ঈদের আগে  সর্বনাশা আগুনে সর্বস্ব খুঁইয়ে ব্যবসায়ীরা দিশেহারা

 থেকে হরলাল রায় সাগর

বাংলাদেশের রাজধানী অন্যতম বৃহৎ পোশাকের বাজার বঙ্গবাজার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। ছ য় ঘন্টার আগুনের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৫ হাজার ব্যবসায়ী। ঈদের আগে আগুনের প্রচন্ডতায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাদের জীবিকার শে্য সম্বল। চলছে ব্যবসায়ীদের বুকফাটা আহাজারী। ফায়ার সার্ভিসে পাশাপাশি সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি, ‌ র‍্যাব ও পুলিশ বাহিনীর সদস্য আগুণ নেভাতে কাজ করে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের চিকিৎসাসেবা ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি আজ অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়  বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসময় এক পর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বারবার আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি এর সমাধানে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ)  ভোর ৬টার দিকে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়। তিনতলা মার্কেটটি টিন ও কাঠের হওয়ায় মুহূর্তে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে আশাপাশের ইসলামিয়া মার্কেট, আদর্শ মার্কেটসহ আরও ৫টি মার্কেটে। জাতীয় জরুরি পরিষেবা ৯৯৯ থেকে ৬ টা ১০ মিনিটে খবর পেয়ে বঙ্গবাজার লাগোয়া দমকল বাহিনীর কর্মীরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস মিনিট দুইয়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেও বাতাসের তীব্রতায় ঘিঞ্জি ওই মার্কেটের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।  টানা ৬ঘন্টারও বেশী (দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে) আগুন নিয়ন্ত্রণের কথা  নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি জানান আগুন নেভাতে তাদের ৫০টি ইউনিট কাজ করেছে।পাশাপাশি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যসহ র‌্যাব, বিজিবি ও ওয়াসার সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজে অংশ নেন।  তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিকেল ৫টা নাগাদ আগুন পুরোপুরি নেভেনি। ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুনের সূত্রপাত আদর্শ মার্কেট থেকে। পরে দ্রুতগতিতে পাশের মার্কেটগুলোর চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের এনেক্সকো টাওয়ার, বঙ্গবাজারের উল্টো দিকে বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স মার্কেট এবং আরও কিছু ভবন। এছাড়া বঙ্গবাজারের ভয়াবহ আগুন পাশের পুলিশ সদর দফতরেও ছড়িয়ে পুড়িয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এতে জাতীয় সেবা নম্বরর ৯৯৯ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট পৌঁছালে মার্কেটে প্রবেশ করতে বাধা ছিল। মার্কেটের চারদিকে যে তালাগুলো লাগানো ছিল সেগুলো ভাঙতে অসুবিধা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের। কারণ, তালাগুলো ভেতরে ছিল। আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যসহ মোট ১২ জন আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।

দুর্ঘটনা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। ২ হাজার ফোর্স এই এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছে জানিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে রাজারবাগ থেকে ৫টা ওয়াটার ক্যানন এনে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কাজ শুরু করি। আমাদের ওয়াটার রিজার্ভার থেকে প্রায় ২ লাখ লিটার পানি সাপ্লাই দিয়েছি।

আগুনে বঙ্গবাজার ও আশপাশের ৬টি মার্কেটের ৫ হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগিতা করবেন বলেও জানান তিনি।

ঈদ সামনে রেখে বঙ্গবাজার ও আশপাশের মার্কেটের সব দোকানেই প্রচুর নতুন পণ্য তোলা হয়েছিল। কীভাবে সেখানে আগুন লাগল তা এখনও স্পষ্ট নয়। সকালে আগুন লাগার পর ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের কাউকে কাউকে মরিয়া হয়ে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। অসহায়ভাবে কাঁদছিলেন অনেকে।