নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এই আবহে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হলেও শেষ পর্যন্ত ওই পাঁচ রাজ্যের উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব উত্তরাখণ্ড , গোয়া এবং মণিপুর ওই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করল কমিশন। শনিবার দুপুর সাড়ে তিনটেয় নির্বাচন কমিশনের তরফে পাঁচ রাজ্যের ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করা হল।
কঠোরভাবে করোনা বিধি মেনেই ভোট হবে উত্তর প্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যে। উত্তর প্রদেশে প্রথম দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১০ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় দফার নির্বাচন ১৪ ফেব্রুয়ারি। তৃতীয় দফা ২০ ফেব্রুয়ারি। চতুর্থ দফা ২৩ ফেব্রুয়ারি। পঞ্চম দফা ২৭ ফেব্রুয়ারি। ষষ্ঠ দফা ৩ মার্চ। সপ্তম ও শেষ দফা ৭ মার্চ। মণিপুরে হবে দু’দফায় ভোট। প্রথম দফা ২৭ ফেব্রুয়ারি। দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে ৩ মার্চ। এছাড়া পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড ও গোয়ায় এক দফায় নির্বাচন হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। পাঁচ রাজ্যের ভোটের গণনা হবে ১০ মার্চ।
দেশে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই বেশ কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনও রোড শো, পদযাত্রা, সাইকেল বা বাইক র্যালি ও মিছিলের কোন রকম অনুমতি দেওয়া হবে না। পরবর্তীতে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ফের নতুন নির্দেশনা জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।
সমস্ত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ইভিএমের পাশাপাশি ভিভিপ্যাটও ব্যবহার করা হবে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছে। যদি কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে তাদের ওয়েবসাইটে ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে আপলোড করতে হবে। সেই সঙ্গে কেন সেই প্রার্থীকে বাছাই করা হল, সেই কারণও জানাতে হবে।
নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হয়েছে। আদর্শ আচরণবিধির নির্দেশিকা কার্যকর বাস্তবে নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন একাধিক ব্যবস্থা করেছে। এই নির্দেশিকাগুলির কোনওরকম লঙ্ঘন দেখা গেলে তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র জানিয়েছেন, “আমাদের সি-ভিজিল অ্যাপ্লিকেশনটি ভোটারদের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন, অর্থ বিতরণ এবং বা বিনামূল্য পণ্য সমগ্রিসহ অন্য যে কোন কিছু বিলি করার এমন অভিযোগ পাওয়ার ১০০ মিনিটের মধ্যে, কমিশনের আধিকারিকরা অপরাধের জায়গায় পৌঁছে যাবেন।” এই সব বিষয়গুলো কঠোর ভাবে দেখবে কমিশন
দেশে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করায় ভোট করানোর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে বলেছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সেই মতো ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল কমিশন। দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গেও বৈঠকে বসেছিলেন কমিশনের আধিকারিকরা। শেষ পর্যন্ত যাবতীয় সতর্কতা অবলম্বন করে ভোট করাতে তৈরি নির্বাচন কমিশন। এদিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র জানান, আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে যাতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্য ভোটমুখী সব রাজ্যেই পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে।
কোভিড আবহের মধ্যে যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে, তাই সমস্ত কোভিড বিধি মেনে নির্বাচন করানো হবে। প্রায় ১৬ শতাংশ বুথ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন সর্বোচ্চ ১,২৫০ জন। ভোট এবং ভোটারদের রক্ষা করাই লক্ষ্য কমিশনের। জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। করোনা আক্রান্তদের জন্য থাকবে পোস্টাল ব্যালট। আশি ঊর্ধ্ব, বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্যও থাকবে পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা। মহিলাদের জন্য মহিলা পরিচালিত ভোটকেন্দ্র থাকবে। অন্তত ১৬২০টি মহিলা পরিচালিত ভোটকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হবে। এক লক্ষেরও বেশি বুথে ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে ৯০০ পর্যবেক্ষক। কমিশন জানিয়েছে, প্রত্যেক দলকে তাদের প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য সবিস্তারে দলীয় ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। প্রার্থীদের কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে কি না তা–ও জানাতে হবে। করোনা আবহে ভার্চুয়াল এবং ডিজিটাল মাধ্যম নির্বাচনী প্রচারের উপর বেশি জোর দিতে হবে। থাকতে পারবেন।
করোনা বিধি মেনে প্রচারের জন্য প্রার্থীদের ভোটপ্রচারের খরচের সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা পিছু প্রচারে ৪০ লক্ষ টাকা করে খরচ করতে পারবেন প্রার্থীরা। মণিপুর এবং গোয়ায় এই সীমা হবে ৩৮ কোটি টাকা। সমস্ত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ইভিএমের পাশাপাশি ভিভিপ্যাটও ব্যবহার করা হবে। সংখ্যক ইভিএম এবং ভিভিপ্যাট নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছে। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হয়ে গেল। আদর্শ আচরণবিধির নির্দেশিকা কার্যকর বাস্তবে নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন একাধিক ব্যবস্থা করেছে। এই নির্দেশিকাগুলির কোনওরকম লঙ্ঘন দেখা গেলে তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র বলেছেন, ‘আমাদের সি–ভিজিল অ্যাপ্লিকেশনটি ভোটারদের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন, অর্থ বিতরণ এবং বা বিনামূল্য কিছু বিলি করার মত কোনও অভিযোগ পাওয়া গেলে, ১০০ মিনিটের মধ্যে, কমিশনের আধিকারিকরা অপরাধের জায়গায় পৌঁছে যাবেন।’ সবচেয়ে বড় কথা, সমস্ত নির্বাচনী আধিকারিক ও ভোটকর্মীদের ফ্রন্টলাইন কর্মী হিসাবে বিবেচনা করা হবে। ভোটের ডিউটিতে থাকা কর্মীরা দুটি করে ডোজ পাবেন। যরা যাঁরা প্রিকশন ডোজ পাওয়ার যোগ্য, তাদের সবাইকে প্রিকশন ডোজ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র। ভোটমুখী ৫ রাজ্যেই বাড়ানো হবে টিকাকরণের গতি। নির্বাচন কমিশনের দাবি, কোভিড সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সমস্ত ভোটকেন্দ্রে স্যানিটাইজার, মাস্ক এবং গ্লাভসের ব্যবহার করা হবে।