ঢাকা থেকে হরলাল রায় সাগর

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অক্সিজেন প্লান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক জেলা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি রি-রোলিং মিলের অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন আরও অন্তত ৩০জন। তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙকা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্লানটি পরিণত হয়েছে ধংসস্তুপে। উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেয়। তবে রাত ১০টার দিকে উদ্ধার কাজ বন্ধ করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।

নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- শামসুল ইসলাম, ফরিদুল আলম, রতন, আবদুল কাদের, সালাউদ্দিন। রাত ৯টার দিকে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এ এস আই আলাউদ্দিন তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার (৪ মার্চ) বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকার সীমা রি রোলিং মিলের অক্সিজেন অক্সিকো প্ল্যান্টে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেঁপে ওঠে। দুই কিলোমিটার দূর থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি থাকা অনেক ভবন ও স্থাপনার কাচ ভেঙে গেছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে প্ল্যান্টটি। সেইসঙ্গে কারও হাত কারও পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে অংশ নেয় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব ও পুলিশ।

দুর্ঘটনাকবলিত কারখানা সংলগ্ন লালবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. লোকমান বলেন, ‘বিস্ফোরণে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। অনেক বাসাবাড়ির কাচ ভেঙে গেছে।’ বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে জানিয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন , প্ল্যান্টের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে।’ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দগ্ধ ৩০জনকে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এরপর সেখানে আগুন ধরেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আগ্রাবাদ, সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের আটটি ইউনিট কাজ করছে।

আগুন কীভাবে লেগেছে, তা এখনও জানা যায়নি। শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিরা নূর বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো কারখানায় অক্সিজেন বোতলজাত করা হয়। এই অক্সিজেনের সাহায্যে জাহাজ কাটা হয়। মূল কাটখানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তের পর জানা যাবে।’ সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন দেখা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত কারখানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার। বিস্ফোরণের মাত্রা এতই তীব্র ছিল যে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে উড়ে যাওয়া প্ল্যান্টের লোহার টুকরার আঘাতে আশপাশের বেশ কয়েকটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কারখানা এলাকা। আশপাশের ভবনের কাচ ভেঙে গেছে। সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ বলেন, ‘কদমরসুল এলাকার ব্যবসায়ী মৃত শফি আহমদের ছেলেরা সীমা অক্সিজেন অক্সিকো কারখানা পরিচালনা করেন। শফি আহমদের ছেলে পারভেজ উদ্দিন সান্টু এবং তার ভাই মামুন কারখানা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন।’ সীতাকুণ্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি করেছেন জেলা প্রশাসক। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে বিস্ফোরণে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দাফন-কাফনের জন্য তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এসব সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আহতদের জন্য চিকিৎসা ও ওষুধপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য চট্টগ্রাম মেডিকের কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে জেলা প্রশাসনের হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়া বিএম কনটেইনার ডিপো থেকে সীমা অক্সিজেন অক্সিকো প্ল্যান্টের দূরত্ব আধা কিলোমিটার। বিএম ডিপোতে দুর্ঘটনায় নিহত হন ৫১ জন। আহত হন প্রায় দুই শতাধিক।