ভিওসি নিউজ

 ভোটের লড়াইয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে দুপক্ষের, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের মধ্যে । গোটা বাংলার নজর এখন শুধুমাত্র এই একটা কেন্দ্রের দিকে৷ দু’দলের  প্রচারের পারদ তুঙ্গে।  নির্বাচনী লড়াইয়ে প্রচারই সবথেকে বড় হাতিয়ার হয় রাজনৈতিক দলগুলি জন্য৷ ভবানীপুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড় বলে পরিচিত৷ একইসঙ্গে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস৷ তাই ভবানীপুরে ভোট প্রচারের ক্ষেত্রে কোনওরকম খামতি রাখতে চাইছেন না মমতা বন্দোপাধ্যায়।

জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মমতা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারের কাছে পরাজিত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর আসন ধরে রাখার জন্য জিততেই হবে মমতাকে । দীর্ঘ রাজনৈতিক কেরিয়ারে এবারে এই প্রথম বিধান সভা নির্বাচনে ভবানীপুরে না লড়ে নন্দীগ্রাম থেকে লড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপরদিকে বিজেপির কাছেও এই নির্বাচন কার্যত প্রেস্টিজ ফাইটর, তাই গুরুত্বপূর্ণ আসনে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিপরিতে বিজেপি প্রর্র্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরায়ওল। সোমবার মনোনয়ন জমা দেয়ার পরই বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালও সরাসরি প্রচারে বেরিয়ে পড়েন।

                             

ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে  প্রচুর অবাঙালি ভোটারের বসবাস। ভবানীপুরে বাঙালি ভোটের সঙ্গে এবার বড় ফ্যাক্টর অবাঙালী ও সংখ্যালঘু ভোট-ও৷ বিজেপির  এবার বড় টার্গেট এই অবাঙালী ভোটে থাবা বসানো৷ প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল সেই কাজে এগিয়ে থাকবেন বলেই মনে করছে বিজেপি৷  তবে এই অবাঙ্গালি ভোটারদের দিকে বিজেপির মতো তৃণমূল কংগ্রেসেরও ভাগ বসানো এবারের লক্ষ্য৷ তাই আবাঙালি ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওয়ার্ডগুলিতে ঢুঁ মারছেন তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং৷ সোজা কথায় ভোট চাইতে যাচ্ছেন তিনি৷ আর এই নিয়েই চরম কটাক্ষ বিজেপির৷ মঙ্গলবার নবান্ন থেকে ফেরার পথে হঠাৎ-ই ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ভবানীপুরের অন্তর্গত একবালপুর এলাকার ষোলোআনা মসজিদে তিনি বসেন কিছুক্ষণ৷ সূত্রের খবর সেখানকার ইমামদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক সারেন মমতা৷ ভোটের আগে যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ইমামদের সঙ্গে বৈঠকের সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন হাজির ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। যদিও এ দিনের বৈঠকে মমতার সঙ্গে ইমামদের ঠিক কী কথা হয়েছে, তা বিশদে জানা যায়নি। তবে এই সাক্ষাতের নেপথ্যে যে ভোট অঙ্ক কাজ করছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।  তাই দেখা যাক কে জয় করে অবাঙালিদের মন৷ ভবানীপুরের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে জেতানোর জন্য যাদেরকে মাঠে নামিয়েছে বিজেপি, তাঁরা একসময় তৃণমূলের বিশ্বস্ত সৈনিক ছিলেন। প্রিয়াঙ্কার নির্বাচনী এজেন্ট করা হয়েছে সজল ঘোষকে, এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার মাথায় রয়েছেন অর্জুন সিং। একদিকে লড়াইয়ের চাপ, অন্যদিকে নিজের দলের প্রত্যাশা। এই সব কিছুর মধ্যেই বরাবর আত্মবিশ্বাসী  হয়ে ওঠেন বিজেপির আইনজীবী প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বর মহারণের আগেই ব্যক্তিগত জীবনে বড় ধাক্কা খেলেন প্রিয়ঙ্কা। হারালেন নিজের ভাইকে।  মঙ্গলবার সকালে নিজেই জানালেন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। জানিয়েছেন, ‘একমাত্র ছোট ভাইকে হারালাম । হঠাতই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হল তাঁর। সোমবারই মহা সমারোহে পুজো দিয়ে ভবানীপুর উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল।

বিধানসভা ভোটের নিরিখে ভবানীপুরের অন্তর্গত ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টিতে পিছিয়ে ছিল বিজেপি। সেই ওয়ার্ডগুলিতে প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। বুথ পিছু দু’জন করে এজেন্ট ঠিক করা হয়েছে।  আইনজীবী বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা য়াল জানান, ‘ মানবিকতা রক্ষার লড়াই আমার এবার, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বাঁচানোর জন্য এই লড়াই’। শনিবার কালীঘাটে পুজো দিয়ে শুরু হয় তাঁর প্রচার। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি,  ‘ মমতা যে ভবানীপুরে জিতবেন, তার নিশ্চয়তা নেই, উনি হারবেন, কানের পাশে বাজবে শুভেন্দুর কাছে হেরেছেন, শুভেন্দুর কাছে হেরেছেন, ওনাকে কে বলেছিল, ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে আসতে।’
এদিকে বিধানসভার  ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মনোনয়নপত্রে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলল বিজেপি। নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে বিজেপি অভিযোগ জানিয়েছে। ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের নির্বাচনী এজেন্ট অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলপ্রার্থী মনোনয়নপত্রে তাঁর বিরুদ্ধে যে সব মামলা রয়েছে তার কথা উল্লেখ করেননি। এর আগে নন্দীগ্রামেও বিধানসভা নির্বাচনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছিল বিজেপি।

এদিকে এই নির্বাচনে যাতে কোনও রকমের উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় তাই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রক। তাই ভোট কেন্দ্র থেকে বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে  ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর, ১৫ কোম্পানির মধ্যে সিআরপিএফের ৭ কোম্পানি, বিএসএফের ৪ কোম্পানি, এসএসবি-র ২ কোম্পানি এবং সিআইএসএফ ও আইটিবিপি-র ১ কোম্পানি আসছে রাজ্যে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছিল গোটা রাজ্যজুড়ে। সব থেকে বড় ঘটনা ঘটেছিল কোচবিহারের শীতলকুচিতে। সেখানে ১২৬ নম্বর বুথে বিনা প্ররোচনায় ভোটারদের ওপর গুলি চালিয়েছিল সিআইএসএফ জওয়ানরা। এই সমস্ত ঘটনা এড়াতেই ১৫ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।