নিজস্ব প্রতিনিধি
তৃণমূলের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে ত্রিপুরায় গ্রেফতা ও তৃণমূল সমর্থকদের উপর হামলা করার প্রতিবাদে কার্যত তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ত্রিপুরায় প্রতিবাদ চলছে। সোমবার সকালে ত্রিপুরাসহ পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রতিবাদের আঁচ পৌঁছে রাজধানীতেও। এদিন দিল্লির নর্থ ব্লকেও সকাল থেকে তৃণমুল সাংসদরা ধর্ণায় বসে ত্রিপুরা পুলিশকে ধিক্কার জানায়। সাংসদরা ত্রিপুরা ইস্যু নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমিত শাহ-র সাথে দেখা করারও দাবী জানান।
এদিকে চার দিনের সফরে সোমবার দিল্লি যাত্রআর আগে বিমানবন্দর বিজেপি–র বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সায়নী ঘোষের গ্রেপ্তারি নিয়ে্ তিনি বললেন, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ত্রিপুরা নিয়ে আলোচনা করবেন মমতাতা বন্দোপাধ্যায়। এদিন বিমান বন্দরে মুখ্যমন্ত্রী আ্রও বলেন, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোয় গণতন্ত্রের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ছে। অত্যাচারের পর অত্যাচার চলছে সেখানে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে ভোট হয় না।’ মানবাধিকার কমিশনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এখন মানবাধিকার কমিশন কোথায় ?’ তার পরেই তিনি ত্রিপুরার সরকারকে ধিক্কার জানিয়ে বলেন, বারবার সেখানে আক্রান্ত হচ্ছে তৃণমূল। তিনি বলেন, সায়নীকে গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। শাহ সময় দেননি। তাই নর্থ ব্লকে ধরনায় বসছেন তৃণমূলের সাংসদরা। দিল্লি পৌছে ওই সাংসদদের সঙ্গে দেখা করবেন মমতা ।
অন্যদিকে আগরতলায় এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের পদযাথ্রা কর্মসূচী থাকলেও উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে তা বাতিল করেছে ত্রিপুরা পুলিশ। তবুও আগরতলায় পৌঁছে গেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। আগরতলাতেও বিক্ষোভ জানাচ্ছেন তারা। অভিষেকের পদযাত্রা কর্মসূচী বাতিল প্রসঙ্গে বঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবসু বলেন, রবিবার সায়নী ঘোষ গ্রেফতার হওয়ার পরেই কোভিড বিধির কারণ দেখিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রার অনুমতি বাতিল করেছে ত্রিপুরা প্রশাসন। ব্রাত্য বলেন, ওরা পদযাত্রার অনুমতি দিচ্ছে না এটা ভাবা যায় না। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন ভোটের আগে বিজেপি প্রায় ডজন খানেক পদযাত্রা করেছেন। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ৫০টা সভা করেছে বিজেপি। এছারাও, মোদী নিজে এসে এখানে সভা করেছে এবং প্রত্যেকটি সভারই অনুমতি দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন সরকার। কিন্তু ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের কাছে সেই সুযোগ না পাওয়াকে তিনি গণতন্ত্রের লজ্জা বলে অভিহিত করেন।
সায়নী গ্রেফতারসহ ত্রিপুরা ইস্যুসহ আদালত অবমাননার অভিযোগ নিয়ে ফের সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল। সেই মামলা গৃহীত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আগামিকাল, মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানি রয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, ত্রিপুরায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। তৃণমূল সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে যে আদালত ত্রিপুরা সরকারকে আসন্ন ত্রিপুরা নির্বাচনের জন্য প্রার্থী এবং প্রচারকারীদের নিরাপত্তা দিতে বলার পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। ত্রিপুরা ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে আরও কোনঠাসা করতে চাইছে তৃণমূল। ত্রিপুরায় একের পর এক দলীয় নেতা নেত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিপ্লব দেবের সরকারের বিরুদ্ধে আগেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল। এর আগে শীর্ষ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করে তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেব অভিযোগ জানিয়েছিলেন, ত্রিপুরায় রাজনৈতিক প্রচারে তৃণমূলকে বার বার বাধা দেওয়া হচ্ছে। হিংসার শিকার হচ্ছেন দলীয় নেতা-নেত্রীরা। তৃণমূলের কার্যালয়, গাড়ি, ভাঙচুর এবং ভোটপ্রচারের সামগ্রীও নষ্ট করা হচ্ছে বলে দাবি করা হয়। বিপ্লব দেবের রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এক জন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনেরও আর্জি জানিয়েছিলেন সুস্মিতা। পরে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ত্রিপুরা সরকারকে নোটিস দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপরও বারবার প্রার্থীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তবে সায়নী ঘোষের গ্রেফতারির ঘটনা নতুন উত্তাপ তৈরি করেছে ত্রিপুরায়।
তৃণমূলের যুব নেত্রী সায়নীকে গ্রেফতারী প্রশ্নে পুলিশের বক্তব্য, তার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয়েছে। তৃণমূলের বক্তব্য, সায়নীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা বানচাল করার জন্য এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে । এমনকী, পুলিশ বিজেপির নির্দেশ মতো কাজ করছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। যদিও ত্রিপুরা পুলিশের বক্তব্য, তাদের কাছে সায়নীকে গ্রেফতার করার মতো যথাযথ প্রমাণ রয়েছে।
অবশেষে আজ বিকেল ৪ টায় নিজবাসভবনেই তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে দেখা করার সময় দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা কতটা ফলপ্রসু হচ্ছে, তার উপরই নির্ভর করবে তৃণমুলের পরবর্তী প্রতিবাদ কর্মসূচি সিদ্ধান্ত।
ত্রিপুরায় সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এ রাজ্য চলছে, দিনেও মানুষের বেরনো মুশকিল হয়ে গিয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতি, নৈরাজ্য, এমন একটা বাতাবরণ সারা রাজ্য জুড়ে তৈরি করা হয়েছে যা সারা ভারতবর্ষের মানুষ কোনওদিন দেখেনি”। তাঁর দাবি ত্রিপুরায় সংবাদমাধ্যম থেকে চিকিৎসক, সবাই আক্রন্ত হন। অভিষেক অভিযোগ বলেন “আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। আপনাদের উচিত মানুষের স্বার্থরক্ষা করা। এলাকার শান্তি-সংহতি বজায় রাখা। আপনারা সেটা করছেন না। ” পুরভোটে তৃণমূল প্রার্থীকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে ভোটারদেরকে তিনি বলেন, ” আমরা আপনাদের উপর আসা আঘাত মাথা পেতে নেব, কিন্তু সাহস করে মাথা তুলে আপনাদেরই দাঁড়াতে হবে। আপনাদের ভোট তৃণমূলকে দিয়ে গণতন্ত্রকে বাঁচান।”
তৃণমুল কংগ্রেসের সমস্ত আভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি রাজ্য মুখপাত্র নবারুণ ভট্রাচার্য়্য বলেন, তৃণমূল ত্রিপুরায় কোন অস্তিত্বই নেই। পুরনির্বাচনে তারা গুটিকয়েক প্রার্থী দিলেও ওই সব প্রার্থীদের এলাকায় কোন জনভিত্তি নেই। ত্রিপুরায় তাদের আবস্থা এমন যে কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাসভর্তি করে লোক নিয়েএসে তাদের সভা করতে হয়। তাই ত্রিপুরায় জনভিত্তি তৈরী করার জন্য তারা গত ৫/৬ মাস ধরে নানান নাটক করে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা সরকার যদি তাদের সাংগঠনিক কাজে বাধা দেয় তা হলে তারা কি করে এখানে সংগঠন করতে পারলো। ত্রিপুরার মানুষই ওদের প্রতি বিতশ্রদ্ধ। নবারূন বলেন, তৃণমূল নেতারা এখানে এসে যে সমস্ত জঘণা ভাষায় কথা বলতে সাহস পান তা কি পশ্চিম বঙ্গে বিজেপির প্রতি করা হয়? তিনি বলেন, আগে নিজেদের রাজ্য সামলান, ত্রিপুরার দিকে আঙ্গোল না তুলে।