এম এ রহিম

কলকাতায় শুরু হওয়া ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) ইন্সপেক্টর জেনারেল এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অঞ্চল কমান্ডারদের মধ্যে চার দিনের  ১৮ তম সমন্বয় সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একটানা আলোচনাপর্বে ঐক্যমত্য কয়েকটি সিদ্ধান্তের পর বুধবার শেষ হয়েছে।

ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের দু’পাশেই অপরাধীরা সক্রিয় রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বর্ডার গার্ড প্রতিটিস্তরে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের  সীমান্তে একযোগে সমন্বিত টহল সহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ এবং অবৈধ আন্তঃসীমান্ত চলাচলের বিরুদ্ধে এক যোগে লড়াই করতে পারলেই কেবল সেই আপরাধীদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা নস্যাৎ করা যায়’- এই মন্তব্য করেছেন বিএসএফ’এর আইজি (দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার) ড. অতুল ফুলঝেলে।

এজন্য বিএসএফ’এর পক্ষ থেকে সর্বদা সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বিএসএফ’এর আইজি। বিজিবির প্রতি আস্থা ব্যক্ত করে তারাও একই ধরণের পদক্ষেপ নেবে বলে আশা ব্যক্ত করেন অতুল ফুলঝেড়ে। সম্মেলন শেষে তিনদিনের আলোচনায় উঠে আসা সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট ঐকমত্য সিদ্ধান্তপত্র(জয়েন্ট রেকর্ড অফ ডিসকাশন)-(জেআরডি)-এ স্বাক্ষর করেন বিএসএফ’এর ইন্সপেক্টর জেনারেল (দক্ষিণবঙ্গ) ড. অতুল ফুলঝেলে ও বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবিএম নওরোজ এহসান।

চার দিনের এই সম্মেলন শুরু হয় গত রবিবার (১৩ নভেম্বর)।বুধবার ছিল সন্মেলনের শেষ দিন। ১১ সদস্যের বিএসএফ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএসএফ’এর ইন্সপেক্টর জেনারেল (দক্ষিণবঙ্গ) ড. অতুল ফুলঝেলে। অন্যদিকে ১১ সদস্যের বিজিবি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবিএম নওরোজ এহসান (অতিরিক্ত মহাপরিচালক, এরিয়া কমান্ডার, উত্তর পশ্চিমাঞ্চল, রংপুর)।

১৮ তম সমন্বয় সম্মেলন শেষে জয়েন্ট রেকর্ড অফ ডিসকাশন (জেআরডি)-এ স্বাক্ষর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে বিজিবি ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএসএফ আইজি। তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের মতো সবচেয়ে জটিল এবং গতিশীল সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবি। উভয় দেশের এই সীমান্ত প্রকৃতির কথা বিবেচনা করে বিএসএফ এবং বিজিবি নিজ নিজ দিকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কার্যকরী বাস্তবায়নে একে অপরের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্পর্কের বিশেষ উষ্ণতা এবং উভয় বাহিনীর সংঘাত নিরসনের প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক পরিবর্তনও খুবই উৎসাহজনক। সেই সাথে তিনি এও আশ্বস্ত করেন যে, এই বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ চায় এই ধরণের ভাবনাকে মাঠপর্যায়ে নিয়ে যেতে, যাতে সমস্যাগুলি আরও সহজে সমাধান করা যায়।’

ফুলঝেলে আরও বলেন, ‘সমন্বিত বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (সিবিএমপি) একটি যন্ত্র যা উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী দ্বারা কার্যকরী সীমান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তায় সীমান্তে প্রহরারত উভয় বাহিনীর উপর।’

বিএসএফ প্রতিনিধিদলের দৃঢ় বিশ্বাস যে এই বৈঠক উভয় বাহিনীর সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। অন্যদিকে বিজিবি প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও উদার আতিথেয়তার জন্য বিএসএফ আইজিকে (দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার) ধন্যবাদ জানান বিজিবি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবিএম নওরোজ এহসান।

নওরোজ এহসান বলেন, উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতশীলতা বজায় রাখার পবিত্র দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস বন্ধুত্বপূর্ণ মতবিনিময়, সহযোগিতা, সমন্বয় এবং পারস্পরিক সমর্থন নিজেদের বোঝাপড়ার মধ্যেকার ফাঁক-ফোকর কমিয়ে দেবে এবং উভয় বাহিনীকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভিন্ন সীমান্ত সমস্যা সমাধান করতেও সক্ষম করবে।

পাশাপাশি, অভিন্ন লক্ষ্য পূরণে এই ধরনের আলোচনা দুই দেশের পারস্পারিক বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবিএম নওরোজ এহসান।