নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

কলকাতা, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩: ১৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটা থেকে কলকাতা ফোর্ট উইলিয়ামে শুরু হয় বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকাতা।দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্যময় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।

১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আনুষ্ঠানিক পরাজয় হয়েছিল পাকিস্তানের। এই তারিখেই ঢাকায় আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানের সেনা। সেই থেকে এই দিনটি বিজয় দিবস হিসেবে উদ্‍যাপন করে আসছে ভারত ও বাংলাদেশ। ফোর্ট উইলিয়ামে-র এই  বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানাপ্রতাপ কলিতা, ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিকরা এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। ১৯৭১-এর মুক্তিসংগ্রামে নিহত সেনাদের প্রতি  স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁরা।  এ ছাড়াও বিজয় স্মারকে শ্রদ্ধা জানান  বাংলাদেশ থেকে আগত  বর্তমান ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও আমন্ত্রিত মুক্তি যোদ্ধারা। বাংলাদেশের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মহম্মদ মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী। এদিন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য একটি বিশেষ প্রদর্শনীরও আয়োজন করেছে ফোর্টউইলিয়াম। হয়েছিলস্মারক-শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ইস্টার্ন কমান্ডের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানা প্রতাপ কলিতা। উদ্বোধণী বক্তব্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল কলিতা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক যোগসূত্রের পাশাপাশি মানসিক বন্ধন রয়েছে।

এদিনের অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে মহম্মদ মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, “দেশের স্বাধীনতার জন্য ভারত তথা ভারতের সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা লড়াই করেছিলাম। ভারত এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনী কার্যত পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। পাকিস্তানের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে আমারা এখন ভালো জীবন-যাপন করছি। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরও এক বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য প্রতীক কাজী জাইনুল আবেদিন বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেতে ভারতবর্ষে যেভাবে আমাদের সাহায্য করেছিল তার জন্য আমরা চির কৃতজ্ঞ ।”

ভারতের পক্ষ থেকে ভারতীয় সেনার ব্রিগেডিয়ার অজিত আঁকতে, ব্রিগেডিয়ার প্রকাশ টি গোকলে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেএস চিমা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিআর মুখোপাধ্যায় ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন।

১৯৭১ সনে মুক্তিকামী বাঙালিদের নানা ভাবে সহায়তা করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয় ভারতীয় সেনারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎস্বর্গ করেছিলেন কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা সদস্য। ৫২ বছর ধরেই তাই বিজয় দিবসকে যথাযোগা মর্যাদায় উদযাপন করে আসছে ভারতীয় সেনা বাহিনীর পূর্বা ঞ্চলীয় কমান্ড।।বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আগত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার মিলিয়ে ৭০ জনের একটি প্রতিনিধি দল এই স্মারকশ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। পরে সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্বলিত একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি।মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর.পি কলিতা বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতই প্রথম বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভারত এবং বাংলাদেশ এই দুই রাষ্ট্র কেবল এক ইতিহাস ও সংস্কৃতি ভাগাভাগি করে না, উভয় রাষ্ট্রই এক চমকপ্রদ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি আজকের এই মহান বিজয় দিবসকে আরও মহৎ করে তুলেছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা পুস্তক প্রকাশনী সংস্থা অনুপম প্রকাশনীর কর্ণধার মিলন কুমার নাথ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, প্রায় ১ কোটি মানুষকে আশ্রয়, খাবার ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারত সহায়তা না করলে এত অল্প সময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারত না। স্বাধীনতার কয়েক মাস পরেই ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বন্ধুত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ভারত। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর পরিবারের সদস্যদের জন্য বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাবৃত্তি চালু করছে বলেও জানান মিলন নাথ।মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশিত এক বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি  ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করা ভারতীয় সৈন্যদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

বার্তায় মোদি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের হয়ে লড়াই করা সকল সৈন্যের প্রতি আমি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাদের অবদানের ফলেই যুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব হয়েছিলো। ভারতীয় সৈন্যদের এই সাহস এবং একাগ্রতা আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় গর্বের বিষয়।