এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: কে বলে বাংলা উপন্যাস পড়ার ঝোঁক হারিয়ে যাচ্ছে? যাঁরা বলেন খাতায় কলমে তাঁদের ভুল প্রমাণিত করে দিল দেবারতি মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘ডাকাত রাজা’। আগামী ২১ অগাস্ট ওই বইটি প্রকাশ হওয়ার কথা। অগ্রিম বুকিং করলে লেখিকার সই করা ২০০টি কপি পেতে পারেন, জানিয়েছিল প্রকাশনা সংস্থা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শুক্রবার রাত ১২টা থেকে লেখিকার পরবর্তী উপন্যাসের প্রি-বুকিং শুরু হয়। দেবারতির ফ্যান বেসের কথা মাথায় রেখে সার্ভার ক্যাপাসিটি দ্বিগুণ করে রেখেছিল সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট। প্রি বুকিংয়ের জোয়ার নয় সুনামি আসবে, সে কথা কল্পনা করতে পারেননি লেখিকাও। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ক্র্যাশ করে যায় সাইট। যদিও দক্ষতার সঙ্গে বিষয়টি সামলে নেন কর্তৃপক্ষ। অনেকটা জে কে রাউলিংয়ের হ্যারি পটার সিরিজের বই প্রকাশিত হলে যে উন্মাদনা দেখা যায়, সেই চিত্রই দেখা গেল বাংলায়।
এ প্রসঙ্গে এই সময় ডিজিটাল-কে লেখিকা বলেন, ‘বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার মন্দিরে আমরা ঘুরতে যাই। কিন্তু আমরা জানি না যে ওই জায়গায় এক হাজার বছর রাজত্ব করে গিয়েছে একটি রাজবংশ। শুধুমাত্র সংরক্ষণের অভাবে সেই বংশের রাজা বা তৎকালীন সমাজ সম্পর্কে বাংলার মানুষ জানতে পারছে না। অথচ সেই সময়কার বাঙালি রাজারা যে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন তা কিন্তু প্রতিটি বাঙালির জানা উচিত। কারণ, এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয়। সেই কারণেই ভেবেছিলাম বিষ্ণুপুরের অজানা ইতিহাস সম্পর্কে লিখব’।
তাঁর সংযোজন, ‘এই কারণে একাধিকবার বিষ্ণুপুর গিয়েছি। সেখানকার আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবন এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে গিয়েছি। রাজবংশের একজন উত্তরসূরি জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ ঠাকুর আমাকে গবেষণার কাজে অনেকটা সাহায্য করেছেন’।
নেটপাড়ায় ‘ডাকাত রাজা’র তোলা ঝড় প্রসঙ্গে দেবারতি বলে, ‘শুক্রবার রাতে প্রি অর্ডারের জন্য বুকিং স্লট ওপেন করা হয়। একসঙ্গে হাজার হাজার মানুষ অর্ডার দিতে শুরু করেন। একটা সময় ২৫-৩০ হাজার মানুষ বুকিং শুরু করেন। যার জেরে সাইট ক্র্যাশ করে যায়’।
কী রয়েছে বইটিতে?
আজ থেকে পাঁচশো বছর আগেকার সমাজ, যুদ্ধ, রাজাদের জীবন সহ আরও অনেক বিষয়কে বইয়ের পাতায় ফুটিয়ে তুলেছেন জনপ্রিয় লেখিকা। তাঁর কথায়, ‘বড় একটা ক্যানভাসে আমি এই উপন্যাস লিখেছি। কালাপাহাড় বিষ্ণুপুর আক্রমণ করছেন এমন অবস্থায় সমাজ, যুদ্ধ সবকিছু নিয়ে জমজমাট উপন্যাস তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। বিষ্ণুপুরের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে যেহেতু এটা উপন্যাস, তাই কিছুটা কল্পনার সাহায্য নিয়েছি। উপন্যাস লিখতে গেলে তো একটা স্টোরিলাইনের উপর নির্ভর করতে হয়, সেই জন্য কিছুটা ফিকশন রয়েছে’।
ইতিহাসধর্মী বাংলা বইয়ের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় বেশ খুশি লেখিকা। তিনি বলেন, ‘বই পড়ার প্রবণতা এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ইতিহাসধর্মী একটি উপন্যাস কেনার জন্য এভাবে প্রি বুক হতে পারে সেটা কল্পনা করিনি। সত্যিই খুব ভালো লাগছে। আসলে আদিমতম বিনোদনের মধ্যে বই অন্যতম। আর সেই বিনোদনের মাধ্যমকে মানুষ বেছে নিচ্ছেন, একজন লেখক হয়ে এর চেয়ে বড় পাওনা বোধহয় সত্যিই আর কিছু নেই’।
Source-eisamay