ভিওসি প্রতিবেদন

রণক্ষেত্রে ভবানীপুর৷ আর সেই রণক্ষেত্রে দুই নারী যোদ্ধা  মুখোমুখি৷ তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল৷ ভবানীপুর উপনির্বাচনে জমজমাট হয়ে উঠেছে প্রচার পর্ব। তৃণমূল জোরকদমে প্রচার শুরু করলেও, এখনও ময়দানে নামেনি বিজেপি। তবে কঠিন লড়াইয়ের জন্য তিনি প্রস্তুত বলে জানান বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। তিনি বলেন, “মানবতাকে বাঁচাতে এই লড়াইয়ে নেমেছি। শুধুমাত্র বিধায়ক হতে লড়ছি না। যাতে পশ্চিমবঙ্গ বাঁচে তার জন্যই লড়ছি। মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও বলব, মানবতা বাঁচাতে আমাকেই ভোট দিন।”

শনিবার তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের  হয়ে  বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে ফিরহাদ হাকিম  সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। ‘ঘরের মেয়ে’-কে ফের জয়যুক্ত করার আবেদন জানান তিনি। এরপর প্রতিপক্ষ বিজেপি প্রার্থীকে খানিকটা কটাক্ষ করে ফিরহাদ  বলেন, “ওর প্রতি শুভেচ্ছা রইল। কিন্তু দুঃখ হয় জিততে পারবে না। বাচ্চা মেয়ে।তবুও ভোটের লড়াইয়ে শুভেচ্ছা  জনাই ওকে।”

উল্লেখ্য, ভোটারদের অনেকে রসিকতা করে বলছে ভবানীপুর উপনির্বাচন কেন্দ্র কার্যত আদালত কক্ষে রূপান্তরিত হয়েছে। রসিকতা হলেও  ঘটনাচক্রে সত্যি,  এই কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে যাঁদের নাম উঠে এসেছে তাঁরা প্রত্যেকেই আইনজীবী! অনেকেই জানেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইনের ছাত্রী ছিলেন। তিনি যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তবে, সক্রিয় রাজনীতিতে চলে আসার পর আর পুরোদমে প্র্যাকটিস করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল কলকাতা হাইকোর্টের একজন পেশাদার ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) আইনজীবী। সাম্প্রতিক সময়ে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় বিরোধী পক্ষের হয়ে বারবার সওয়াল করতে দেখা গেছে তাঁকে। সিপিএমের তরফে ভবানীপুরে যাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে সেই শ্রীজীব বিশ্বাসও পেশায় আইনজীবী। তিনি বর্তমানে আলিপুর আদালতে প্র্যাকটিস করেন।

                                                                                           

সাধারণত উপনির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলের তেমন হেলদোল দেখা যায় না। কিন্তু সেই দিক থেকে ভবানীপুর ব্যতিক্রম। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে প্রার্থী। তাই ভবানীপুরে মমতার ‘ঘরের মাঠে’ পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপি তারকা প্রচারকের তালিকা থেকে বিধায়কদের দায়িত্ব দেওয়ার মধ্যে দিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এমনকি ইতোমধ্যে ভবানীপুরে ভোট প্রচারের ‘নতুন রূপরেখা’ তৈরি করা হয়েছে।এমনটিই জানায় বিজেপি সূত্র। এই রূপরেখায়  বিভিন্ন যৌনপল্লি এবং সংখ্যালঘু এলাকায় প্রচার ও ভোট ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া হয়েছে। সেজন্য যৌনকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবানীপুরের শ্রেণীভেদে সমস্ত বাড়িতেই যাবেন প্রিয়াঙ্কা। এর পাশাপাশি সংখ্যালঘু এলাকার সব বুথে এজেন্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। গত বিধানসভা নির্বাচনে যে সব এলাকায় বিজেপি কম ভোট পেয়েছিল সেখানে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। চেষ্টা চলছে ভোট বাড়ানোর। সূত্রের খবর, ভবানীপুরের সব বুথের জন্য দু’জন করে এজেন্ট তৈরি রাখা হচ্ছে। নেতৃত্বের ভাবনা,একজনকে ভয় দেখিয়ে তুলে দিলে যাতে আর একজন বসতে পারেন। বুথস্তর থেকে এজেন্ট ঠিক করা হবে। এজেন্টদের একটি তালিকা তৈরি রাখবে জেলা কমিটিও। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত ব্যানার ছাপানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যত বার ব্যানার ছিঁড়ে দেওয়া হবে, ততবার নতুন করে লাগানোর জন্য এই ব্যবস্থা বলে খবর।

মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ভোট প্রচারেও কোন খামতি রাখতে চাচ্ছেনা তৃণমূল নেতৃত্ব।এই জন্য নেয়া হয়েছে বিভিন্ন রকম কৌশল। নানা ধরণের শ্লোগানে লেখা রঙ বেরঙ-র ব্যানার, ফেস্টুনে ছেযেগেছে পুরো ভবানীপুর এলাকা। প্রচারণায় তারকাদের নামানোর জন্য তালিকা তৈরী হয়েছে।একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমুলের ট্রাম্প কার্ড ছিল ‘দুয়ারে সরকার’। উপনির্বাচনের আগেও

সেই কর্মসুচিই ফের হট কেক হয়ে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘১৬ অগাস্ট থেকে তিন কোটিরও বেশি মানুষ দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে এসে সমস্ত সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য বাংলার মানুষকে ধন্যবাদ জানাই। আমি বাংলার মানুষের জন্য যে সমস্ত সুবিধামূলক প্রকল্প দিয়েছি তা অন্য কোন রাজ্য কল্পনাও করতে পারেনা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত রকম সুবিধা দিয়ে বাংলার মানুষকে আমি আগলে রেখেছি। তারা আমাকে কখনও বঞ্চিত করবেনা, ভোটে জেতার জন্য আমি আত্মবিশ্বাসী।’ ভবানীপুরের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক বোঝাতে তিনি পোস্টে তুলে ধরলেন রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের কবিতার লাইন – ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক’। সেই সঙ্গে পরবর্তী প্রচার পরিকল্পনাও করে ফেললেন তৃণমূল নেত্রী।