ই  সিস্টেমে বাংলাদেশ ও -ভারতে যাতায়াতকারীদের ইমিগ্রেশনে সময় লাগবে মাত্র ৪০ সেকেন্ড

হরলাল রায় সাগর/এম এ রহিম

বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াতকারীরা এখন ভোগান্তি ছাড়াই  ইমিগেশন সম্পন্ন করতে পারবেন। বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে ইলেকট্রনিক গেট বা ই-গেট। আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের মতো স্থাপিত এই ই- গেট দিয়ে মাত্র ৪০ সেকেন্ডে পারাপার হতে পারবেন যাত্রীরা। গেটে পাসপোর্ট প্রদর্শন করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। ইমিগ্রেশনের আর কোনো ঝামেলা থাকছে না। থাকবে না আগের মতো ৫ থেকে ১০ মিনিটের বিড়ম্বনা-ভোগান্তিও। তবে পাসপোর্টবিহীন কেউ ওই গেট দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। পারবেন না একজনের পাসপোর্ট দিয়ে আরেকজন যেতে। পাসপোর্ট আরেকজন দেখালে গেট খুলবে না। ফলে যাত্রীরা আরও সহজে ইমিগ্রেশনের কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশে স্থল বন্দরে এই প্রথম বেনাপোল চেকপোস্টের ইমিগ্রেশনে ইলেকট্রনিক গেট চালু হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ সরকার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী কাল ( ৪ মার্চ)  বিকেল সাড়ে ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ই- গেট উদ্বোধন করবেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এরপর মন্ত্রী সাড়ে ৪টায় বেনাপোল ফুটবল মাঠে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রতিবেশী দুই দেশের যোগাযোগের সংযোগ বন্দর বেনাপোল স্থল বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্দর দিয়ে সর্বোচ্চ মানুষ বা যাত্রী যাতায়াত করে। এবং বিভিন্ন ধরণের পণ্যও পরিবহন করা হয়।

বেনাপোল স্থালবন্দর সূত্রে জানা গেছে, চেকপোস্টে প্রথম পর্যায়ে ছয়টি ই-গেট করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতে প্রবেশের জন্য তিনটি ও ভারত থেকে আসা যাত্রীদের জন্য তিনটি। পর্যায়ক্রমে এ গেট বাড়ানো হবে।বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবীব গণমাধ্যমকে জানান, যাত্রীরা তাদের পাসপোর্ট দেখালেই অটোমেটিক গেট খুলে যাবে। একজনের পাসপোর্ট আরেকজন দেখালে গেট খুলবে না। এতে করে যাত্রীরা আরও সহজে ইমিগ্রেশনের কাজ করতে পারবেন। মাত্র ৪০ সেকেন্ড সময় লাগবে এ কাজ করতে; যেখানে আগে লাগত কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ মিনিট। তিনি আরও জানান, বেনাপোল দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন সাত হাজার পাসপোর্টযাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করে থাকেন। এ গেট উদ্বোধন হলে আমাদের কাজও সহজ হয়ে যাবে।

যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান কুতুব বলেন, বেনাপোল ইমিগ্রেশনে ইলেকট্রনিক গেট উদ্বোধনের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ গেট উদ্বোধন হওয়ার পর যাত্রীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই ভারতে যেতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, এরকম সুবিধা বিমানবন্দরে আছে। বিমানবন্দরের মতো এখন দেশের প্রথম হিসেবে বেনাপোল চেকপোস্টে এ সুবিধা নিশ্চিত করতে যাচ্ছে সরকার। এ সুবিধা চালু হওয়ার পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়া-আসার জন্য কোনো ঝামেলা থাকবে না। দালালদের দৌরাত্ম্যও থাকবে না।

জার্মানির সাথে জিটুজি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে শুরু হবে  ই-পাসপোর্ট সুবিধা৷ একই প্রকল্পের অংশ হিসেবে এবার ৬টি ই-গেইট বসানো হয়েছে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে। এতে যাত্রী ভোগান্তী লাঘবের পাশাপাশি কমবে সময়ের অপচয়। স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থারার ফলে যাত্রীরা ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি হওয়া ছাড়া নিজেই ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারবেন।

বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে দেশের ২২স্থলবন্দরে চালু করা হবে ই গ্রেট। ইতিমধ্যে ঢাকা ও চট্রগ্রামে চালু হয়ে এ ই সিষ্টেম। ই-গেট ব্যবহারের পদ্ধতিতে প্রথম ধাপে প্রবেশপথে নিজের ছবি, তথ্য ও বারকোডযুক্ত  ই-পাসপোর্টের প্রথম পৃষ্ঠা স্ক্যান করলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে যাত্রীর সব তথ্য যাচাই শেষে খুলে যাবে প্রথম গেইট। এরপর দ্বিতীয় ধাপে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ক্যামেরাযুক্ত ফেসিয়াল রিকগনিশনের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে যাত্রীর মুখমণ্ডল মিললে খুলে যাবে দ্বিতীয় গেইট। সার্ভার এবং সিস্টেম ঠিক থাকলে মাত্র ১৮ সেকেন্ডেই শেষ হবে একজন যাত্রীর ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া৷বেনাপোল চেকপোষ্টে দায়িত্বরত পাসপোর্ট ভিসা সেলের উপ পরিচালক শাহজাহান আলী ও ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব জানান,ই-পাসপোর্টের ইমিগ্রশন সিস্টেমে চালু হচ্ছে ই-গেইট। এখন থেকে উন্নত দেশের মতো মাত্র ১৮-২০ সেকেন্ডে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন যাত্রীরা। শুধুমাত্র আগমন ওপ্রত্যাগমন সিল দিবেন ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।

দেশের যাত্রীদের পাশাপাশি বিদেশী যাত্রীরাও এই সুবিধা পাবে। ফলে,উন্নত দেশের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার সাথে আন্তর্জাতিক একটা লেভেলে যোগ হলো বাংলাদেশ।  ই–গেটের অন্যান্য সেবার মধ্যে আছে ই-ভিসা শনাক্তকরণ।

ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল পেট্টাপোল। এ বন্দর দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত যেমন বাড়বে তেমনি বাড়বে সেবার মান। বাবসা বানিজ্য সম্প্রসারণে ভুমিকা রাখবে ই গেট সেবা।

এইচ ভি-৭