নিজস্ব প্রতিবেদন

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট রক্তস্নাত। ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই অশান্তির শুরু। একের পর এক জায়গায় ভোট ঘিরে হিংসা ছড়ায়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটের বলি ১৪! সহিংসতা, বোমা-গুলি, অগ্নিসংযোগ ও মৃত্যুর আবহেই শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হল। ভোটগ্রহণের শুরু থেকেই অশান্তির শুরু। একের পর এক গ্রামে  বুথে  ভোট ঘিরে হিংসা ছড়ায়।বেলার দিকে সহিংসতার মাত্রা সব রেকর্ড ছা’আয়।এদিন বিকেল ৫টা  পর্যন্ত বিভিন্ন সহিংসতা আর গোলযোগে ১৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আহত অনেকে। রক্তাক্ত পঞ্চায়েত ভোট বাতিলের দাবিতে শনিবারই হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে জনস্বার্থ মামলা। কমিশনের ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছেন বিরোধীরা।নির্বাচন কমিশনার রাজিবা সিনহার কথায়, ‘সন্ত্রাস আটকানোর দায়িত্ব রাজ্য প্রশাসনের। আমাদের দায়িত্ব ব্যবস্থাপনা সঠিক রাখার। আমরা সেটা করেছি। তবে কেউ তো গ্যারান্টি দিতে পারবে না কে কোথায় কাকে গুলি করে মারবে!’ স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের এমন মন্তব্যে রাজ্যব্যাপী বিতর্ক উসকে উঠেছে। উল্লেখ্য, এদিন সকালে ভোট শুরু পরে প্রায় ৩ ঘণ্টা নির্বাচন কমিশনের অফিসে দেখা যায়নি নির্বাচন কমিশনার রাজিবা সিনহাকে। বেলা ১০টা নাগাদ কমিশনের দফতরে আসন কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।

ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায়, চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।  আগামী ১১ জুলাই হবে ভোটগণনা।  গোটা রাজ্যে এক দফাতেই এই পঞ্চায়েত ভোট নেওয়া হয়।। রাজ্যটির ২২ জেলার মধ্যে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় দ্বিস্তরীয় ভোট (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি) এবং বাকি জেলাগুলোতে ত্রিস্তরীয় (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ) ভোট নেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু ভোটগ্রহণ শুরুর আগে থেকেই একের পর এক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে রাজ্যজুড়ে। ভোট সহিংসতায় গোটা রাজ্যে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।আর শুধু ভোটের দিনই ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।।  এবারের সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা  ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সহিংসতাকেও ছাপিয়ে গেল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছিল ২৩ জনের।

এছাড়াও নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলা থেকে কোথাও রাতের অন্ধকারে ব্যালট বাক্স চুরি ও ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ, কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকার কারণে ভোট বয়কটের ডাক, ভোট দিতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় স্থানীয় মানুষের ভোট বয়কটের ডাক। পশ্চিম মেদিনীপুরে কোলাঘাট থানার বড়গাছিয়া ননীবালা বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না থাকায় তালা মেরে ভোট বন্ধ করা-সহ একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগে শনিবার সকালে শ্যামনগর বাসুদেবপুর মোড়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের গাড়ি বহর আটকান সিপিআইএম বিজেপি প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। তারা ভোটে ব্যাপক সহিংসতার কথা জানায় রাজ্য পালকে। রাজ্যপালও সব সহিংস ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

যদিও রাজ্যজুড়ে একের পর এক ভোট সহিংসতার ঘটনায় ইতোমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ভোট সম্পর্কিত বিষয়ে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন অভিযোগ জানতে ও সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজভবনে (গভর্নর হাউজ) পিসরুম চালু করেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি গত দুই সপ্তাহ ধরে সন্ত্রাস কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছেন তিনি। কথা বলছেন নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে।

উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে গোটা রাজ্যে ভোট নেওয়া হবে মোট ৭৩,৮৮৭ আসনে। এরমধ্যে রয়েছে ৩৩১৭টি গ্রাম সভার ৬৩,২২৯ আসন; ৩৪১ টি পঞ্চায়েত সমিতির ৯৭৩০ আসন; এবং ২২ জেলা পরিষদের ৯২৮ আসন।

প্রায় ২ লাখের বেশি প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে এই নিবরাচনে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকছে ৬১,৬৩৬টি। মোট ভোটারের সংখ্যা ৫,৬৭,২১,২৩৪।

তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জাওয়ানদের মোতায়েনের কথা থাকলেও একাধিক বুথে তাদের দেখা যায়নি। এর পরিবর্তে নজরে পড়েছে রাজ্য পুলিশ এবং সিভিক পুলিশ সদস্যদের।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর গ্রামসভা নির্বাচনে এই প্রথম কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। বিজেপি ছাড়াও লড়তে হচ্ছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জোট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। এরই পাশাপাশি বেশ কিছু আসনে কড়া চ্যালেঞ্জ দিতে পারে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর প্রার্থীরা।

আগামী বছর ২০২৪ সালে দেশটিতে লোকসভা নির্বাচন, তার আগে এই নির্বাচন প্রতিটা রাজনৈতিক দলের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

এদিন ভোটে সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে মুর্শিদাবাদে। শুধু মুর্শিদাবাদেই খুন হয়েছেন ৫ জন। এরপর কোচবিহারে ৩ জন। দিন হাটায় ২, মালদায় ২ জন। পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর দিনাজপুরে ১ জন করে প্রাণ হারিয়েছেন। ওদিকে কমিশনের অফিসে জমা পড়ে ১০০০-এরও উপর বেশি অভিযোগ। এখন রাজ্যের যেসব বুথে অশান্তি হয়েছে, সেখানে পুনর্নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।