ভিওসি প্রতিবেদন
রাজনীতিতে সব কিছুই ঘটে। এক সময়ের চিরবৈরীতায়ও যে বরফ গলতে পারে তার প্রকৃষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৪-র জাতীয় নির্বাচনের আগে বিজেপি তথা মোদি বিরোধি জোট গঠনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ফর্মুলার পথে্ই অবশেষ এগুতে চাচ্ছে কংগ্রেস। আর বিরোধী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সন্মুখে সমীকরণ মাত্র দুটি। একটি হলো শক্ত জোট নিশ্চিত করা ও অন্যটি হলো যে দল যেখানে শক্তশালী, সেখানে সেই দলের প্রার্থীকে্ই মনোনয়ন বা টিকিট দেয়ার মানসিকতা থাকা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই দুটি সূত্রই তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফর্মূলা। তিনি ইতোপূর্বে জোট গড়ার পূর্বে এই ফর্মূলা দিয়েছিলেন বিরোধী দলগুলোকে। আর এখন যে অবস্থা তাতে রাজনৈতিক মহলএর বিলক্ষণ অভিমত, আঞ্চলিক রাজনীতি বা জাতীয় দলের ‘ইগো’ ভুলে এই রননীতিই এখন হওয়া উচিত মোদি বিরোধী লড়াইয়ের সর্বশে্য আপ্তবাক্য।
বলতে গেলে কংগ্রেসও এখন এই ভাবনায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ইতিমধ্যেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এখন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও হাঁটতে শুরু করেছেন সেই পথে। এম কে স্ট্যালিন, নীতীশ কুমার এবং উদ্ধব থ্যাকারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন তিনি। এবার তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নিচ্ছেন। খুব শিগ্গিরই খাড়্গে ফোন করে মমতাকে আমন্ত্রণ জানাবেন দিল্লিতে আসার জন্য।
লোকসভা ভোটের আর এক বছর বাকি। বিরোধী জোটের জমি শক্ত করতে গেলে এটাই মোক্ষম সময়। এই রণনীতি তৈরিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বেশি পরিসংখ্যানের দিক থেকে কৌশলী আর কেউ অন্তত এগিয়ে নেই। কেননা হাওয়ার একেবারে উল্টোদিকে হেঁটে কীভাবে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে হারানো যায়, সেটা তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন। তাই কংগ্রেস এখন চাইছে, মোদি বিরোধী মহাজোট গঠনের রণনীতি তৈরিতে সরাসরি অংশ নিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বাংলায় অধীররঞ্জন চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেস যতই তৃণমূলের বিরোধিতা করুক না কেন, জাতীয় স্বার্থে কংগ্রেসের হাইকমাণ্ড নির্দেস তাকে মাণ্যতা দিতে হবে। আর এই মূহূর্তে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে একজোট হয়ে চলতে চাইছে বলেই এআইসিসি সূত্রের খবর। কংগ্রেস মনে করছেন, বাংলায় একা লড়বেন বলে মমতা ঘোষণা করলেও, বৃহত্তর স্বার্থে তিনি হয়তো আসন সমঝোতায় রাজি হবেন। তা না হলে দুর্বল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে ‘কৌশলী’ জোটের পক্ষেও মত দিতে পারেন মমতা। কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘২০০৯ সালে লোকসভা এবং ২০১১-র বিধানসভায় কংগ্রেস-তৃণমূলের কি জোট হয়নি? তখনও তো অধীর ছিলেন। ফলে চব্বিশেও অসুবিধা হবে না।’
নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে, মোদির দাপটে ২০১৯-র লোকসভা ভোটে বিজেপি ৩০৩টি আসন পেলেও আদতে মানুষের সমর্থন মিলেছিল মাত্র ৩৭.৭ শতাংশ। অর্থাৎ সিংহভাগ ভোটই ছিল বিজেপি বিরোধী। গোটা দেশের নিরিখে উনিশে কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ১৯.৬৭ শতাংশ এবং তৃণমূল ৪.১ শতাংশ। অর্থাৎ, এভাবে ৬০ শতাংশ বিরোধী ভোট এক ছাতার তলায় আনা গেলে বিজেপিকে হঠানো হবে সময়ের অপেক্ষা। আর তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী ঐক্য গড়তে ফের এখন চর্চায় ‘মমতার ফর্মুলা।
গুজরাত, কর্ণাটক, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে আঞ্চলিক দলের তেমন প্রভাব নেই। কংগ্রেস-বিজেপির সরাসরি ফাইট। আবার ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, বিহার, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট রয়েছে আঞ্চলিক দলের। কিন্তু যেখানে আঞ্চলিক দলই শক্তিশালী? সেখানে কংগ্রেসের অতি সক্রিয়তা কাম্য নয় বলে মনে করছেন দলের অনেক নেতা-নেতৃত্ব। মণীশ তেওয়ারি এবং শশী থারুরের মতো নেতারা ‘একের বিরুদ্ধে এক’ লড়াইয়ের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। অর্থাৎ বিজেপি ভার্সেস বিরোধী। থারুর বলেছেন, লোকসভার ৫৪৩টি আসনে কোন দল কোথায় শক্তিশালী, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আসন ভাগভাগি হওয়া উচিত। মণীশ তিওয়ারির মতে, মোদিকে হঠাতে হলে ‘রাজ্যস্তরেই জোট করে বিজেপিকে রুখতে হবে। এই ভাবে বা ওই ফর্মূলা অনুসরণ ভিত্তি ধরে ২০০ আসনে যদি প্রকৃত জোট হয়, তাহলে চব্বিশে মোদির ক্ষমতায় ফেরা দুষ্কর হবে।
কংগ্রেসের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। তার উপর কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ রাহুল গান্ধীর আদালত কর্তৃক দণ্ডাদেশ ও তার পরে জাতীয় সংসদে তার সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর দলটি আরও দুবর্ল হয়ে পড়ে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। তাই এই আবস্থায় বিরোধী জোট গড়া তথা এ ব্যাপারে রণনীতি তৈরীতে তৃণমূল নেত্রীর ফর্মূলায় জোট গড়তে চাইছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেস হাইকমান্ড ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার ইঙ্গিতও দিয়েছে।