বিশেষ প্রতিনিধি
কলকাতার এক নারীর সঙ্গে নগ্ন ভিডিও চ্যাট কান্ডে জড়িয়ে পড়া কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক-৩) মুহাম্মদ সানিউল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ সকালেই তাকে বদলি করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সহকারি সচিব মো: মাহমুদুল হক স্বাক্ষরিত এক বদলির আদেশে তাকে বলা হয়েছে, ‘আদিষ্ট হয়ে জানাচ্ছি যে আপনাকে সদর দপ্তর ঢাকায় বদলির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। অতএব, বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন, কলকাতাকে অবিলম্বে আপনার বর্তমান দায়িত্বভার ত্যাগ করে সদর দপ্তর ঢাকায় অবিলম্বে প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ও জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হল।’
জানা গেছে, কলকাতায় অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরেছিলেন কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের এ কর্মকর্তা। এরই এক পর্যায়ে সম্প্রতি ভারতীয় এক নারীর সঙ্গে তার হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও চ্যাট ফাঁস হয়। ভারতীয় এই নারীর নাম আলিশা মাহমুদ। এই নারী কলকাতার বাংলাদেশে উপ-হাইকমিশনের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে ভিডিওটি পাঠিয়ে দিলে তোলপাড় শুরু হয়। যেখানে দেখা যায়, কর্মকর্তা আপত্তিকর অবস্থায় থাকা ওই নারীর সঙ্গে অশ্লিল ভিডিও চ্যাট করছেন।
ঘটনাটি ফাঁস হয়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন ওই কর্মকর্তা। এক পর্যায়ে একটি পক্ষকে ধরে ভিডিও রিমুভ করতে সক্ষম হন। কিন্তু ততক্ষণে তা ছড়িয়ে পরে কলকাতা আর বাংলাদেশের অনেকের মাঝে। অনেকে ডাউনলোড করে পরিচিতজনের মাঝে শেয়ার করেন। সংবাদ প্রতিনিধির কাছেও এসেছে এমন ভিডিও। কিন্তু ভিডিও চ্যাটে স্পষ্টত দেখা য়ায় আপনাদের দু’জনের সন্মতিতেই এই অপকর্ম হচ্ছে, এম প্রশ্ন করা হলে সানিউল কোন জে ব্যাপারেকোন জবাব দিতে পারেননি।
তবে ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়ার পর দ্রুতই বাংলাদেশ পরারাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নজড়ে আসে বিষয়টি। কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনে হেড অব চেঞ্চুরী ( এইচ ও সি) শামীমা ইয়াসমীমন স্মৃতি জানিয়েছিলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এরই মধ্যে সাবেক কূটনীতিক আশরাফ উদ দৌলা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এমন ঘটনা রাষ্ট্রের জন্য বিব্রতকর। অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
জানা গেছে, গতকালই ওই কর্মকর্তাকে বলে দেয়া হয়েছিলো আজ সকালের মধ্যেই কোলকাতা ছেড়ে আসতে। ঢাকায় ফেরার পর ভিডিওর বিষয়ে তার সেলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। তবে কোলকাতা ছাড়ার আগে একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, ‘ ভিডিওকে সুপার এডিট করা।
প্রসঙ্গত: সানিউল কাদের ছয় মাস আগে কলকাতাস্থ উপ-হাইকমিশনে নতুন যোগদান করার পর উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের নির্দেশে একটি অবৈধ অর্থ লেন-দেন কেলেঙ্কারির সাথেও সম্পৃক্ত হন। জানা গেছে, বিষয়টি ছিল উপ-হাইকমিশনের ভিসা সংক্রান্ত একটি কাজের বরাত। ৯০ কোটি টাকার আয়ের জন্য মাত্র এক লক্ষ টাকার কাজ দরপত্র ছাড়াই মাত্র আট মাসের একটি অখ্যাত কোম্পানীকে বরাতটি দেয়া হয়। কাজের বরাদ্দ-র ওই চুক্তিপত্র সহ বিভিন্ন কাগজে হাইকমিশনারের সাথে যুগ্মসাক্ষর করেন সানিউল। জানায়ায়, উপ-হাইকমিশনের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত বা এইরকম যেকোন গুরুত্বপূর্ণ দলিল সম্পাদন, চুক্তিপত্রে নিয়ম আনুযায়ী উপ-হাইকমিশনারের সাথে যৌথ সাক্ষর করার কথা উপ-হাইকমিশনে দায়িত্বে থাকা হেড অব চেঞ্চুরী (এইচ ও সি)-র। কিন্তু এই নিয়ম মাণ্য না করে তড়িঘড়ি করে অজানা কারণে সানিউল কাদেরকে দিয়ে সাক্ষর করানো হয় ( দরপত্র আহবান না করা) ওই বরাত পত্রে। এই অনিয়মের ব্যাপারে জানার জন্য কলকাতাস্থ উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।