নিজস্ব প্রতিবেদন

মন্ত্রীত্বর পর এবার  তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিবসহ সমস্ত পদ থেকেও অপসারিত করা হলো প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী শিল্প মন্তরী পার্থ চট্রোপাধ্যায়কে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে তৃণমূল ভবনে জরূরী বৈঠক বসে দলীয় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির। বৈঠক শেষে পার্থ চট্রোপাধ্যায়কে তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে অপসারণের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়। বৈঠকে তৃণমুলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ছাড়াও সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্রাচার্য্য, কুনাল ঘোষ ও ব্র্যত্যবসু সহ দলের ছীর্ষ নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বলেন, ”শৃঙ্খলা কমিটির সকল সদস্যের মতামত অনুযায়ী দলের সমস্ত পদ থেকে পার্থ চট্রোপধ্যায়কে অপসারণ করা হলো। বিচার ব্যবস্থার মাধ্যম দিয়ে তিনি যদি নিজেকে নিদোর্ষ প্রমাণ করতে পারেন তবে সন্মানে তিনি আবার দলে ফিরতে পারবেন । দুর্ণীতিতে জড়িয়ে থাকলে যতবড় নেতাই হোন না কেন দল কাঊকেই রেয়াত করবেনা।”

ইতোপূর্বে নবান্নে মন্ত্রীপরিষদের সভা ডেকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় এ সময় পার্থর নাম না করেই বললেন, ‘একজনকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিলাম। আমাদের দল খুব কঠোর দল। অনেক কষ্ট করে রাজনীতিটা করি।’ পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের পর এমনই  প্রতিক্রিয়া ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে ছিল শিল্প-বাণিজ্য, পরিষদীয়, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প পুনর্গঠন এই ৪টি দফতর। সব দফতর থেকেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। আপাতত সবকটি দফতরই এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তার হাতে রেখেছেন।

ইতোমধ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের সমস্ত অফিসিয়াল নেপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর আজই প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক বসেছিল। ওই বৈঠকের পরই পার্থকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হলো।

এসএসসি-তে শিক্ষক দুর্নীতির তদন্তে ইডির হাতে গ্রেফতার হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর থেকেই বিরোধীরা দাবি করছিল, মন্ত্রিত্ব থেকে সরাতে হবে পার্থ চট্টোপাধ্যকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আর ক্যাবিনেট মন্ত্রী রাখা হবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার সকালে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ নিজেই সেই জল্পনাতে ঘি ঢালেন। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ঘনিষ্ঠর বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার ঘিরে কুণাল বলেন, ‘এই ঘটনা দলের জন্য অসম্মানের। আমাদের সকলের জন্য লজ্জার।’ যেভাবে দলকে লজ্জার মুখে পড়তে হয়েছে, সেই দিকটিও দল ভেবে দেখবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি একটি টুইট করে  তিনি লিখেছিলেন, ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব এবং দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত।’ এরপরই বিকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পার্থ চট্রোপাধ্যায়কে সরানো হলো।

পার্থ চট্রোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে গত চারদিন ধরে পাহাড়প্রমাণ চাপ তৈরি হচ্ছিল মুখ্যমন্ত্রী তথা পুরো দলের উপর। রাজ্যের গন্ডি পেরিয়ে এখন জাতীয় রাজনীতিতেও তার প্রভাব বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পার্থ্র দায় দভার দল বইতে চাচ্ছেনা।

প্রসঙ্গত, এসএসসি দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের গ্রেফতারের পর সোমবার বঙ্গবিভূষণের মঞ্চে প্রথমবার মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সেদিন তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘সারাজীবন আমি রাজনীতি ভোগ করার জন্য করিনি। সবসময়ই আমার ধারণা ছিল রাজনীতি মানে ত্যাগ। অন্যায়কে আমি সমর্থন করি না। দুর্নীতিকে সমর্থন করা আমার জীবনের নেশাও নয়, পেশাও নয়। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে, তাকে যথোপোযুক্ত শাস্তি দিলেও আমার কোন রকম আপত্তি থাকবেনা।’