ভিওসি  রিপোর্ট

 

পূজোর আগেই নির্বাচন হবে। তারিখও ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ৩০ সেপ্টেম্বর হবে  ভবানীপুরে উপনির্বাচন। অন্য দুটি কেন্দ্র মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর নতুন করে ভোট হবে। ওই ৩ কেন্দ্রেই ভোট গণনা হবে ৩ অক্টোবর। ওইদিনই ফলাফল ঘোষণা হবে।  তিনটি আসনেই  মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর।  মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর। কেন্দ্রগুলোতে কোভিড বিধি মেনেই ভোট প্রচার করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।  রাজ্যে গোসাবা, খড়দা, শান্তিপুর, দিনহাটা-সহ ৫ কেন্দ্রে উপনির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, শুধুমাত্র ভবানীপুরেই উপনির্বাচন হচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর।

রাজ্যের মুখ্যসচিব লিখিত বিবৃতি জারি করে শনিবার এই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে। কোভিড পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।  রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি এই ভোটকেন্দ্রগুলোর উপর তেমন  প্রভাব পড়েনি। তাই রাজ্য নির্বাচন কমিশন  নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। রাজ্যের কোনও মন্ত্রী ৬ মাসের মধ্যে ভোটে জিতে না আসতে পারলে তৈরি হবে সাংবিধানিক সঙ্কট। সংবিধানের ১৬৪(৪) ধারার কথা বলে এই উদাহরণ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা মেনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিশেষ অনুরোধে ভবানীপুরে ভোটের সিদ্ধান্ত। এমনটাই জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব।

প্রসঙ্গত: ২০২১-র বিধানসভা  ভোটের আগে দুজন প্রার্থী মৃত্যু হওয়ায় সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে ভোট হয়নি। আর ভবানীপুরে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ইস্তফা দেওয়ায় সেই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। শোভনদেব চ্যাটার্জির ছেড়ে দেওয়া আসন ভবানীপুরে প্রার্থী হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তাই মূলত: ভবানীপুর  ভোট কেন্দ্রের দিকে‌ই তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল। এই আসন থেকে আগে দুবার জিতেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১-তে তৃণমূল বামফ্রন্টকে সরিয়ে ক্ষমতা দখলের পর মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।এরপর ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচন থেকে এই আসনে জয়ী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উল্লেখ্য, ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে  ভবাননিপুর আসন ছেড়ে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু ভোটে না জিতেও মমতা বন্দোপাধ্যায়কেই মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করে তৃনমূল কংগ্রেস পারিষদ। সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ আগামী নভেম্বরের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিধানসভায় জয়ী হয়ে আসতে হবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এই আসনে কাকে প্রার্থী করতে চলেছে? থাকছে কি কোনও চমক?

তবে ভবানিপুর আসনের প্রার্থী নিয়ে বেশ কয়েকটি হিসাব কাজ করছে বিজেপির অন্দরে। আর তাই প্রার্থীপদে যাঁদের নাম ঘোরাফেরা করছে তাঁদের মধ্যে যার নাম বেশী শোনা যাচ্ছে তিনি হলেন দীনেশ ত্রিবেদী। বিজেপি সূত্র বলছে, দীনেশ ত্রিবেদীকে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। কারণ, ভবানিপুর আসনের একটা বড় অংশে রয়েছে অবাঙালি ভোট। তা ছাড়া একটা বড় অংশের গুজরাটি ভোটও রয়েছে এই আসনে। সেই জন্য দীনেশ ত্রিবেদীর নাম ভাবছে বিজেপি শিবির। পাশাপাশি মমতার বিরুদ্ধে যথেষ্ট যোগ্য প্রার্থী তিনি। যদিও এর আগে তৃণমূলে ছিলেন দীনেশ। চলতি বছরে ভোটের আগে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। এরপর বিজেপিতে যোগ দেন তিনি।

এ ছাড়া বিজেপির এক বর্ষিয়ান বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন গভর্নর  তথাগত রায়কেও ভবানীপুরে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হতে পারে। পাশাপাশি একুশের বিধানসভায় পরাজিত প্রার্থী বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব ও সিনে আভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের নামও ঘোরা-ফেরা করছে। বিজেপি সুত্রে খবর, রুদ্রনীল ঘোষকে প্রার্থী করার ব্যাপারে দিলীপ ঘোষও ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তিনি যেহেতু সেখানের ২০২১-র নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন, তাই তার নাম স্বাভাবিকভাবেই বিবেচনায় থাকতে পারে বলে জানান তিনি। তবে ভবানীপুরে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বিজেপির কোন নেতাকে দিল্লির নেতৃত্ব প্রার্থী করবেন তা অবশ্যই সময় বলবে।

খড়দহের বিধায়ক কাজল সিনহা ভোটের ফলাফল প্রকাশের আগেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। খড়দহ কেন্দ্র থেকে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চ্যাটার্জি প্রার্থী হবেন বলেই তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে। এছাড়া দিনহাটা, শান্তিপুরেও ফের ভোট হওয়ার কথা। কারণ বিজেপির জয়ী ২ বিধায়ক নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছেন। সাংসদ হিসাবেই কাজ করছেন তাঁরা। এছাড়া গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর কদিন আগেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাই গোসাবা আসনে ও ফের ভোট হওয়ার কথা থাকলেও এই এই তিনটি কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

তবে কমিশনের এহেন ঘোষণায় খুশি নয় রাজ্যের বিরোধী কোনও রাজনৈতিক দলই। যদিও নির্বাচনের দিন ঘোষণার আধ ঘণ্টার সময়ের মধ্যেই ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে জোর নির্বাচনি প্রচার শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। শুধু তাই নয়, ভবানীপুর কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যে তৃণমূলের পোস্টার- ও পড়েছে।

উপনির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী জানান, তাঁরা সবসময়ই চান নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হোক। যদিও কমিশনের ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলে  তিনি বলেছেন, রাজ্যে সাতটি বিধানসভার উপনির্বাচন হওয়ার কথা কিন্তু কেন মাত্র তিনটিতে হবে? সাতটি কেন্দ্রেই যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। অপরদিকে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, ‘বর্তমানে করোনা আবহের জেরে রাজ্য তথা দেশ আতঙ্কিত। করোনার আতঙ্কে লোকাল ট্রেন চালু করতে দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজে পঠন-পাঠন। আর এরই মধ্যে নির্বাচন করার জন্য রাজ্য সরকার যেভাবে উদগ্রীব হয়ে উঠেছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’ তবে নির্বাচন কমিশনের দিনক্ষণ ঘোষণা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনেরও উপায় ছিল না। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিধায়ক নন। তাঁকে ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচনে জিতে আসতে হবে। তাই সাংবিধানিক সঙ্কট এড়াতে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে নির্বাচনের দাবিতে আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারই পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

বিজেপির বিরোধী পারিষদ নেতা শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, মোট সাতটি উপনির্বাচন করার কথা থাকলেও কেন মাত্র দু’টি-তে উপ নির্বাচন করছে নির্বাচন কমিশন। এর কারন কি? বছরের পর বছর শতাধিক পৌর কর্পোরেশন ও পৌর সভার নির্বাচন করার জন্য বহুবার বিরধী দলের পক্ষ থেকে দাবী জানালেও তা করার কোন পদক্ষেপ নেয়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেই গুলোই আগে করার কথা কিন্তু সেই সমস্ত নির্বাচন না করে নিজেদের পছন্দ মতো প্রশাসক বসিয়ে স্থানীয় সরকারের নামে দলবাজি করছে তৃণমূল সরকার। নির্বাচন কমিশনকে সাতটিতেই নির্বাচন করতে হবে, না হলে বিজেপি আদালতে যাবে!