কংগ্রেসের ওয়ারকিং কমিটির  বৈঠকে সিদ্ধান্ত

প্রণব ভট্রাচার্য্য

রবিবার দিল্লিতে গভীর রাত পর্যন্ত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক চলার মঝে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী  পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বৈঠকে। তিনি বলেছিলেন, “দল যদি মনে করে আমরা তিনজনই পদত্যাগ করতে প্রস্তুত।” কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা সবাই তা  সরাসরি প্রত্যাখান করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত সকলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ”দলে বরাবরই গান্ধি পরিরের যথেষ্ট প্রভাব প্রতিপত্তি থাকলেও প্রায় তিন দশক ধরে  ওই পরিবারের কেউ প্রধানমন্ত্রী হননি, মন্ত্রী হননি, সরকারী কোন বড় পোস্ট আকড়ে থাকেনি, তার পরেও  নির্বাচনে ভরাডুবির দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল তারা, এমন ক্ষমতা নির্মোহ পরিবারের দর্শন অনুভব করা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ কংগ্রেসের বৃহত্তর ঐক্যের জন্য।’

কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে চলা ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক শেষে  রাতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,” কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীই আমাদের নেতৃত্ব দেবেন এবং  দলের সভানেত্রী হিসেবে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করবেন তিনি। আমরা সকলে তাঁর নেতৃত্বে বিশ্বাস করি এবং  তার নেতৃত্বের উপরই আমাদের অগাধ আস্থা রয়েছে।”

পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে কার্যত ভড়াডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। সেই লজ্জার হারের পর রবিবার বিকেলে বৈঠকে বসেছিল কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি। বৈঠক শুরুর আগে থেকেই জল্পনা ছড়িয়েছিল, হারের দায় নিজেদের কাধে নিয়ে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন গান্ধী পরিবারের তিন সদস্যই। এমনকী সোনিয়া গান্ধীর পরবর্তী মুখ হিসেবে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল ওয়াসনিকের নামও উঠে আসছিল। শোনা  যায়, এই মুকুল ওয়াসনিককেই নাকি সভাপতির পদে  চাইন ছিলেন জি-২৩(গ্রুপ) গোষ্ঠীর নেতারা। কিন্তু সূত্রের খবর,  এদিনের জরুরী বৈঠকে অন্যান্য নেতা-কর্মী সবাই তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে গান্ধিপরিবারেই যে তাদের আস্থা তা একযোগে জানায়। এসময় বৈঠকে  উপস্থিত জি-২৩ গোষ্ঠীর নেতারা  প্রায় শিথিল অবস্থানে ছিলেন। কংগ্রেসের গোয়ায় রাজ্যের ইনচার্জ জানিয়েছেন, “সোনিয়া গান্ধী দলের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন।

পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে হেরে যাওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির দায়িত্বে থাকা ইনচার্জরা নিজেদের রিপোর্ট জমা দিয়েছেন দলের অস্থায়ী সভানেত্রীর কাছে। বৈঠকের শুরুতেই পাঁচ রাজ্যের ভোট ও রিপোর্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলিতে  দল কীভাবে প্রস্তুতি নেব এবং আগামী দিনে দল কোন পথে এগোবে, সেই সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

এর পাশাপাশি সংসদের বাজেট অধিবেশনের পর দলের তরফে এক ‘চিন্তন শিবির’-র আয়োজন করা হবে। মূলত দলের সাংগঠনিক নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এই চিন্তন শিবিরের আয়োজন করা হবে সমস্ত রাজ্যের জেলায় জেলায়। এদিনের ওয়ার্কিং বৈঠকে ৫০ জনের বেশি শীর্ষ কংগ্রেস নেতা উপস্থিত ছিলেন, যা সদ্য ভোট হওয়া পাঁচ রাজ্য মিলিয়ে কংগ্রেসের সাংসদ-বিধায়কের সংখ্যাও এর থেকেও বেশি।

এদিকে আগামী দিনে দল কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে রাজ্যভিত্তিক কৌশল বানাতে হবে বলেও বৈঠকে জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী। প্রয়োজনে কোথাও একা, কোথাও জোট করে এগুতে হবে বলে জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী। অন্যদিকে সূত্রের খবর, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বৈঠকে জানিয়েছেন, “আমরা জানতাম যে ফলাফল আমাদের পক্ষে হবে না। তবে কঠোর পরিশ্রম করেছি, লড়াই করেছি। মানুষ আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারেনি। দলের সবাই মিলে আমারা আবার ঘুরে দাঁড়াবোই। আমরা মানুষের জন্য রাজপথে থাকবো।

উল্লেখ্য, বৈঠক শুরুর আগে গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট পরাজয় সম্পর্কে বলেছেন, “উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস ধর্মের নামে রাজনীতি করেনি। কোন মেরুকরণের রাজনীতি করেনি। বিজেপি ধর্মের নামে মেরুকরণের রাজনীতি করে। বাস্তবে, তাদের (বিজেপি) কাজ আগুন জ্বালানো, আমাদের কাজ আগুন নেভানো। রাহুল গান্ধী একমাত্র ব্যক্তি যে  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে  একাই লড়াই করছেন। আর মোদি প্রতিটি বক্তৃতায় রাহুল গান্ধীকে দিয়ে শুরু করেন এবং তাঁকে দিয়েই শেষ করেন।”