বাংলাদেশ থেকে এম এ রহিম
রাত পোহালেই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। তার একদিন আগে দুর্বৃত্তরা রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস (৭৯৫) ট্রেনে অগুন লাগিয়ে দেয়। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে আরও বেশ কয়েকজন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্নে নেওয়া হয়। দগ্ধরা হলেন- আসিফ মো খান (৩০), ডা. কৌশিক বিশ্বাস (৩২), নাফিস আলম (২২), মাসুদ রানা (৩১), ডেইজি আক্তার রত্না (৪০), রিহান (৬), মো ইকবাল (৪৮) ও দিহান (১১)।তাদের সবাইকে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম।৫ জানুয়ারি (শুক্রবার) রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ঢ়াকাগমী বেনপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজধানীর গোপীবাগে পৌছালে দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীরা ট্রেনটিতেআগুন লাগায়। এ সময় যাত্রীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হলে তারা দিক-বিদিক ছোটা-ছুটি করে বাইরে বেরোনের চেষ্টা করে। অনেকে বেরোতে পারলেও চারজন দগ্ধ হয়ে মারা যায় এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়।সাথে সাথে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া এ আগুনে চারজন নিহত হয়েছেন বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতি
এদিকে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ৬ জানুয়ারী (শনিবার) বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রেসনোট জারী করে জানান, এই মর্মান্তিক ঘটনা মানবতার বিরুদ্ধে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
বাংলাদেশের জনগণ যখন একটি উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে প্রস্তুতি নিচ্ছে – তখন ৫ জানুয়ারী, ২০২৪-র সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগের একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটায়, যখন জনগণের রেল সংযোগ ও অগ্রগতির প্রতীক বেনাপোল এক্সপ্রেসকে ইচ্ছাকৃতভাবে তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে গোপীবাগ কাঁচাবাজার এলাকায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার পথে সংঘটিত এই ইচ্ছাকৃত ও জঘন্য কর্মকাণ্ডে দুই (০২) শিশুসহ চার (০৪) জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এই নিন্দনীয় ঘটনা, নিঃসন্দেহে যারা বিদ্বেষপূর্ণ অভিপ্রায়ে সংঘটিত হয়েছে, তা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একেবারে হৃদয়ে আঘাত করে। এই ট্র্যাজেডির সময়,৭ জানুয়ারী-র জন্য নির্ধারিত নির্বাচনের ঠিক এক দিন আগে, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উত্সব, নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তাকে বাধা দেওয়ার পরম অভিপ্রায় দেখায়। এটি গণতন্ত্রের প্রতি অবমাননা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর আক্রমণ এবং আমাদের নাগরিকদের অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।
একটি ট্রেনে আগুন দেওয়ার এই ইচ্ছাকৃত কাজ, যেখানে নিরপরাধ যাত্রীরা অকল্পনীয় আতঙ্কের শিকার হয়েছিল এবং মানুষের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ক্ষমার অযোগ্য দৃশ্য সহ্য করতে বাধ্য হয়েছিল, এটি একটি সম্পূর্ণ জঘন্য কাজ। জনসাধারণের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করার এই নির্মম প্রচেষ্টা আমাদের গণতন্ত্রের চেতনা এবং আসন্ন নির্বাচনে আমাদের নাগরিকদের ঊৎসাহি অংশগ্রহণের অবমাননা।
ট্রেনে আগুন লাগানোর এই কাজ, ভিতরে মানুষ পুড়ছে সহিংসতার প্যাটার্নের বৈশিষ্ট্য যা আমরা আগেও প্রত্যক্ষ করেছি। এটি আমাদের সমগ্র সমাজের বিবেককে হতবাক করেছে – এবং প্রকৃতপক্ষে – সমগ্র বিশ্বের। এই জঘন্য অপরাধে জড়িত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে আমরা কোন কসরত রাখব না। প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা হবে এবং দেশের আইন অনুযায়ী দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে।
ছবি : সোহরাব আলম