এম এ রহিম, বেনাপোল থেকে
স্বাধীনতা পরবর্তীতে বেনাপোল ও পেট্টাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেড়েছে আমদানি রফতানি। হয়েছে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এরই মধ্যে বেড়েছে জনবল ও নিরাপত্তা। বানিজ্যকে আরো সম্প্রসারণ করতে যশোর বেনাপোল মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নতি করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তবে কতিপয় অসাধু কাস্টম ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের কারণে গত ৩ বছর ধরে রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে।
কাস্টম সূত্রে জানায়. চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৮মাসে এ স্থল’বন্দর দিয়ে কাস্টমের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। সেখানে আদায় করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৮১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই ৮ মাসে পণ্য আমদানি কমেছে এক লাখ এক হাজার ৯৪১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন। আগের অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই থেকে ফেরুয়ারি) আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭১৯ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেরুয়ারি) মাসে আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৮ দশমিক দশমিক ৫ মেট্রিক টন।

বেনাপোল কাস্টম ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে খাদ্যপণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে ব্যাংক এলসি খুলছেনা। এতে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারছেনা। এছাড়াও নানা অনিয়ম ও হয়রানির কারণে রাজস্ব আদায় কমে যাচ্ছ বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এসব নানা কারণে গত ১০ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে আরো জানা গেল অর্থবছরে (২০২১-২২) বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছিল। অথচ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সেখানে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭১৯ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন। আর চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৮ মেট্রিক টন। আমদানি কম হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৯৪১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন। যেকারণে রাজস্ব আদায়ও কম হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে। ২০১৯-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক টণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয় ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ মেট্রিক টন ।
একাধিক আমদানিকারক জানান, কাস্টমসের নানা হয়রানি আর বন্দর ব্যবস্থা পণায় অনিয়মনের কারণে অনেক ব্যবসায়ী বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা ও সরকার।
বাংলাদেশ ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান ও বেনাপোলে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাবক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি ঘাপলাবাজি পণ্যজটসহ নানান বিড়ম্বনার কারণে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে কম। পণ্য ও জানজট বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যাবসয়িরা ফলে পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন তারা। তাদের অভিমত, জায়গা সম্প্রসারণসহ দ্রুত পরীক্ষণনও পণ্য খালাসের সুযোগ সৃষ্টি হলে বাড়বে রাজস্ব এর সাথে বানিজ্যেও গতি ফিরবে । পাশাপাশি সৃস্টি হবে অনেক কর্মসংস্থানেরও।
বেনাপোল আমদানি রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মহাসিন মিলন ও আমদানিকারক প্রতিনিধি জাহিদ হোসেন বলেন, মোটর পার্টস আমদানি করে তা সারাদেশে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে যশোরের কোন ব্যাংক এলসি খুলছেনা। যে কারণে পণ্য আমদানি করতে না পারার ব্যবসায়িরা লোকসানে পড়ছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান জানান যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বেনাপোল দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে সরকার এলসিতে শতভাগ মার্জিন শর্ত দিয়েছে। আবার ব্যাংকগুলো ডলার সংকট দেখিয়ে এলসি খুলছেনা। যেকারণে চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে আমদানি কমে গেছে। আর আমদানি কমলে রাজস্বও কম আসবে এটাই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে সরকার এগিয়ে না আসলে ভবিষ্যতে এই লোকসানের পরিমাণ আশঙ্কাজনকহারে কমতে থাকবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, সরকার এলসি করতে শতভাগ মার্জিন দেবার নিয়ম করেছে। গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো এলসি খুলছেনা। এতে আমদানির সাথে জড়িত হাজার হাজার ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। আমদানিকারকরা চরম বেকায়দায় পড়েছে। বাণিজ্য ভালো নেই, তার উপর পণ্য আমদানি করতে না পারায় আমদানির সাথে জড়িতরা আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।