাক বিতান্ডার একপর্যায়ে কাস্টমস উপ-কমিশনার কায়ূম ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে রিয়াজের পাসপোর্টে থাকা  ভিসায় দাগ কেটে নষ্ট করে দেয়। এ সময় কায়ূম  হুমকি-ধমকি আর জেলে ঢোকানোর ভয় দেখালে রিয়াজ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন| পরে  রিয়াজ এ ব্যাপারে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনারের বরাবরে লিখিতভাবে তার ভিসা নষ্ট করার বি্ষয়টি সবিস্তরে জানিয়ে বিজিবি ও কাস্টমস উপ-কমিশনারের বিরুদ্ধে  তদন্তপূর্বক  বিচারের দাবী জানান। পাশাপাশি তার নষ্ট করা পাসপোর্টটি বৈধভাবে পাওয়ার দাবী জাননো হয়।

বেনাপোল চেকপোস্টে বিজনেস ভিসাই শুধু নয়, অন্যান্য ভিসার ক্ষেত্রেও প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গে ভারতীয় নাগরিকের  সঙ্গে ওই অশোভন আচরণে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে  ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে । বেনাপোল কাস্টমসের হয়রাণি, আনিয়ম,দূর্ণীতি ও অবৈধভাবে অর্থ আদায় যেন এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ বানিজ্যে পরিণত হয়েছে| অভিযোগ, ভারত থেকে আসা যাত্রীদের পণ্যসামগ্রী  কাস্টমস ছেড়ে দিলেও অতিরিক্ত পণ্য রয়েছে বলে সেই মাল আটক করছে বিজিবি। অনেক সময় ওই সমস্ত মালামাল বাজেয়াপ্তও করা হয়। শুধু জিনিসপত্র বাজেয়াপ্তই নয়, বিজেবি সদস্যদের অভব্য আচরণে দস্তুর মত লাঞ্চিত ও হতভম্য হতে হয় বৈধভাবে ভ্রমণকারিদের। ভারত থেকে বিজনেস ভিসায় বাংলাদেশে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যাত্রীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বেনাপোল সীমান্তে বেনাপোল কাস্টমস ও বিজিবি-র হয়রানিতে অতিষ্ট তারা। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের বক্তব্য, কাস্টমসের পাশাপাশি বিজিবি একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে বৈধভাবে চলাচলকারী যাত্রীদের ঘাটে ঘাটে  যেভাবে হয়রানি করছেন, তাতে মনে হয় এই সব যাত্রীরা  পাকিস্তান থেকে আসছেন, ভারত থেকে নয়! ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রীকে হররানির অভিযোগের ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমসের উপ-কমিশনার মো : আব্দুল কায়ূম বিষয়টি অনাকাঙ্খিত বলে দাবি করলেও ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রি রিয়াজের অভিযোগটি প্রত্যাখ্যান করেছেন  তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে দু’দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন এলাকায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে বিজিবি-র তল্লাশির নামে অসদাচারণের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষকরে ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে গেলে সেই  অত্যাচার বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন। মহামারী করোনাকালীন সময়েও বেনাপোল পেট্টাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সচল ছিল। বৈধ যাত্রীদের তল্লাশির নামে হয়রানির বিষটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গ্রিণলাইন পরিবহনের জিএম মো: আব্দুস সাত্তার। আব্দুস সাত্তার বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে বিজনেস ভিসা নিয়ে যাত্রীরা বাংলাদেশে আসতে উৎসাহ হারাবে, পাশাপশি ব্যাবসা বানিজ্যর ক্ষেত্রেও দু’দেশের মধ্যে ব্যাপক বৈদেশিক অর্থ আয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতির সন্মুখীন হবে।  এ ব্যাপারে তিনি বাংলাদেশের স্বরা্ষ্ট্র মন্ত্রী ও কাস্টমস নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এনবিআর-র চেয়াম্যান-কে বিষয়টি খতিয়ে দেখার  জন্য অনুরোধ  করছেন।

বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, দু’দেশের কাস্টমস কর্মকর্তাদের আরও সততার সঙ্গে যাত্রীদের পণ্যসামগ্রী বহণেরর বিষয়টা দেখা উচিৎ। নাহলে সরকারি কর্মকর্তাদের উপরে নাগরিকদের আস্থা উঠে যাবে। লিটন বলেন, বাংলাদেশ সিমান্তে বিজেবি বা কাস্টমসের এই হয়রানি যদি অব্যাহত থাকে, তা হলে এর পাল্টা হিসেবে ভারতের বিএসএফ ও পেট্রাপোল কাস্টমস কি বসে থাকবে? যদি তাই হয় তা হলে বিষয়টি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

সীমান্ত শুধু বিএসএফ-এর একার নয়, বিজিবি-রও। তাই বৈধভাবে চলাচককারী পাসপোর্ট যাত্রীদের  হয়রাণি  না করে  চোরাকারবারীদের অবাধে চলাচল রুখতে  সিমান্তে টহল বাড়ানো জরুরী | এতে দেশের সন্মান বাড়বে|  পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন, বেনাপোল সিমান্ত পথে বৈধভাবে চলাচলকারী যাত্রীদের চেকিং-এর নামে  ইমেগ্রেশনমুখে ও যশোর পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় বিজেবির একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে পাসপোর্ট যাত্রিদের হয়রানী কর একটি সভ্য দেশের জন্য কোন অবস্থাতেই সন্মানজনক নয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

এ ব্যাপারে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের জনৈক কর্মাকর্তাকে টেলিফোনে পাওয়াগেলে,  কয়েকদিন আগে বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতীয় যাত্রী রিয়াজের পাসপোর্টৈর ভিসা নষ্ট করে দেয়ার এখতিয়ার বেনাপোল কাস্টমস উপ-কমিশনারের আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, যদি এইরকম কোন ঘটনা ঘটে থাকে তা দু:খজনক। বাংলাদেশের যে কোন দূতাবাস থেকে ইস্যু করা যে কোন বৈধ ভিসা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই  বাতিল বা নষ্ট করার ক্ষমতা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দূতাবাস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের রয়েছে, এছাড়া অন্য কেউ তা করতে পারেনা। যদি কেউ এটা করে থাকে তা হলে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। যেটা তার করা উচিৎ হয়নি।