ভারত বিচিত্রা-র সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ সংখ্যর মোড়ক উন্মোচন
ঢাকা থেকে হরলাল রায় সাগর
সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষদের নিয়ে ‘ভারত বিচিত্রা-র বিশেষ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে সাময়িকীটির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বারিধারায় হাইকমিশনের চ্যান্সারি ভবন মিলনায়তনে এই বিশেষ  অনুষ্ঠান  অনুষ্ঠিত হয়।মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক উন্নয়নের পরিপূরক হচ্ছে যখন নয়াদিল্লি তার প্রতিবেশী নীতিতে ঢাকাকে প্রথম গণ্য করে। তিনি বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আজ সত্যিই বহুমুখী এবং পারস্পরিক উন্নয়নের পরিপূরক। ভারত ও বাংলাদেশ এমন একটি চমৎকার সম্পর্ক উপভোগ করছে, বিশ্বে যার জুড়ি মেলা ভার। প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়। আমরা প্রায়ই যেমনটি বলে থাকি, আমাদের কাছে প্রতিবেশী প্রথম, আসলে প্রতিবেশী দ্বিতীয়, বাংলাদেশই প্রথম। হাইকমিশনার উল্লেখ করেন, ভারত যখন জি২০’র প্রেসিডেন্ট হয়, নয়াদিল্লি সেই গুরুত্বপূর্ণ বহুজাতিক প্ল্যাটফর্মের আলোচনায় যোগ দিতে বাংলাদেশকে বিশেষ অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়।আমরা বিশ্বাস করি বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদান রাখা, বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, প্রতিকূলতা উত্তরণ এবং অগ্রগতি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প বিশ্বমঞ্চে শোনা যাবে এবং তা থেকে অন্যরা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারবে। হাইকমিশনার বলেন, ভারত বিচিত্রার বিশেষ সংস্করণ ভারতীয় হাইকমিশনের এই ফ্ল্যাগশিপ প্রকাশনার ৫০তম বছরকেও চিহ্নিত করেছে। ‘ ৫০ বছরে পূর্তি ‘ভারত বিচিত্রা’’ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং মাইলফলককে ধারণ করেছে এবং সব ভাবাবেগ ও পারস্পরিক সহানুভূতিরও আঁধার হয়েছে। পত্রিকাটিকে দুই দেশের মধ্যে ‘বন্ধুত্বের সেতু’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ভারত বিচিত্রার বিশেষ সংস্করণটি যৌথ পরম্পরা ও মূল্যবোধের পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক অংশীদারত্বের অগ্রগতিকে উদযাপন করে এবং এটি আমাদের দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও স্থায়ী সম্পর্কের একটি নিদর্শন। তিনি বলেন, ‘ভারত বিচিত্রা’ বাংলাদেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান এবং বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের অবস্থান বাড়াতে একটি মূল্যবান প্ল্যাটফর্ম। এ সাময়িকীর প্রথম সংখ্যা ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালেও এর প্রকাশনা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ভারত বিচিত্রা মানেই বেলাল চৌধুরীর কথা মনে পড়ে। বেলাল ভাই বহু লেখককে সেসময় একত্র করেছিলেন। ভারত বিচিত্রা থাকায় আমি লেখক হিসেবে জায়গা পেয়েছি। আমার মতো মানুষের লেখাও তিনি ছেপেছেন। একটি পত্রিকার ৫০ বছর টিকে থাকা অনেক বড় ব্যাপার। তিনি বলেন, ভারত বিচিত্রার প্রচ্ছদগুলো সব সময় অনেক তাৎপর্যপূর্ণ হয়। বঙ্গবন্ধু, গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ- যখন যাকে তুলে আনা দরকার তখন তাকে তুলে এনেছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসের সম্পর্ক। একটি রক্তের বন্ধন। একটি দেশের মানুষ আরেকটি দেশের জন্য তাদের মাটিতে রক্ত ঝরিয়েছে। এই বন্ধন কখনো ছিন্ন হবে বলে মনে করি না।
ভারত বিচিত্রার সংখ্যাগুলো যদি বাংলাদেশের সব গ্রন্থাগারে পাঠানো যায়, তাহলে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিয়ম আরও দৃঢ় হবে বলে মনে করেন নূর।
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, একটা পত্রিকা নিয়ে আয়োজন বিভিন্ন প্রজন্মের কাছে দিগন্ত উন্মোচন করছে। পশ্চিমবাংলাসহ ভারতে লেখকদের লেখা আমরা এক মলাটে পাই। এই দ্বীপশিখা থাকলে আমাদের লেখকদের সংযোগ আরও বাড়বে।\  বিশেষ আয়োজনে কবিতা পাঠ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কাপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা, ঝরণা রহমান ও ফারুক মাহমুদ। বক্তব্যপর্ব শেষে মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে মাসিক ভারত বিচিত্রা পত্রিকার সুবর্ণজয়ন্তী সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক আতিউর রহমান, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, কবি নুরুল হুদা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, কবি টোকন ঠাকুর, ভারত বিচিত্রার সাবেক সম্পাদক নান্টু রায় উপস্থিত ছিলেন।