এম এ রহিম.বাংলাদেশ:-
আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল-পেট্টাপোল দু’দেশের স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে ৪ থেকে ৫শ আমদানি রফতানি বাহি ট্রাক ও ৫ থেকে ৭ হাজার পাসপোর্ট যাত্রী। চিকিৎসা ভ্রমণ ব্যাবসা চাকুরী শিক্ষাসহ বিভিন্ন কাজে এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করে যাত্রীরা। ঈদের আগে বাড়ে অসম্ভব রকম যাত্রী চাপ। আর এ সময়ে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও অন্যান্য সদস্যদের যোগ সাজসে অবাধে চলে ল্যাগেজ ব্যাবসা। শাড়ী-থ্রীপিস, কসমেটিকস, মদ, গাজা ফেনসিডিল, স্বর্ন , অবৈধ অস্ত্রসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত ঔষধ পারাপার হচ্ছে নির্বিঘ্নে। মাঝে মধ্যে আমদানি রফতানি পণ্যবাহি ট্রাকের মধ্যেও মিলছে অস্ত্র, স্বর্ন ও বড় মাদকের চালান। ফলে বেনাপোল-পেট্টাপোল ইমিগ্রেশন এলাকা যেন এখন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে।

কিছু অসাধু কাস্টমস সসদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানাবিধ উৎকোচ বানিজ্যের অভিযোগ। অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে চেকপোস্ট এলাকা।কুলির আড়ালে চলছে মাদক ও অবৈধ পণ্য পাচারের উৎসব। অবৈধ উপায়ে লাখ লাখ টাকা ও গাড়িবাড়ির মালিক হচ্ছেন তারা। বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় হাজার হাজার টাকা। সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে দূর-দুরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা। এক শ্রেণীর প্রশাসনের সহাতায় পোষাক পড়া ও সিভিলে যাত্রীদের কাছ থেকে গলা কাটা ব্যাবসা শুরু করেছে প্রভাবশালী এই চক্রটি। জাল ট্রাভেল ট্যাক্স ও করোনা সার্টিফিকেটে যাত্রীপারাপারেও গড়ে উঠেছে নতুন অভিনব সিন্ডিকেট। সম্প্রতি দু দফায় জাল ট্রাভেল ট্যাক্সসহ বাংলাদেশ ও ভারতীয় ৭ নাগরিককে আটক করে কাস্টম। এখানে একদিকে বৈধ পথে য়যেমন বেড়েছে অবৈধ কারবারও তেমন বেড়েছে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি। সীমান্ত এলাকার ১০০ গজের মধ্যে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক ভারতীয় পণ্যের দোকান, চলছে রমরমা ব্যাবসা। তবে পোর্ট থানা পুলিশ মাঝে মধ্যে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গেলেও ইমিগ্রেশন ও কাস্টম কর্তৃপক্ষ জেগে ঘুমাচ্ছেন। গণমাধ্যম কর্মিদের নিয়ন্ত্রনে মিশন বাস্তবায়নে নেমেছেন তারা।

বছরের পর বছর ধরে একই স্থানে কতিপর কাস্টম সদস্য কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন বকশিষের নামে ঘুষ বানিজ্য। ঘুষের টাকা নিয়ে এক কাস্টম কর্মকর্তা আটকের পর বন্দর নানান আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকা থেকে এক কুলিকে আটক করেছে বিজিবি। তার উদ্ধার করেছে ফেনসিডিল ও বহণকরা ল্যাগেজ ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে।
যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটলিয়নের উপ অধিনায়ক মেজর সেলিম উদ জ্জোহা জানান, গত ২৯ মার্চ বেনাপোল পোর্ট থানাধীন সাদিপুর গ্রামস্থ চৌধুরী মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ১ জন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত মাদক ও চোরাচালান মালামাল আটকের নিমিত্তে অভিযান চলমান রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চৌকষ টহলদল বিশেষ তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে। চৌধুরী মার্কেটের একটি ঘর থেকে ৬ টি ল্যাগেজ তল্লাশি করে ১ টি ল্যাগেজের মধ্য থাকা ৫০ বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিলসহ মোঃ হারুন অর রশিদ(৩২)কে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে অবৈধভাবে চোরাচালানী মালামাল আনা নেওয়ার বিষয়ে ও সিন্ডিকেট পরিচালনার কথা স্বিকার করেছে। কাস্টমস এবং বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা প্রতিদিন গভীর রাতে বেশ কিছু অবৈধ মালামাল বন্দর এলাকা দিয়ে চোরাই পথে এনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় পাচার করে থাকে। অভিযুক্ত মোঃ হারুন গ্রেফতার হলেও এই সিন্ডিকেট ব্যবসার সাথে জড়িত চক্রের সহযোগীরা পলাতক রয়েছে। উক্ত সিন্ডিকেট দলের সদস্যদেরকে ধরার জন্য বিজিবি তৎপর রয়েছে। মাদকদ্রব্যসহ আসামীকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব বলেন যাত্রী সেবাই কাজ করছেন তারা কোন অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বেনাপোল কাষ্টম যুগ্ন কমিশনার আব্দুর রশিদ জানান কাস্টম সজাগ ও সতর্ক রয়েছে শুল্ক গোয়েন্দার নজরদারী বৃদ্ধির ফলে কয়েকটি স্বর্ন, কসমেটিকস ও বস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্যের চালান আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া ভ্রমণ করের কাগজসহ ৭ যাত্রীকে প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদের জন্য আটক করা হয়। এই সংক্রান্ত একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। কোন অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে জানান তিনি।
পোর্ট থানার ওসি কামাল হোসেন ভুইয়া জানান বর্তমানে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকা দাদাল মুক্ত করতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অনিয়ম রোধে কাজ করছেন তারা। তবে আগের থেকে পরিবেশ অনেকটা ভালোর দিকে বলে জানান তিনি। বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান ওসি কামাল হোসেন ভুইয়া।