আভিযুক্ত আসমী আনারুলসহ গ্রেফতার ২২
নিজস্ব প্রতিনিধি
রামপুরহাটের বগটুই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিস। মুখ্যমন্ত্রী বগটুই গ্রামে গিয়ে পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিসেন, আনারুলকে গ্রেফতার করতেই হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের ২ ঘণ্টার মধ্যেই বীরভূমের তারাপীঠের একটি হোটেলের কাছ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মোবাইল টাওয়ার লোকেট করেই আনারুলকে গ্রেফতার করে পুলিস। বাগটুই কাণ্ডে এই পর্যন্ত আনারুলসহ ২২ জনকে গ্রফতার করেছে পুলিস। ধৃত আনারুলকে জেরা করছেন পুলিস সুপার নিজেই। প্রসঙ্গত, আনারুলসহএদিন বগটুই গ্রামে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন আক্রান্ত-ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে কেঁদে ভেঙ্গে পড়েন স্বজনহারারা। এই হত্যা হত্যাকান্ডের সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত থাকা আনারুলের বিরুদ্ধেই প্রথম থেকে অভিযোগ উঠেছিল। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেও তারা একই অভিযোগ করে বলেছেন, আগুন তাঁর নির্দেশেই লাগান হয়েছে ।
তার পরই সেখান থেকে একের পর এক নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । যার মধ্যে রয়েছে রাজ্যজুড়ে বেআইনি অস্ত্র এবং বোমা বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ। এবং সেই সূত্রে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল পুলিশের অভিযান। রাজ্যের সমস্ত পুলিসের আগামী দশ দিন ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ রাজ্যজুড়ে কার্যত সাড়া ফেলে দিয়েছে।এরপরেই নিহত পরিবারের সদস্যদের চাকরি ও ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করলেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘যাঁদের ঘরবাড়ি পুড়ে গিয়েছে, তাঁদের এখনই ২ লক্ষ টাকা ঘর ঠিক করার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়াও নিহতদের পরিবারকে আরও ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, নিহত ১০টি পরিবারের একজন করে মোট ১০ জন সদ্স্যকে স্থায়ী চাকরি দেওয়া হবে।’ তা ছাড়া যাদের ৬০ শতাংশ বা’ড়ি পুড়ে গিয়েছে তাদের ১ লক্ষ টাকা ও তিন আহত শিশুর প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বগটুই গ্রামে দাঁড়িয়ে বলেন, এই ধরণের নৃশংস ঘটনা ঘটেছে, ভাবা যায় না। ১০টা বাড়ি পুড়েছে। ভাদুকে মারার পর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে আটজন মারা গিয়েছে। ঘটনার সময় এসডিপিও, আইসি দায়িত্ব পালন করেননি। তাদের বিরূদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার পিছনে বড় কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই কান্ডে বহিরাগতরা জড়িত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর সাংবাদিক বৈঠক করেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বগটুইকান্ড নিয়ে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ”চাকরি আর টাকা দিয়ে কি হারানো স্বজনদের পাওয়া যাবে। মুখ্যমন্ত্রী ঘটনার প্রায় তিনদিন পর আসলেন, কিন্তু আগে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে যাওয়া উচিৎ ছিল তার। তার বদলে তিনি দু’পক্ষকে ডেকে মিটমাট করে নিতে বলেছিলেন?”বগটুইয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে কটাক্ষ করেন সেলিম বলেন, “যেখানে হাইকোর্ট বলছে, প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে। কেস ডায়েরি দিতে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে কেস সাজাতে বলছেন। তিনি বলছেন, আনারুল খারাপ তাকে গ্রেফতার করা হলো কিন্তু এসপির বিরূদ্ধে এখনও কেন কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে যান বিজেপির পাঁচ সদস্যর একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে আছেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, ভারতী ঘোষ, সত্যপাল সিং, কেসি রামমূর্তি, ব্রিজলাল। বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে এদিন সাঁইথিয়ায় আটকানো হয়। সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হেলিক্যাপ্টারে গেলেন অকস্থলে আর আমরা সড়ক পথে যাচ্ছি সেখানে আমাদের কনভয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।কিন্তু এই বাধা অতিক্রম করে তারা নির্দিষ্ট সময় ওই গ্রামে যান এবং স্বজনহারাদের সঙ্গে কথা বলেন।
তা ছাড়া, এদিন বিধানসভায় ওয়াক আউট করে রামপুরহাট কাণ্ডে বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ দেখান।