বিশেষ প্রতিনিধি, ভিওসি

 

ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। বহুমাত্রিক এই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে উপকৃত হবেন বাংলাদেশ ও ভারত-উভয় দেশের নাগরিকরা। পদ্মা সেতুতে সড়কের পাশাপাশি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় ভারতের সেভেন সিস্টার্সের নাগরিকরা ত্রিপুরা থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতা যেতে পারবেন মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘন্টায়। এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। একইসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, “চিন্তার বিষয় হল, পদ্মা সেতুর কাজ যাতে সম্পন্ন না হয় সে জন্য বিএনপি-জামাত-সহ পাকিস্তানি ভাবধারার মানুষজন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তাঁরা বাংলাদেশকে ‘তালিবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। বিভিন্ন ধরণের মিথ্যে প্রচার করছে চক্রটি।” তিনি বলেন, “পাক-প্রেমীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে ভারত ও বাংলাদেশ দু’দেশকেই সজাগ থাকতে হবে।”

খুব সম্প্রতি নদীতে অতিরিক্ত জলস্রোতের কারণে পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে বারবার ফেরির ধাক্কা লেগেছে।  এই ঘটনায়  পিলালের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বিস্ময়ের বিষয়, গত ৩১ আগস্ট সেতুর স্পানের সঙ্গে য়ান্ত্রিক-ফেরির মাস্তুলের ধাক্কা লাগার ঘটনাটিকে ‘ভারতের ষড়যন্ত্র’ বলে অপ-প্রচার করছে পাক-প্রেমীরা। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর পিলারের সঙ্গে ফেরির ধাক্কা লাগা ও এই সেতু চালু হলে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকের কতটা উপকৃত হবেন সে বিষয়ে বাংলাদেশের রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতার নিউজ পোর্টাল ‘ভয়েজ অফ ক্যালকাটা’-র বাংলাদেশস্থ বিশেষ প্রতিনিধি। আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির পাঠানো রেলপথ মন্ত্রীর সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি নিম্নে বিবৃত হলোঃ

ভিওসি : পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকরা কতটা উপকৃত হবেন

রেলপথ মন্ত্রী : এখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে বাংলাদেশের দর্শনা, ভারতের গেদে হয়ে কলকাতা পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু, পদ্মা রেলসেতু যোগাযোগ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে ভাঙা, বেনাপোল ও পশ্চিমবঙ্গের হরিদাসপুর সীমান্তে মোট ২৫১ কিলোমিটার পথ যেতে ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার বেশি সময় লাগার কথা নয়। এর মধ্যে বেনাপোলে ইঞ্জিন পরিবর্তন হবে। তবে কাস্টম হবে আগের মতোই ঢাকা ও কলকাতা স্টেশনে। আগরতলা স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার। তাই ত্রিপুরার মানুষের জন্য কলকাতা যেতে ৫ থেকে ৬ ঘন্টার বেশি লাগার কথা নয়। ভারতের সঙ্গে মোট ৯টি রেলওয়ে ক্রস বর্ডার রয়েছে। যার সবগুলি চালু হলে বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তণ আসবে। ইউরোপের ন্যায় বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলা অথবা অন্য কোনও রাজ্যে চলাচল করা যাবে ট্রেনে। যা পর্যাক্রমে মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াও সম্প্রসারণ করারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

ভিওসি : পদ্মা সেতুর পিলার ও স্পানে ফেরির ধাক্কা লাগার সঙ্গে ভারতকে জড়ানোর বিষয়ে আপনার কী অভিমত?

রেলপথ মন্ত্রী : বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-সহ (জাসদ) স্বাধীনতা বিরোধীরা অপপ্রচার করেছে বাংলাদেশ থেকে সব নিয়ে গেল ভারত। এখন বিএনপি-জামাত-সহ পাকিস্তানি ভাবধারার মানুষেরা নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। তারা বাংলাদেশকে তালিবানি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। কাবুল দখলের পর থেকে তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ভারতে বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে বিভিন্ন ধরণের মিথ্য প্রচার করছে। রেলপথ মন্ত্রী বলেন, “মনে রাখতে হবে ভারত-বাংলাদেশের রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। তাই পাক-প্রেমীদের ষড়যন্ত্রের ব্যপারে আমাদের দু’দেশকেই সজাগ থাকতে হবে।”

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোহর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। সেতুটির সড়ক যোগাযোগ ২০২২ সালের ২৬ মার্চ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেতু সংশ্লিষ্টরা। তবে, পদ্মা সেতু রেল যোগাযোগ প্রকল্পের কাজ দেরিতে শুরু হয়। ফলে রেল যোগাযোগের প্রথম অংশের কাজ ২০২২ সালের জুলাই মাসে শেষ হলেও, পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

ভিওসি-২