নিজস্ব প্রতিবেদন
পুরভোটের আগে কলকাতায় ৩৮ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে পুলিশ। জানা গেছে, রবিবার কলকাতার আনন্দপুর এলাকার গুলশন কলোনি থেকে থেকে প্রথমে ২১ জন এবং পরে আরও ১৭ সন্দেহভাজন বাংলাদেশীকে(পুলিশের ভাস্যমতে) গ্রেফতার করা হয়েছে। মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে তাদের আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যোর ছড়িয়েছে এলাকায়। এরা সকলেই মফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ওই গুলশান কলোনীর একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ৩৮ জনের মধ্যে মাত্র তিনজনের কাছে এদেশে অবস্থানের জন্য বৈধ কাগজপত্র পাওয়া গেছে। বাকিদের কাছে প্যান অথবা আধার কার্ডসহ যে সব কাগজ পাওয়া গেছে তার সবই ভুয়া। এদের সবার বিরুদ্ধেই ৩৭০, ৪১৯, ৪২০ ধারার পাশাপাশি ১৪ ধারা (ফরেনার্স অ্যাক্টে) মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স সংবাদ-কে জানায়, রবিবার ও সোমবার আনন্দপুরস্থ গুলশন কলোনিতে তল্লাশি চালিয়ে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন বাংলাদেশীদের জেরা করে কলকাতা এসটিএফ তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। এসটিএফ সূত্র জানায়, মফিজুর রহমান দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এদের ভারতে নিয়ে আসে। ভারত থেকেই ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে কাজের কথা বলে বিদেশের বিভিন্ন দেশে পাঠায়। ওই কাজের জন্যই কলকাতাসহ বিভিন্ন এলাকায় একশ্রেণীর আস্তিত্বহীন লোকের কাছ থেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের জাল ভারতীয় ভোটার কার্ড,প্যান কার্ড, আধার কার্ড বানিয়ে নেয়, পরে ওই সমস্ত নথি দিয়ে পাসপোর্ট ভিসা বানিয়ে বিদেশে পাঠাত দালাল মফিজুর রহমান। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিসের এসটিএফের জঙ্গি দমন শাখা এদের জেরা করেছে। কলকাতা পুলিস ভুয়ো পাসপোর্ট, ভিসা জালিয়াতি মামলাতেও অভিযুক্ত করেছে ধৃতদের। মফিজুর-সহ ধৃতদের কোনও জঙ্গি যোগ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিস। বৈধ নথিপত্র ছাড়াই চোরাই পথে ভারতে ঢুকছে ওই ৩৮ বাংলাদেশি নাগরিক। এত বেশি সংখ্যাক বাংলাদেশি লোকের কলকাতায় ধরা পড়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে কলকাতা পুলিশ। কিভাবে তারা সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকলো, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে শুরু হয়েছে ।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, অবৈধ ভাবে আসা ওই ৩৮ বাংলাদেশীকে মাদ্রাসায় (লোকের সন্দেহ না হয়) লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ কলকাতায় পৌর ভোটের কাজে ব্যবহার করতেই এদের আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, বাম আমল থেকেই এই অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গারাও এখন এই রাজ্যে আশ্রয় নিয়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
কলকাতায় একসাথে ৩৮ জন বাংলাদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করার ব্যাপারে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে যোগা যোগ করা হলে উপ-হাইকমিশনারকে টেলিফোনে পাওয়া না গেলেও উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তা কাউন্সিলার (কন্স্যুলর) মো: বশির উদ্দিন সংবাদ-কে জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে আমরা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আটককৃত ব্যক্তিরা যদি বাংলাদেশের নাগরিক প্রমাণিত হয়, তবে কলকাতা উপ-হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে তাদের দেশে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হবে, এমনটাই জানালেন মো: বশির ।