এ রহিম, বাংলাদেশ থেকে,
শারদীয় দুর্গাউৎসবকে সামনে রেখে বেনাপোল ও পেট্টাপোল সীমান্তে যাত্রী হযরানি এখন সব সীমা ছা’ড়িয়ে চরমে পৌচেছে। বিশেষ করে ভারতের পেট্রাপোল সিমান্তে ইমিগ্রেসনে যাত্রী হয়রাণীর কাহিণি খবরের কাগজে গাদা গাদা লিখেও নেই এর কোন ডেভেলপমেন্ট। পেট্রাপোল ইমিগ্রেসনের ডিউটি কর্মকর্তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট যাত্রীদের সাথে রীতিমত গরু ছাগলের মত আচরণ করে থাকে। কিছুদিন আগে তাদের এই অনিয়মের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে নড়ে চরে বসে তারা। কয়েকদিন পর আবার যেই-সেই। ওপরওয়ালাদের কোন খবরদারিও নেই তাই ক্ষেত্রে তাই তারা অপ্রতিরোধ্য।
ভারতের পেট্রাপোল সিমান্তে ইমিগ্রেসন একজন যাত্রীর ইমিগ্রেসনে যে পরিমান সময় লাগায় কর্তব্যরত ডেক্স অফিসাররা তাতে দিল্লি ঘুরে আসা যায়। তারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট যাত্রীদের মনে আব্দুল মার্ক ও গরু ছাগল। ভারতের পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেসনের এই চেহারা তথা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিশ্বের কোন দেশের ইমিগ্রেসনে এই রকম অমানবিক হয়না। প্রত্যেকদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ইমিগ্রেসন খোলা থাকলেও রাত ১০টায়-ও ইমিগ্রেসন শেষ করতে পারেনা বাংলাদেশী যাত্রীরা। পাসপোর্ট হাতে নিয়ে ইমিগ্রেসন টেবিলের অদূরবর্তী দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে অসুস্থ্ হয়ে পড়ছেন অনেকে। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য কোন সুবিধা নেই পেট্রাপোল ইমিগ্রেসনে। তাদের জন্য নেই কোন আলাদা ডেক্সের ব্যবস্থা। বয়স্করা বিরাট লাইনের ঘাপলায় পড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অহরহ। কতিপয় কাস্টম ও ইমিগ্রে\সন সদস্যদের বিরুদ্ধে উঠেছে অসাদাচারণের অভিযোগও। তাদের কাছে হযরাণী ও লাঞ্চিত হতে হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রীদের কপালে দুর্ভোগ আর ভোগান্তি যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছেনি।
এদিকে বেনাপোল ইমগ্রেশন কস্টম ও স্বাস্থ্য বিভাগের কতিপয় অসাধু সদস্যদের বিরুদ্ধে উৎকোচ গ্রহণের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও আমলে নিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। ফলে যাত্রীসেবা ব্যাহত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার নামে থাকলেও মিলছেনা সেবা। সকালে যাত্রীরা ব্যাবহার করতে পারেননা টার্মিনালের সুযোগ সুবিধা। ফলে ফাকা মাঠে সড়কের উপর থাকতে হয় দাড়িয়ে। টযলেট ও বিশ্রামের কোন সুযোগ নেই এখানে। ভোর থেকে যাত্রীরা প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে দাড়িয়ে থাকলেও খোলা হয়না গেট। করা হয় হয়রাণী, লাঞ্চিত হন নারী শিশু বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষেরা। প্যাসেঞ্জার ট্যাক্স কাটেন যাত্রীরা। তবে ভবন যেন যাত্রীদের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও অসহযোগিতাকে দায়ী করছে ভুক্তভোগীরা। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, বিমান বন্দরের ন্যায় সযোগ সুবিধা দিতে সরকার আধুনিক মানের টার্মিনাল নির্মান করেছে বেনাপোলে। তবে কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা একাধিক স্থলে দীর্ঘদিন কর্মরত ও নগন নারায়নের কারনে যাত্রী সেবা পাচ্ছেনা ভুক্তভোগীরা। ভারতের অংশে ধীরগতি যাত্রীদের মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাড়িযেছে। অনিয়ম ও দুনীতি যেন এখানে নীয়মে পরিণত হয়েছে। এসব বিষয় বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানালেও ফল হয়নি। পেট্টাপোল সিমান্তে ইমিগ্রেশনে ডেক্স কর্মীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও জনবল সংকটের কারণে তা ব্যহত হচ্ছে জানিয়েছেন বেড়েছে কিছুটা সফল পাবে যাত্রী।
সংবাদদাতার বক্তব্য, বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের উল্টো দিক ভারতের পেট্রাপোল। এই জায়গাটা দিয়ে ভারতে ঢুকতে গেলে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভয়ানক যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে। বেনাপোল ইমিগ্রেশনে যাত্রীর কাজ সারতে ২/৩মিনিট লাগলেও পেট্রাপোলে ইমিগ্রেশনে লাগে ৫/৭মিনিট। অনেককে লেগে যায় আধাঘন্টাও। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের। রোগী শিশু বৃদ্ধ আন্তসত্ত্বা মহিলা বা বয়স্ক মানুষেরও রেহাই মিলছেনা। নেই ছাউনি,বসার জায়গা,টয়লেটের ব্যবস্থা। আশপাশে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাউন্টারে টয়লেট থাকলেও যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, লাইন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে ভারত যাতায়াতকারী বাংলাদেশের যাত্রীদের। তবে ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়,প্রতিদিনের চিত্র।ফলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারত-বাংলাদেশের যাতায়াতকারী যাত্রীরা। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে চরম নাকাল হতে হচ্ছে তাদের। সময়মতো ট্রেন-বাস পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চিকিৎসকের অ্যাপয়েনমেন্ট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। বাতিল হয়ে যাচ্ছে বিমানের টিকিটও।
সঙ্গে রয়েছে অফিসারদের উৎপাত। টিনের বাক্সে টাকা না দিলে পার হওয়া কষ্টকর। ল্যাগেজ ও ব্যাগের ওজন বেশি হলে ৫০০থেকে ১০০০ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত পারাপারের কোনো সুযোগ নেই। ইমিগ্রেশনে ধীরগতিতে ভোগান্তির মাত্রা বাড়ছে। কোন কিছুই বলতে চাননা কর্তাবাবুরা। কর্মচারী মনে করেন যাত্রীদের। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা খোশগল্পে মেতে থাকেন প্রায় সময়। পাসপোর্ট আটকে মোবাইলে কথা বলেন দীর্ঘক্ষণ। ফলে যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ইমমশিম খেতে হয় ইমিগ্রেশন কর্মীদের।
গোটা বিষয়টি নিয়ে পেট্রাপোল এক্সপোর্টার ইমিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী কেন্দ্রগুলোর কর্মীরাও হন ক্ষুব্ধ। এভাবে চলতে থাকলে যাত্রীর সংখ্যা ও পেট্রাপোল সীমান্তের গুরুত্ব কমবে।ব্যবসায়ী নির্ভরশীল, তারাও পথে বসতে বাধ্য হবেন। বারবার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে বলেও ফল পায়নি ভুক্তভোগীরা।
পেট্রাপোল এক্সপোর্টার অ্যান্ড ইমপোর্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে পাসপোর্টে যাতায়াত করা যাত্রীদের যে কী ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তা ভাষায় বর্ণনার নয়। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে লোকবল কম। ফলে কম কর্মী,অফিসার দিয়ে বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে পরিষেবা দিতে গিয়ে কার্যত নাকানি-চুবানি খেতে হচ্ছে। দুপার ইমিগ্রেশন প্রবেশকালে মেইন সড়কে ও টার্মিনালে পাসপোর্ট চেক করতে৮/১০ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে,প্রায়ঘটে সার্ভারের সমস্যা থাকেকাজ বন্ধ। বিষয়টি বহুবার জানালেও্র প্রতিকার হয়নি।
এ ব্যাপারে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পেট্রাপোল বন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ ওপাশের ব্যাপার। বেনাপোল বন্দরে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করছেন। অল্পসময়ের মধ্যেই যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে বন্দর উপ পরিচালক আব্দুল জলিল জানান ভোরে ব্যাংক খোলেনা ফলে যাত্রীদের ভিতরে প্রবেশে সমস্যা হয়। পোর্ট ট্যাক্স না কেটে প্রবেশে সমস্যায় হচ্ছে। তবে যাত্রী সেবায় আন্তরিক বন্দর কর্তৃপক্ষ। দালাল মুক্ত পরিবেশে যাত্রী প্রবেশ ও ট্রলি সিষ্টেম চালু করা হয়েছে।