প্রণব ভট্রাচার্য্য

সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল ‌‘জামদানি কূটনীতি’। চারদিনের সফরে হাসিনা যেখানেই গেছেন সেখানেই জামদানি পড়ে গেছেন। আর সেই শাড়ির সৌন্দর্য, নকশা সকলেরই মন কেড়ে নিয়েছিল। এমনকি হাসিনার সফরকালে দিল্লির ক্রাফটস মিউজিয়ামে যে আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করেছিল ‘এক্সিম বাজার’- সেখানেও হইচই ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশি জামদানি।

বাংলাদেশের জামদানি শাড়িতে মজেছে কলকাতার ক্রেতারাও। কলকাতার সামাজিক সংগঠন, বাংলাদেশ তৃণমূল নারী উদ্যোক্তা সোসাইটি (গ্রাসরুট) ও সাউথ এশিয়ান গ্রাসরুটস ডেভলপমেন্ট ফোরাম যৌথ উদ্যোগে কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি হলে শুরু হয়েছে হস্তশিল্প ও পর্যটন মেলা। এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় ৪০ ব্যবসায়ী। অষ্টম বছরে এই মেলার থিম ‘বাংলাদেশ’। ফলে ঢাকাই জামদানি, নকশি কাঁথা, যশোর স্টিচের ত্রি-পিস, গোলক বাটিকের বেডশিট, লুঙ্গি, গামছা যেমন আছে, তেমনি রাজস্থানি আংরাখা, ঘাগরা-চোলি, শান্তিনিকেতনের হস্তশিল্প- মেলায় কি নেই! ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মেলা শুরু হতেই কলকাতার গ্রাহকদের ব্যাপক সাড়া মেলায় উচ্ছ্বসিত দুই বাংলার ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার শীর্ষে রয়েছে সেই জামদানি শাড়ি। এর পরই রয়েছে বাংলাদেশের গামছা ও লুঙ্গি। সঙ্গে হাতে তৈরি নকশি কাঁথার হস্তশিল্প, গেঞ্জি, মশারি, শোপিস’ এরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশের ইরা বুটিকসের কর্ণধার ইলিনা রাহী ইরা বলেন, কলকাতায় সামনেই পূজা, এমন সময় মেলা আয়োজিত হওয়ায় ক্রেতাদের বাড়তি সাড়া পাচ্ছি।

বাংলাদেশের আরেক ব্যবসায়ী রোকসানা রিপু বলেন, কলকাতার মানুষের মধ্যে ঢাকাই জামদানি, টাঙ্গাইলের শাড়ি , হাতে বোনা টুপির ব্যাপক চাহিদা বেশি। যদি আরও কিছুদিন আগে থেকে এই মেলা শুরু করা যেত তাহলে আরোও ভালো বাজার পাওয়া যেত।

মেলা আয়োজক ও ব্যবসায়ী নাদিরা হোসেন রুপা বলেন, ‘প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৩০ জনের বেশি ব্যবসায়ী মেলায় অংশগ্রহণ করলেও চলতি বছর মেলায় এসেছেন মাত্র ১৬ জন ব্যবসায়ী। মহামারীর ধকল কাটিয়ে মেলায় ভালো সাড়া মিলবে এই নিয়ে অনেকেই সন্ধিহান ছিলেন। তাছাড়া চলতি বছর মেলার স্থান পরিবর্তন হওয়ায় মেলা কতটা ব্যবসাসফল হবে সেই নিয়েও প্রশ্ন ছিল। তবে সমস্ত বাধা কাটিয়ে প্রতিবছর মেলায় অন্য বছরগুলোর তুলনা তো বেশি সাড়া পেয়েছি আমরা। মেলা কিছুটা আগে শুরু করলে ভালো হতো। আমরা চেষ্টা করব পরের বছর কিছুটা আগে শুরু করার’।

কলকাতার মেলা কমিটির অন্যতম আয়োজক সুমিত রায়চৌধুরী বলেন, ‘অষ্টম বছরে আমরা হস্তশিল্পের পাশাপাশি দুই বাংলার অফবিট পর্যটন ক্ষেত্রগুলোকে প্রজেক্ট করতে আলাদা কাউন্টার করেছি। সেখানেও ভালো সাড়া পেয়েছি। তবে অনিবার্য কারণবশত আমাদের মেলার পূর্ববর্তী স্থান (বর্ণপরিচয় বুক মল প্রাঙ্গণ) পরিবর্তন করতে হয়েছে। ফলে চলতি বছর মেলা শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এই বছর আমাদের মেলার থিম বাংলাদেশ’।

তার অভিমত, এই মেলাকে কেবল কেনা-বেচার মাধ্যম হিসেবে দেখা হয় না, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কলকাতা বা রাজস্থানের ব্যবসায়ীদের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছে। এটি দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক বড় পাওনা’।