আগস্ট ট্রাজেডি
কাজী রফিক
[ জাতির জনকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ]
ভোর হওয়ার তখনো কিছু সময় বাকি,
মুয়াজ্জিনের কন্ঠের ফজরের আজানের
সুমধুর ধ্বনি ভাসছিলো-
”আসসালাতু খায়রুনমিনান নাও……”।
ঝিম ধরে আছে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়িটি,
বিভীষিকার কালো রাত্রির আঁধার ঘিরে
ওৎ পেতে আছে অশুভ ছায়া।
চাকায় চাকায় ঘর্ষণে এসে থামে জলপাই রং কনভয়,
উদভট বুটের কর্কশ পদধ্বনি ফটকে ।
হঠাৎ গুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় পাখিদের,
চারিদিকে থমথমে আলোছায়ায় নেমে আসে সিঁড়ি বেয়ে দীর্ঘদেহী সিংহ পুরুষ,
ব্জ্রকন্ঠের গর্জনে কেঁপে উঠে
ঘাতকের হাতের মেশিন গান,
কিছুক্ষণের জন্য নেমে আসে স্তব্দতা।
তারপর,উর্দির পবিত্রতা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে
দানবের চোখ, এক ঝাঁক বুলেট বিদ্ধ করে বুক,
লুটিয়ে পড়ে ধূসর ধূলিতে আকাশছোঁয়া পাহাড় চূড়া,
রক্তের আল্পনায় আঁকে সফেদ পান্জাবিতে ‘বাংলার মুখ।
[দুই]
হত্যার উৎসবে মেতে উঠে হিংস্র ম্বাপদেরা,
একটু কাঁপেনি হাত বুলেটবিদ্ধ করতে বঙ্গজনীন বুক,
নববধু সুলতানার তখনো মোছেনি মেহেদির রং,
কৃষ্ণচূড়া আর পলাশের রঙে রাঙ্গালো বাসর সাজ।
বিধ্বস্ত আসবাবের আড়ালে থির থির করে
কাঁপছিলো শিশু রাসেল,
নিষঠুর হাতে টেনে আনে ঘাতকেরা।
”আমাকে মেরোনা,
আমাকে মেরোন”
অবোধ শিশুর করুন আকুতি চাপা পড়ে যায়
দানবের উল্লসিত চিৎকারে।
কবুতর শরীর এফোঁড় ওফোঁড় করে বুলেটও
লজ্জায় লুকায় দেয়ালের গায়ে।
রক্তপরিখা ঘিরে আনন্দ নৃত্যে মাতে প্রেতাত্মারা,
বৃক্ষে বৃক্ষে মাতম করে পাখিরা ,
আকাশ ফেটে রক্ত ঝরে,সবুজ ঘাসের বুকে
বয়ে চলে আগুন নদী।
[তিন]
একটু আগে টেলিফোন আসে টুঙ্গিপাড়ার
পোস্ট মাস্টাআনোয়ার হোসেনের কাছে,
একটি কবর খুঁড়তে হবে।
কার কবর, কার কবর,
বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে খবর,ছুটে আসে মান্না শেখ,
নুরুল হক,কেরামত হাজী,এমানউদ্দিন গাজী,
খুঁড়তে হবে কবর।
হেলিকপ্টারে এলো লাশ,
উর্দির আড়ালে ঘেরা,
পাঁচশ সত্তোর সাবানে হলো গোসলের কাজ,
রিলিফের শাড়ির আঁচল কেটে হলো দাফনের
সফেদ কাঁপন,হায় বাংলাকে ভালোবাসার
এই তার পুরস্কার?
দীণহীন বেশে মহানায়কের অন্তিম যাত্রায় কেঁদে উঠে
বাংলার বুক,আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হলো-,
’যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান’।
১৫আগষ্ট ২০২১)
(কবি পরিচিতি : বার্তাসম্পাদক, দৈনিক সংবাদ)