বাংলাদেশের নৌ-মন্ত্রকে আর্থিক অনিয়ম, দায় নিতে হচ্ছে ভারতকে
- ঢাকা থেকে বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের নৌপথ মন্ত্রক ড্রেজিং, ফেরি মোরমতসহ সকল কাজে চলছে ব্যাপক অনিয়ম । কিন্তু দায় নিতে হচ্ছে ভারতকে। নৌমন্ত্রকের অনিয়ম অন্য খাতে প্রবাহিত করতে ইউটিউবসহ সামাজি যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে ভারত বিদ্বেষ। এতে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।
শতশত কোটি টাকা ফেরি মেরামত ও পূণর্বাসন এবং ড্রেজিং খাতে খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে এর সিংহভাগ অর্থ নয় ছয়-র অভিযোগ রয়েছে নৌমন্ত্রকের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এমনকি নৌপথে পণ্য পরিবহণে ব্যয় তুলনামূলক কম। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ বাড়াতে আগ্রহী ভারত, তবে বিশেষ কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না বাংলাদেশের নৌপরিবহণ মন্ত্রক। কিন্তু কেন? নদী গবেষক বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের মতে, ভারত-বিদ্বেষী মনোভাবের কারণেই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগের আধিকারিকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নৌ-যোগাযোগ বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশেরই বেশী লাভ হবে। এছাড়া বাংলাদেশে পদ্মা নদীতে চলাচলকারী ফেরিগুলো মেরামত ও পূণর্বাসনের জন্য কোন কাজ না করে শত কোটি টাকা খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে ইঞ্জিনগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। ইঞ্জিনগুলো সঠিক ভাবে কাজ না করায় প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরীগুলো নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর পিলার সঙ্গে বার বার সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে করে পদ্মা সেতুর পিলার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্ত ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে প্রচার করা হচ্ছে বাংলাদেরে উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে পদ্মা সেতু ভাঙ্গার জন্য অসংখ্য গুপ্তচর পাঠাচ্ছে, এমনকি ভারত বিরোধী এই মহলটি সামাজিক মিডিয়ায় স্থানীয় কিছু পাগলের ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে এদের ভারত থেকে পাঠিয়েছে। এমন বেশ কয়েকজন ভবঘুরে ও পাগলকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারত বিরোধী অবিরত অপপ্রচারের বিষয়টিকে বাংলাদেশের প্রশাসন আইনগতভাবে কোন গুরুত্ব দিচ্ছেনা। তবে বাংলাদেশের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতের কোন গুপ্তচরকে গ্রেফতার করা হয়নি এবং পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধক্কা লাগার সঙ্গে ভারতীয় জড়িত থাকার প্রমাণ তাদের কাছে নেই বলেও দেশটির প্রশাসন আমাদের ঢাকাস্থ বিশেষ প্রতিনিধি-কে জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালানো হলেও বাংদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা জানতে চাওয়া হলে জানানো হয়, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রশাসনকে এখনও কিছু জানানো হয়নি, তবে বিষয়টি তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে ।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রের খবর, আগে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচলের জন্য ভারতকে প্রতি বছর ১০ কোটি টাকা দিতে হত। কিন্তু, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ-র ড্রেজিং বিভাগ থেকে ভারতের সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ চলাচলের নামে ‘লুটপাট-র’ একাধিক ড্রেজিং প্রকল্প গ্রহণ করছে। যার ৮০ শতাংশ ব্যয়বহন করতে হচ্ছে ভারতকে, এমনই মত সংশ্লিষ্টদের। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদী দিয়ে বাংলাদেশের জকিগঞ্জ হয়ে অসমের করিমগঞ্জে পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যে ২.৫ মিটার গভীরতা বজায় রাখার জন্য ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। যার প্রথম ধাপে দু’বছর কেপিটাল ড্রেজিং করা হবে ও ৫ বছর পর্যন্ত একই গভীরতা ধরে রাখার জন্য সারাবছর রক্ষণা-বেক্ষণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ভারতের অসম ও ত্রিপুরায় সিমেন্ট রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানির মুখপাত্র ড. মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, কেপিটাল ড্রেজিং শেষে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর এই রুট-টি উদ্বোধন করা হলেও বর্ষা মওসুম ছাড়া কুশিয়ারা নদীতে নাব্যতা আড়াই মিটার থাকে না। তাই খরিপ মওসুমে নৌ-যান চলাচল করতে পারে না। একইভাবে বাংলাদেশের যমুনা নদী দিয়ে সিরাগঞ্জ হয়ে অসমের দৈখাওয়া স্টেশন পর্যন্ত সারাবছর আড়াই মিটার গভীরতা রক্ষা করার জন্য ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয় বাংলাদেশের নৌ পরিবহণ মন্ত্রক। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয়ের ২০ শতাংশ বাংলাদেশকে দিতে হবে। এই কাজ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকছে বাংলাদেশের নৌ পরিবহন মন্ত্রক।
গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজন পাগল, সোসাল মিডিয়ায় এদেরকে ভারতীয় গুপ্তচর হিসেবে দেখানো হয়েছে ।
বাংলাদেশের কুমিল্লার সাংবাদিক আবদুর রহমান বলেন, গোমতী নদীর কয়েকটি পয়েন্টে ড্রেজিং করা হলে ও বর্ষা মওসুমে নাব্যতা ঠিক রাখার কাজ করলেই খুব কম খরচেই ত্রিপুরার সোনামুড়ার সঙ্গে নৌ-পথে পণ্য পরিবহণ সম্ভব হবে। তবে দু’দেশের শূন্য রেখা বরাবর ভালোভাবে ড্রেজিং করতে হবে। কিন্তু এটা না করে বাংলাদেশের নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী পরামর্শে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের ড্রেজিং বিভাগ থেকে ২৮৮ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গোমতী নদীর ড্রেজিংয়ের নামে একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ভারতের সেভেন সিস্টার্সে আমদানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশই বাংলাদেশ থেকে আসে এবং ১০ শতাংশ পণ্য সেভেন সিস্টার্স থেকে বাংলাদেশে যায়। বাংলাদেশের ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত সড়কটিও ভারতের টাকায় নির্মিত। একইভাবে পদ্মা নদী দিয়ে বাংলাদেশের সুলতানগঞ্জ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মালদহের মায়া ঘাটে যাওয়ার জন্য ভারতকে আরও একটি ব্যয়বহুল ড্রেজিং প্রকল্পের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চলছে।
কুমিল্লা বিবিরবাজার স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯–২০ অর্থবছরে এই বন্দর থেকে ভারতে মোট ৯৯ কোটি ৭৯ লক্ষ ৫৭ হাজার ৪৫২ টাকা বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হয়েছে। ভারতথেকে আমদানীকৃত পণ্যে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৯ লক্ষ ৪ হাজার ৭৪৭ টাকা। তবে বাংলাদেশের নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ভারতের সঙ্গে নৌ–যোগাযোগ বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ। এছাড়া পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণ সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগছে বলে তিনি দাবি করেন।
ভিওসি–বিডি–৪