ট্রাক সংকটে বেনাপোল পেট্টাপোল স্থলবন্দরে  ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িরা

: এম এ রহিম, বাংলাদেশ থেক

টানা কয়েকদিনের হরতাল অবরোধসহ লাগামহীন আন্দোলনের ঘোষণায় প্রভাব পড়েছে আমদানি রফতানি বানিজ্যে। বেনাপোল স্থলবন্দরে তীব্র ট্রাক সংকট। ফলত: ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি রফতানি কারক  দু দেশের ব্যাবসায়িরা। আর এর প্রভাব পড়ছে বাজারে। যোগেনের স্বল্পতায় বাজরে প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

আপরদিকে কাজ নেই, তাই বেনাপোল বন্দর শ্রমিকেরাও অলস সময় কাটাচ্ছে।কাজ না থাকায় তাদের জীবন-যাপনও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

বিএনপির ডাকা একের পর এক হরতাল-অবরোধের কারণে গত কয়েকদিন ধরেই বেনাপোল পেট্টাপোল বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য পরিবহণে ট্রাক সংকটের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।  ট্রাক দু’একটি মিললেও ভাড়াও দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বিগুণ বেড়েছে, অর্থাৎ আগের চেয়ে  ট্রাকপ্রতি ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি। এতে স্বাভাবিক পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের শিল্প কলকারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা পড়ছেন ভোগান্তিতে। গুণতে হচ্ছে আর্থিক ঘতটি ।বেনাপোল বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে অপেক্ষায় থাকছে ভারতীয় ট্রাক, হরতাল-অবরোধের কারণে ট্রাক সংকট, ফলে এসব পণ্য আনলোড করা যাচ্ছে না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উভয় দেশের ব্যাবসায়িরা।

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান ও সিএন্ডএফ ব্যাবসায়ি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল থেকে ভারতের বানিজ্য নগরী কলিকাতার দুরুত্ব মাত্র ৮৪কিলোমিটার। এ কারণে বেনাপোল পেট্টাপোল বন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথ  ব্যবহার করে রেল ও সড়ক পথে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। পণ্যের মধ্যে বড় একটি অংশ শিল্পকলকারখানা স্থাপনের যন্ত্রাংশ, উৎপাদন সামগ্রীর কাঁচামাল, কেমিক্যাল, অক্সিজেন ও খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য।তবে বর্তমানে চলা বিএনপি-জামায়াতের একের পর এক হরতাল-অবরোধে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বন্দরটিতে। ভারত থেকে পণ্য আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও, নাশকতার ভয়ে ট্রাক সমিতির অনেকে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহণ করতে চাচ্ছেন না। এতে পণ্য পরিবহণে ট্রাক সংকটের মুখে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। হরতালের কারণে রাতেরবেলাই  ট্রাক চলাচল করে বেশী।

আমদানিকারকরা জানান, আগে বেনাপোল-টু-ঢাকা ট্রাক ভাড়া ১৮ হাজার টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আর চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া ৮ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ায় সরবরাহ যেমন কমেছে, তেমনি সময়মতো কাঁচামাল না পৌঁছানোয় শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হরতালের নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এড়িয়ে রাজৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ভারতীয় পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসা ট্রাকচালক অরবিন্দ ও মনিষি মন্ডল বলেন, ‘আমদানি পণ্য নিয়ে কয়েকদিন ধরে বন্দরে দাঁড়িয়ে আছি। বাংলাদেশি ট্রাক সংকটে পণ্য আনলোড হচ্ছে না। এতে আমদানি পণ্যের জট বেড়েছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা।

বেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সেক্রেটারি  জানান, ভারত থেকে পণ্য আমদানি স্বাভাবিক আছে। বেনাপোল বন্দরে কোনো হরতাল নেই। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতামূলক ঘটনায় চাহিদামতো ট্রাক বন্দরে আসছে না। এতে পণ্য খালাসের পরিমাণ কমেছে। স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে প্রায় ৪৫০ ট্রাক পণ্য খালাস হলেও, ট্রাক সংকটে এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০০ ট্রাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ বড় ধরণের অর্থনৈতিক ক্ষতিতে পড়বে। বন্দর ব্যাবহারকারীরা বলেন, ‘বেশি ভাড়া দিয়েও ট্রাক না মেলায় ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন  জানান, কাস্টমসের কাজে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে হরতালের কারণে বন্দরে ট্রাক সংকটে জরুরি।

আমদানি পণ্য গন্তব্যে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। হরতাল ও অবরোধ এড়িয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানান এ ব্যবসায়ী নেতারা।

বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানান বন্দরে স্বাভাবিক গতিতে চলছে পণ্য লোড আনলোড।  তবে ট্রাক সংকটে বানিজ্যে অনেকটা গতি হারাচ্ছে বলে জানান তিনি।