প্রণব ভট্রাচার্য্য

জলপাইগুড়ি,  ১৩ জানুয়ারী :  রাজ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে। বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে ময়নাগুড়ি ওভারব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়। রেল সূত্রে খবর বিকানের থেকে গুয়াহাটি যাওয়ার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ইঞ্জিনের পর থেকে দশটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। ঘটনায় হতাহত বহু যাত্রী। বেসরকারীভাবে এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে উদ্ধারকারী দল।এখন পর্যন্ত আহত তিন শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধরা করা হয়েছে বলে কুচবিহারের জেলাশাসক মৌমিতা গোদরা বসু জানিয়েছেন। তবে ঘটনার যে ছবি সামনে আসছে তাতে স্পষ্ট বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও সরকারিভাবে এখনও কোন তথ্য জানানো হয়নি। রেলের তরফে শুরু হয়েছে উদ্ধার কাজ। উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের পাশাপাশি আহতদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেছেন স্থানীয়রাও। জানা গিয়েছে, আহতদের উদ্ধার করে ময়নাগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল এবং জলপাইগুড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তবে সঠিক কি কারণে এই ট্রেন দুর্ঘটনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই বিষয়ে রেলের তরফে কোনও কিছু স্পষ্ট করা হয়নি।
স্থানীয় সুত্রের খবর, যে জায়গাতে এই ঘটনা ঘটেছে সেটি হল দোমোহনি এলাকা। বিকেল পাঁচটা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় মানুষজন জানাচ্ছেন, হঠাত করেই প্রবল একটি শব্দ শোনা যায়। আর সেই শব্দ শোনার পরেই রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থানীয় লোকজন । ঘটনাস্থলে এসে দেখেন ভয়ঙ্কর এই দৃশ্য। যেখানে বিকানের-গৌহাটি এক্সপ্রেসের একটি বগির উপর উঠে গিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি। শুধু তাই নয়, লাইন থেকে ছিটকে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বগি। ঘটনার পরেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ট্রেনে থাকা যাত্রীরা। অনেকেই অভিশপ্ত ট্রেন থেকে নেমে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। ট্রেনটির ৪ থেকে ৫টি বগি একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। তার জেরে হতাহতের বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
জানা যাচ্ছে, দুর্ঘটনার সময় ৫০ কিলোমিটার গতিবেগ ছিল ট্রেনটির। কিন্তু কীভাবে এই ঘটনা ঘটল? তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। রেলের চালক কিংবা সিগন্যালিংয়ে কোনও সমস্যা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে রলের উচ্চপদস্থ তদন্ত দল। তবে এই ঘটনার পর ওই লাইনে সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রেল চলাচল। শীতের সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি অন্ধকার নেমে আসার ফলে উদ্ধারকাজে রীতিমত বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলটিকে। যদিও বাড়তি আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পান তারা।

জানা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন দ্রুত উদ্ধার কাজ চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আধিকারিকদের দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম দিলীপ কুমার সিংহ জানিয়েছেন, কোভিডের কারণে ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা কম ছিল। ফলে হতাহতের সংখ্যা মারাত্মক জায়গায় পৌঁছবে না বলে আশাবাদী তিনি।’’
ময়নাগুড়িতে রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেছন তৃণমূল কংগ্রেজের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
রেল দুর্ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রিয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ। তিনি দুর্ঘটনায় মৃতদের জন্য ৫ লক্ষ, গুরুতর আহতদের জন্য ১ লক্ষ টাকা ও আহতদের জন্য ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
দুর্ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ।
আলিপুরদুয়ার জেলা থেকে ১২টি অ্যাম্বুলেন্স, ৩০ জন সিভিল ডিফেন্স কর্মীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে৷ বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং ফালাকাটা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে তৈরি রাখা হয়েছে৷ কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান জানিয়েছেন, জেলা স্বাস্থ্যদফতর থেকে ডাক্তার, নার্স, ১২টি অ্যাম্বুলেন্স-সহ ট্রমাকেয়ার অ্যাম্বুলেন্স, একাধিক মেডিক্যাল টিম সংগঠিত করে ময়নাগুড়িতে পাঠানো হয়েছে।
রেল সূত্রে খবর, দুর্ঘটনা কবলিত বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে ছিল ১২০০ জন যাত্রী।