নিজস্ব প্রতিবেদন

বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ আর উত্তেজনার আবহে বৃহস্পতিবার ত্রিপুরায় পুরভোট শেষ হয়েছে। ভোটের আগের রাত থেকেই অশান্তির খবর পাওয়া গেছে। কোথাও প্রার্থীরওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে,  কোথাও আবার মক পোলিং চলাকালীনই আক্রান্ত হয়েছেন তৃণমূল এজেন্ট। সবমিলিয়ে ভোটেরদিন উত্তপ্ত ছিল আগরতলা। বাইক বাহিনীর তান্ডব, নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলাসহ প্রার্থীদের মারধর মত একাধিক অভিযোগে এদিন পূর্ব আগরতলা থানা ঘেরাও করে তৃণমূল। পরে সেখান থেকে তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তৃণমূলের স্টিয়ারিং কমিটির কনভেনর সুবল ভৌমিককেও নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও একাধিক জায়গায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে।

বেলা বাড়তেই ত্রিপুরার পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে ঊঠে । পুরভোটকে কেন্দ্র করে সকালেই তৃণমূলের দুই পোলিং এজেন্ট-কে মারধরের অভিযোগ উঠে।  আগরতলার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তপন কুমার বিশ্বাসকে মারধর করা হয়। তৃণমূলকর্মীদের অভিযোগ, গতকাল সারা রাত ধরেই শহরজুড়ে বাইক বাহিনীর তাণ্ডব চলেছে। বাইকে করে দুষ্কৃতীরা তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর করেছে।  সকালেও তৃণমূলকর্মীরা বুথে গেলে তাদের মারধর করা হয়। পুলিশকে একাধিকবার অভিযোগ জানালেও তারা কোনও পদক্ষেপই করেননি বলে দাবি। এবার বামেদের পাশাপাশি বিজেপির অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে ভোটে লড়ছে তৃণমূল। গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ত্রিপুরায় গিয়েছেন তৃণমূলের একাধিক সাংসদ- বিধায়ক।

শুধু ৫১ নম্বর ওয়ার্ডই নয়, আগরতলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী পদ্মা ভট্টাচার্যের ছেলে ধীমান ভট্টাচার্যকেও আক্রমণ করা হয়। তাঁকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীর অভিযোগ, ভোট কেন্দ্রে গুণ্ডারা ইভিএম মেশিনের তার খুলে দিয়েছে। গতকাল রাত থেকেই ক্রমাগত হামলা হচ্ছে। পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।  ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মক পোলিং চলাকালীন দুই তৃণমূলকর্মী আক্রান্ত হন। তাদের নাম কৃষ্ণ নুপুর মজুমদার ও মনোজ চক্রবর্তী। লাঠির আঘাতে তাদের মাথা ফেটে  গেছে।  আগরতলার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে অপহরণ করার অভিযোগ করা হয়।। আগরতলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর শ্যামল পালের এজেন্টকে  মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় দুষ্কৃতরা।

অন্যদিকে, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র থেকে ভোটারদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে বৈষ্ণবটিলা হাইস্কুলে তৈরি ৫ নম্বর বুথেও স্থানীয় বিজেপি নেতারা ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। প্রত্য়ক্ষদর্শীদের অভিযোগ, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বিজেপি।  আগরতলার পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪ কবিরাজ তিল্লা, ২ নম্বর ওয়ার্ড অফিস এবং ১ অঙ্গনওয়ারি স্কুলে ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ।১৯ নম্বর ওয়ার্ডেও ভোট গ্রহণে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওউঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে।

পুরভোটে অশান্তি বুথ দখল, রিগিং আর  হিংসার প্রতিবাদে  বামদলের পক্ষ থেকে এদিন থানা ঘেরাও করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রচ্ছন্ন নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের অভিযোগ পুলিস ছিল নিস্ক্রিয়। পরে এসডিএফ অফিসও ঘেরা  করে সিপিএম সমর্থকরা । সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপি। ভোটগ্রহণের আগের দিন মধ্যরাত থেকে ত্রিপুরা জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবায় বন্ধ রাখাসহ ২০টিরও বেশি অভিযোগ  জমা করে তৃণমূল। প্রতি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। কোথাও হামলা, কোথাও  ইভিএম মেশিন গড়মিল, কোথাও জমায়েতের অভিযোগ। পুলিস সুপার, ওসি এবং রিটার্নিং অফিসারদের বিরুদ্ধেও ফোন না ধরার অভিযোগ করে তৃণমূল কংগ্রেস।

পুরভোটকে কেন্দ্র  অশান্তি সহ বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে ত্রিপুরায় বিজেপি মুখপাত্র নবেন্দ্যু ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ তৃণমূল পরিকল্পনামাফিক এইসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তৃণমূলের অভিযোগের কোনও গুরুত্বই নেই। ওরা নিজেরাই সন্ত্রাস করে, তারাই আবার সন্ত্রাসের অভিযোগ আনছে। তৃণমূল কর্মীরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল শুরু কররছে।”

ভোট শান্তিপূর্ণ হচ্ছে কিনা, এ ব্যাপারে  জানতে চাওয়া হলে  সংবাদ-কে তিনি বলেন, “ভোট সর্বত্র শান্তিপূর্ণই হচ্ছে। বুথগুলির বাইরে সমস্ত ভোটাররা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। পুলিশের কড়া নিরাপত্তা জারি রয়েছে। এর আগে বাম শাসনে ভোটের সময় কীভাবে অশান্ত পরিবেশ তৈরি হত, তা সবাই দেখেছে। তৃণমূল নিজেদের রাজ্যে অশান্তি করে, তাই ত্রিপুরাতেও অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বুথের ভিতরে কড়া পাহারা রয়েছে, এইধরনের ঘটনা  আগরতলায় ঘটা সম্ভব নয়।”

পাল্টা  ত্রিপুরা তৃণমূল প্রধান সুবল ভৌমিক বলেন, “ তিনি কিভাবে বলাছেন যে ত্রিপুরায় শান্তিপূণর ভোট হয়েছে,  কোনও অশান্তি  হয়নি?  তার আভিযোগ, মানুষ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। বাইরে থেকে গাড়ি বোঝাই করে লোক এনে রাতভর তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সকালেও বুথে তৃণমূলকর্মী, সাধারণ ভোটারদের মারধর করা হয়েছে। রাজ্যে গণতন্ত্রের কোন কাঠামোই নেই।  পুলিশও শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।  রাজ্যে এর আগে নির্বাচনকে ঘিরে কখনওই এইরকম অশান্তি হয়নি ত্রিপুরায়। বিজেপি মনে করছে পৌরনিগম হেরে গেলে বিধানসভাও তাদের হাত ছাড়া হবে।  সেই ভয়েই  ওদের এই শক্তি প্রদর্শন করছে।”

এদিন ত্রিপুরায় ১৩টি পুর পরিষদ-সহ  ৬টি নগর পঞ্চায়েতে ভোটগ্রহণ হয়। মোট বুথের সংখ্যা ৬৪৪টি।  এর মধ্যে ৩৭০টি বুথ ‘অতি স্পর্শকাতর’ এবং ২৭৪টি ‘স্পর্শকাতর’ ছিল।  ৩৩৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১২টি-তে বিজেপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে । ২০টি পুর অঞ্চলের বাকি ২২২টি আসনে  ভোট হয়েছে আজ।