ঢাকা থেকে হরলাল রায় সাগর
বান্দরবানের রোয়াংছড়ির সদর ইউনিয়নের খামতাম পাড়ায় পাহাড়ি দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর গোলাগুলিতে আটজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে খামতাম পাড়া থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। নিরাপত্তার অভাবে জীবন বাঁচাতে পাড়ার অন্তত ১৭৫টি পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে উপজেলা শহরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি কারা এই গোলাগুলির ঘটনায় জড়িত তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি সশস্ত্র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস সংস্কার) সদস্যদের গোলাগুলি হয়। পরে শুক্রবার সকালে সেখানে গিয়ে জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত আট জনের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন তারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে। তারা বলছেন, মূলত ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ বলছে, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কেএনএফ ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
রোয়াংছড়ি থানার ওসি আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, আটটি লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুটি সংগঠনের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে আটজনের মৃতদেহ দেখতে পায়। তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের দুটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকায় মূলত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আধিপত্য বেশি। আধিপত্য নিয়েই কেএনএফের সঙ্গে তাদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।’ পুলিশ সুপার বলেন, ‘কী নিয়ে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত না করে বলা যাচ্ছে না। আমরা তদন্ত করছি। পাহাড়ে যৌথ অভিযান চলছে। এর মধ্যেই এই ঘটনা। এই যৌথ অভিযান চলবে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
অপরদিকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট তাদের ফেসবুক পেজে নিহত সাতজনের নাম প্রকাশ করেছে। তারা হলেন- ভান দু বম, সাং খুম, সান ফির থাং বম, বয় রেম বম, জাহিম বম, লাল লিয়ান ঙাক বম, লাল ঠা জার বম। সবাই খামতাং পাড়ার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। তবে নিহত আরেক জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বাড়িঘর ছেড়েছেন স্থানীয়রা: নিরাপত্তার অভাবে পাড়ার ১৭৫টি পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছেন। খামতাম পাড়ার কারবারি মানিক খিয়াং বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ওই সময় ভয়ে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে চলে যায়। এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক পরিবার বাড়ি ছেড়ে বলে জেনেছি। এর মধ্যে অনেকে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।’
রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উ হ্লাং মং মার্মা বলেন, ‘উপজেলা সদরের বম কমিউনিটি সেন্টারে ৪০ জন নারী ও শিশু এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।’
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী ক
কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, ওই পাড়ায় ১৭৫টি পরিবার আতঙ্কে রোয়াংছড়ি রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের দেখভাল করছে উপজেলা প্রশাসন। তাদের খাবারসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে খোঁজ রাখা হচ্ছে। ওই এলাকা শান্ত হলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
ঘটনার পরপরই খামতাম পাড়া এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কতজন এলাকা ছেড়েছে তার তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। পাহাড়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।’