পদ্মা সেতু  উদ্বোধন উপলক্ষে  কলকাতা হাইকমিশনে সুধী সমাবেশ

ওমর আলী, বিশেষ প্রতিনিধি

কলকাতা : পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে কলকাতায উপ দূতাবাসে আয়োজিত সুধী সমাবেশে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড: পবিত্র সরকার বলেন, শেখ হাসিনা বাপের বেটি, তিনি পদ্মা ব্রীজ করে দেখিয়েছেন। পৃথিবীর যে রাষ্ট্রগুলো ছোট, যারা নিজেদের দূর্বল মনে করে, তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে  শিক্ষা নিতে পারে। নিজের অহংকার নিয়ে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে, সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রতি, বিশ্ব ব্যাংকের প্রতি কিভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া যায়, তোমরা প্রত্যাখ্যান করো, প্রত্যাহার করো, আমরা নিজেদের ক্ষমতায় এই ব্রীজ করবো। এটা আরেকটা তাজমহল নির্মার্ণের মতো। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই অসামাণ্য কাজটি  করে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তা সপ্পন্ন করলো। পদ্মা সেতুর কারণে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত তো হবেই, সারা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ উপকৃত হবে।

ড: পবিত্র সরকার বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে দুই দেশের মানুষ আরও বেশি কাছাকাছি আসতে পারবে, জানতে পারবে। সম্প্রীতি গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, আমার জন্ম পূর্ব বাংলায়, পূর্ব বাংলা কিভাবে এগিয়ে চলেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, সেটা দেখে পশ্চিম বাংলার মানুষও গর্বিত।আন্দালিব ইলিয়াছ বলেন, পদ্মা সেতুর বিষয়ে ২০১২ সালে বিশ্ব ব্যাংক যখন এর কাজ নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ তোলে, ওই সময় আমি একটি শুনানিতে বিশ্ব ব্যাংকের সদর দফতর ওয়াশিংটনে উপস্থিত ছিলাম। আমি তাদের বলেছি, অভিযোগের প্রমান দাও। তোমাদের কাছে কি প্রমান আছে আমাদেরকে দাও। তারা কোনো প্রমান দেয়নি। তদন্তের প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন সচিব মোশারফ হোসেন ভুঁইয়াকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেন। তিনি কিছুদিন জেলেও ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জানতেন, সচিব মোশারফ হোসেন ভুইয়া নির্দোষ। কেবলমাত্র বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ তদন্তের প্রয়োজনে ওনাকে কিছুদিন জেলে থাকতে হয়েছে। তারপর জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আরও বড় পদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংককে দেখিয়ে দিয়েছেন, সচিব মোশারফ হোসেন ভুঁইয়াকে তিনি কত ভরসা করেন।

পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণের বিষয়ে আন্দালিব ইলিয়াছ বলেন, পদ্মা সেতু জনগণের টাকায় হয়েছে। তবে টাকাটা অর্থ বিভাগ থেকে সেতু বিভাগকে ঋণ নিতে হয়েছে। ১% সুদে এই ঋণ দেওয়া হয়। জনগণের টাকা জনগণের কাছেই ফেরৎ দেওয়া হবে। ৩৫ বছরে ১% সুদসহ ৩০ হাজার কোটি টাকা সেতু বিভাগ ফেরৎ দেবে। তিনি আরও বলেন, আমরা নদীর দেশের মানুষ। সবচেয়ে প্রাণের নদী পদ্মা। পদ্মা সেতুর কারণে অর্থনৈতিক উন্নতি তো হবেই, সংস্কৃতির উন্নতি হবে, দেশ প্রেম, আবেগের দিক থেকেও অনেক উন্নতি হবে। পদ্মা সেতু এক কথায় বাংলাদেশের আত্ম বিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডস বাংলাদেশের সভাপতি চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীষ সূর। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন তৃতীয় সচিব শেখ মারেফাতুল ইসলাম।
এর আগে সুধী সমসবেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠকরে শুনানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার বানী পাঠকরেন কলকাতা উপ-দূতাবাসের কাউন্সিলর কন্স্যুলার মো: বশিরউদ্দিন।
বাণী পাঠের পরই প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা কর্তৃক বাংলাদেশের স্বপ্নের সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটি সরাসরি অনুষ্ঠানে দেখানো প্রদর্শিত হয়।
এ ছাড়া পদ্মাসেতু নিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতার মানুষেরও আবেগ প্রবল রয়েছে। তাই কলকাতার জনসাধারণকে পদ্মাসেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখানোর জন্য উপদূতাবাসের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানালে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এদিন কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে পার্কসার্কাস সাতরাস্তা ক্রসিং, ভিক্টোরিয়াল মেমোরিয়াল এক নম্বর গেট, ধর্মতলা এবং এলগিন রোড এলাকায় ডিজিট্যাল ও আ্যানালগ বিলবোর্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পদ্মাসেতু উদ্বোধনী সম্প্রচার অনুষ্ঠানটি কলকাতাবাসী উপভোগ করেছেন বলে জানা গেছে।