প্রণব ভট্রাচার্য্য
এবারও রেকর্ড জয় পেয়ে উত্তরপ্রদেশে ফের সরকারে গড়তে চলেছেন যোগী আদিত্যনাথ। পাশাপাশি ভোটও বেড়েছে তাদের। তবে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত সমাজবাদী পার্টি হতাশ করেছে।
যোগী সরকারের এই জয়ের পেছনে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন উন্নয়ন কথা বলছে। সার্বিকভাবে পিছিয়ে পড়া ভোটারদের নিয়ে বিজেপির বিশেষ কৌশলের কারণে উত্তরপ্রদেশে একেবারে গেরুয়া ঝড় । এই মুহূর্তে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জয় লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মবিশ্বাস বহুলাংশে বাড়িয়ে দিল গেরুয়া শিবিরকে। এবারের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি উন্নয়নের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা ইস্যু নিয়েও প্রচারে নেমেছিল। যোগী আদিত্যনাথ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশে তাঁদের নির্বাচনী প্রচারের সময় ‘গুন্ডারাজ’ এবং আইনশৃঙ্খলার জন্য সমাজবাদী পার্টিকে নিশানা করেছিলেন। তাঁদের এই কৌশল এবার সফল বলে প্রমাণিত হল। অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টি, অনেক জনপ্রিয় ঘোষণা করলেও, তাদের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে নির্মিত ‘ইমেজ’ ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে। সমাজবাদী পার্টি রাষ্ট্রীয় লোকদল এবং অন্যান্য ছোট দলগুলির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। তবে ভোটের ফলাফলগুলি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এই কৌশলটি এসপির পক্ষে কাজ করেনি।
উত্তরপ্রদেশের ভোট গণনার প্রবণতা অনুযায়ী, বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বিজেপি ৪২ শতাংশেরও বেশি ভোট এবার পেতে চলেছে। এদিকে, সমাজবাদী পার্টির দশ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি পেলেও লাভের লাভ হয়নি। ২০১৭ নির্বাচনে, সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। যদিও তাতে কাজের কাজ হয়নি। উল্টে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় তাদের ৪৭টি আসন কমে গিয়েছিল।যদি আমরা ২০২২ সালের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকাই, তবে এটা স্পষ্ট যে, বিজেপি গত নির্বাচনের তুলনায় তার অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে।
গত ৩৭ বছরে যোগীই প্রথম ব্যক্তি যিনি উত্তরপ্রদেশে পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকার পর মুখ্যমন্ত্রিত্ব ধরে রাখতে পারলেন। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির হয়ে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ধরে রাখায় যোগীই প্রথম। সফলভাবে পাঁচ বছরের কোটা শেষ করায় তিনি তৃতীয়। তাঁর আগে আছেন এসপি-র অখিলেশ যাদব, এবং বসপা-র মায়াবতী।
আজ পর্যন্ত ওই রাজ্যে এসেছেন ২১ জন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে চন্দ্রভানু গুপ্তা, চৌধুরি চরণ সিং, নারায়ণ দত্ত তিওয়ারি, কল্যাণ সিং, মুলায়ম সিং যাদব এবং মায়াবতী একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। সেই দলে ঢুকলেন এবার যোগী আদিত্যনাথ।
ভোটের আগে প্রচারে তাদের হাতিয়াড় ছিল মেরুকরণ। কিন্তু ফল ঘোষণা হতেই আপাতত মেরুকরণ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখল বিজেপি। গোবলয়ের বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী সতীশ মাহানা সাফ জানিয়ে দিলেন, শুধু হিন্দু ভোটেই জেতেনি বিজেপি। জাত ধর্ম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ই বিজেপি–কে ভোট দিয়েছে। আর এর নেপথ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কৃতিত্ব।
সতীশ মাহানা বললেন, সংখ্যার দিক থেকে আমাদের ভোট বেড়েছে। তার কারণ যোগীজির নেতৃত্বের ওপর বিশ্বাস রেখেছে মানুষ। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রতিশ্রুতি রেখেছেন।
মুলায়েম যাদবের ছোট পুত্রবধু বিজেপি নেত্রী অপর্ণা যাদব বলেছেন, শ্বশুরমশাইয়ের নিজে হাতে তৈরি দল সমাজবাদী পার্টি এবারের নির্বাচনে পরাজিত হলো। ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুলায়ম যাদবের ছোট বউমা অপর্ণা যাদব। উত্তর প্রদেশে বিজেপি জেতার পর তিনি জানিয়েছেন, “হিন্দু-মুসলিম-শিখ-ইসাই সবার সঙ্গেই রয়েছে বিজেপি। উত্তর প্রদেশের মানুষ জাতপাত ও তোষণের রাজনীতিকে জবাব দিয়েছেন।
হাথরসে দলিত কিশোরীকে গণধর্ষণ। তার পর জিভ টেনে ছিঁড়ে নেওয়া। দিল্লি সীমান্তে এক বছর ধরে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের বিক্ষোভ। কোভিড আবহে গঙ্গায় করোনা রোগীর লাশ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া। লখিমপুরে কৃষকদের প্রতিবাদ মিছিল লক্ষ্য করে গাড়ি চালিয়ে কৃষক খুন। একের পর এক ভয়ঙ্কর ঘটনা দেখে শিউরে উঠেছিল দেশ। বিরোধীরা বলেছে এবারই বিজেপি শেষ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আর ফিরবে না বিজেপি। ভোটারদের একটা বড় অংশও মুখে অন্তত সে রকমই বলেছেন। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তারাই অন্য কথা বলেছেন। আর বলেছেন বলেই সমীকরণ উল্টে ফের উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় এল বিজেপি। আগের বারের থেকেও বেশি ভোট পেয়ে।
এখন পর্যন্ত যা গণনা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে ২৬৬টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে মোট আসন সংখ্যা ৪০৩। ম্যাজিক ফিগার ২০২। তা অনেক আগেই অতিক্রম করে গিয়েছে যোগীর দল। শুধু তাই নয়, ৪৪.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে তারা। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচন থেকে ৫ শতাংশ বেশি। আর এখানেই উল্টে যাচ্ছে অনেক সমীকরণ।
উত্তরাখন্ড
পাঁচ বছর পর ক্ষমতাবদলের ‘ট্রেন্ড’ ছিল উইত্তরাখন্ডে, সেই হিসেব এবার ক্ষমতায় আসার কথা ছিল কংগ্রেসের। সমীক্ষায় ত্রিশঙ্কু ফলাফলের ইঙ্গিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই রাজ্যে আস্থা রাখল বিজেপির উপরই। ২০ বছর আগে উত্তরাখণ্ডের জন্ম হওয়ার পর থেকে দেবভূমি কখনও টানা একটি দলে আস্থা রাখেনি। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে উত্তরাখণ্ডে। এবার বিজেপি সেই ঐতিহ্য পাল্টে দিল।
৭০ আসনের উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় বিজেপির ঝুলিতে ৪৮ আসন। সেখানে কংগ্রেস পেল ১৮ আসন। উত্তরপ্রদেশ ভেঙে তৈরি উত্তরাখণ্ডে বরাবরই উত্তরপ্রদেশের মতোই জাতপাতের রাজনীতি গুরুত্ব পেয়েছে। এই রাজ্যের জনবসতির ৫০ শতাংশই উচ্চবর্ণের। এঁদের অধিকাংশই বিজেপি সমর্থক। আর সেটাই বিজেপির জয়ের সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি। ২০১৪ এবং ২০১৯–এর লোকসভা ভোটে উত্তরাখণ্ডে বিজেপিই বেশি আসন জিতেছিল। টানা দু’বার উত্তরাখণ্ডে জিতলেও মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি হেরেছেন। গত ৫ বছরে তিনবার মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছিল বিজেপি। শেষতম ধামি। দেবভূমি বিজেপিতে আস্থা রাখলেও, ধামিতে আস্থা রাখতে পারেনি।
উত্তরাখণ্ডের ভোটে বাড়তি জোর দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতীয় সেনা বা ফৌজিদের অনেকেই উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা। তাই সেখানে ফৌজি আবেগ জোরালো। উত্তরাখণ্ডে বিজেপির এই জয়ে অবদান থাকল বাংলার এক সাংসদের। তিনি লকেট চট্টোপাধ্যায়। হুগলির সাংসদ ছিলেন উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের সহ–পর্যবেক্ষক। নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে তিনি চলে যান উত্তরাখণ্ডে। গোটা প্রচারপর্ব সেখানেই ছিলেন।
পাঞ্জাব
দেশের রাজধানীর পর পাঞ্জাব দখলও নিশ্চিত করে ফেলেছে আম আদমি পার্টি। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের পথে আম আদমি পার্টি (আপ)। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং কংগ্রেসের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা এই দুইয়ের কারণে এই বদল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও এর পেছনে আরও কিছু কারণকে দায়ী করা হচ্ছে। গত ৭০ বছরে শিরোমণি অকালি দল এবং কংগ্রেস পালা করে ক্ষমতায় থেকেছে পঞ্জাবে। কিন্তু দুই দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অপশসনের অভিযোগ উঠেছে। আগামীতে জাতীয় রাজনীতিতে আপের ভূমিকা নিয়েও বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।
আপ প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল পঞ্জাবে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বারবার নিজের দিল্লিতে তাঁর সরকারের কাজগুলি তুলে ধরেছিলেন। দিল্লিতে সরকারি শিক্ষাকেন্দ্রের উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্যে উন্নয়ন, সস্তায় বিদ্যুৎ ও জলের মত গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবার কথা তুলে ধরেছিলেন কেজরীবাল। পঞ্জাবে বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি এবং সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেকাংশেই বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে কেজরীবালের দিল্লি মডেল সহজেই গৃহীত হয়েছে।
আম আদমি পার্টি পঞ্জাবের মহিলা ও যুবদের বড় অংশের সমর্থন পেয়েছে। ভোট প্রচারের দুর্নীতিকে উপড়ে ফেলার বার্তা দিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। সেই কারণে যুব সমাজের একটা বড় অংশ কেজরীবালের এই প্রতিশ্রতিতে আকৃষ্ট হয়েছিল। একই রকমভাবে প্রত্যেক মাসে মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১ হাজার টাকা জমা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি আম আদমি পার্টি দিয়েছিল ভোটবাক্সে তারই প্রতিফলন হয়েছে।
পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী থেকে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যেকেই হয় হেরে গিয়েছেন ।পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নী কংগ্রেসের হয়ে দু’জায়গায় দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু দুই জায়গাতেই পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। অন্যদিকে পাঞ্জাব কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোত সিং সিধু দাঁড়িয়েছিলেন অমৃতসর পূর্ব থেকে। সেখানেও এগিয়ে গিয়েছে আম আদমি পার্টির প্রার্থী। কার্যত দেখা যাচ্ছে, পাঞ্জাবে কংগ্রেস একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এবং কংগ্রেসের এই হারের পেছনে বিশেষজ্ঞরা দলীয় অন্তর্কলহকেই দায়ী করেছেন। আপাতত পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে আপের হাতে। পাঞ্জাবের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন ভগবন্ত
গোয়া
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও অনেকটাই এগিয়ে বিজেপি। দরকার হলে পূর্বের জোট সঙ্গি‘ মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি’ ও নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়ে গোয়ায় যে সরকার গঠন করতে বদ্ধপরিকর পদ্ম শিবির, তা বুঝিয়ে দিলেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাবন্ত। তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে আঞ্চলিক দল ‘মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি’ ও নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গে নেবে বিজেপি। তৃণমূলের সঙ্গে নির্বাচন-পূর্ব জোটে রয়েছে ‘মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি’। তাই সেই দলকে জোটসঙ্গী করার যে বার্তা বিজেপি দিয়েছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
১৮ টার বেশি আসনে এগিয়ে বিজেপি। ১০ টির বেশি আসনে এগিয়ে কংগ্রেস। কয়েকটি আসনে এগিয়ে রয়েছে মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেসের জোট। ওই জোট কিং মেকার হতে পারে বলে অনুমান করেছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সেই জোট থেকেই ‘মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি’কে সঙ্গে নেওয়ার কথা বললেন প্রমোদ সাওয়ন্ত। ভালো ফলের কৃতিত্ব দলের কর্মীদেরই দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
একসময় বিজেপির সঙ্গী ছিলেন ‘মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি’। ২০১৯-এ গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙে ওই দলের। কিন্তু বুথ ফেরৎ সমীক্ষা সামনে আসার পর থেকেই নতুন করে জোটের ইঙ্গিত মিলেছে গেরুয়া শিবিরের তরফে। ফল প্রকাশের আগেই গোয়া বিজেপির দায়িত্বে থাকা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ দাবি করেন, বিজেপির স্বাভাবিক সঙ্গী এমজিপি। ২০১৭ তে বিজেপিকে গোয়ায় ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছিল এই দলই। কিন্তু মনোহর পারিকরের মৃত্যুর পরই বিজেপি হাত ছেড়ে দেয় তারা। দলের সুপ্রিমো সুধীন ধবলিকর জানিয়েছিলেন, আর কখনই তাঁরা বিজেপির সঙ্গে জোট গড়বেন না। তবে ফল প্রকাশের পর এমজিপি কী সিদ্ধান্ত নেয়, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।
মনিপুর
মণিপুর প্রত্যাশামতোই ধরে রাখল বিজেপি। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশ নিয়ে মানুষের উন্মাদনা চরমে থাকলেও উত্তর পূর্ব ভারতের যে একটি রাজ্যে এবার ভোট হয়েছিল, তার ওপরও বিশেষ নজর রেখেছিল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। মণিপুরের ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে এই পাহাড়ি রাজ্যের বেশিরভাগ নাগরিকই বিজেপির ওপর আস্থা রেখেছে। গতবার মণিপুর বিধানসভা নির্বাচনে কনরাড সাংমার ন্যাশানাল পিপলস পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি, তবে হঠাৎ করেই এনপিপি বিধায়করা সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার কথা জানিয়ছিলেন। পরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে তার সরকারকে আবার সমর্থন করতে রাজি হয়।
গতবারের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই এবারের ভোটে একা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং জানিয়েছিলেন, একার ক্ষমতায় মণিপুরের সরকার গঠন করবে বিজেপি। ভোটের ফলে বিজেপি সবথেকে বড় দল হিসেবে সামনে উঠে এসেছে। সন্ধে ৬ টা ৩০ মিনিট ৬০ আসনের মণিপুর বিধানসভায় ৩২ টি আসনে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ৭ টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। এনপিএফ ৬ টি, এনপিইপি ৯ টি ও অন্যান্যরা ৬ টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং ইতিমধ্যেই জিতে গিয়েছেন।
এবারের মণিপুর জয় বিজেপির জন্য এতটা সহজ ছিল না। গত বছর ডিসেম্বর মাসে মণিপুরে পাশ্ববর্তী নাগাল্যান্ডের মন জেলায় সেনাবাহিনীর গুলিতে ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। গ্রামবাসীদের মৃত্যুর পর নাগাল্যান্ড জুড়ে আফস্পা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠছিল। আফস্পার আঁচ পার্শ্ববর্তী নাগাল্যান্ডেও পড়েছিল। বিধানসভা ভোটের প্রচারে ক্ষমতায় ফিরলে কংগ্রেস মণিপুর থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিজেপির স্থানীয় নেতারা আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিকে সমর্থন করলেও তাদের পক্ষে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করাও সম্ভব ছিল না। তা সত্ত্বেও মণিপুরের সাধারণ মানুষ বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে রায় দিল।