এই নিয়ে তারা রিজিওনাল ম্যানেজার কে দায়ী করে, তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান মৃত-র আত্মীয়রা ও স্থানীয় বাসিন্দা ।
দিব্যেন্দু গোস্বামী, বীরভূম থেকে
এলাকার সবার ঘরে আলো পৌছে দিতে গিয়ে নিজের জীবনের আলো নিভে গেল এক যুবকের। গতকাল অর্থাৎ ঘটনাটি ঘটে রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডের নিকটে। হতভাগ্য বিদ্যুৎ কর্মীর নাম নেপাল বেসরা।
এদিন ওই সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুতের লাইনে ট্রান্সফরমারে কাজ করছিলেন নেপাল বেসরা। কিন্তু এতদূর অব্দি ঠিকই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ওই লাইনে বিদ্যুৎ চলে আসলে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। একজন লাইনম্যান লাইনে কাজ করার সময় দপ্তরের অপদার্থতা ও অকর্মণ্যতায় ঘটনা স্থলেই বিদ্যুৎপৃষ্ট হন ওই যুবক। সহকর্মীরা বিদ্যুৎ বন্ধ করার জন্য তৎপর হলেও বাঁচানো যায়নি নেপাল বেসরাকে। মোদ্দা কথা বিদ্যুৎ দপ্তরের গাফিলতির ফলেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের, অভিযোগ এলাকা বাসীর।
খবর শুনে দমকল বিভাগ ঘটনাস্থলে এসে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে ওই যুবককে নিচে নামিয়ে আনা হয়। ততক্ষণে ওই যুবকের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। এই ঘটনা পর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল গোটা সিউড়ি জুড়ে। নেপালের নিথর দেহ নিয়ে আসা হয়েছিল সিউড়ি সদর হাসপাতালে। সেখানেই তার ময়না তদন্ত হয়। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল বিদ্যুৎ দপ্তরে গাফিলতির উদাহরণ। পেশায় ওই ঠিকা শ্রমিক বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করে আসছে বিদ্যুৎ দপ্তরে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একের পর এক ট্রান্সফর্মার কাজে তাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু কেউ বুঝতেও পারেনি বিদ্যুৎ দপ্তরের সামান্য ভুলের খেসারত দিতে হবে তরতাজা ওই যুবককে। তার মত অন্যান্য যারা ঠিকা শ্রমিক রয়েছে তারাও আতঙ্কগ্রস্থ।
আতঙ্কগ্রস্থ তাদের পরিবার পরিজনদের জন্য। কারো ঘরে রয়েছে মা-বাবা কারোর ঘরে স্ত্রী পুত্র কন্যা, এদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে ঠিকা শ্রমিকরা বিদ্যুৎ দপ্তরে কাজ করে চলেছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু তাদের ভাগ্যে মৃত্যুর মত ভয়াবহ বিপদ যখন তখন আসতে পারে। ফলে তাদের জীবন যে ঝুঁকিপূর্ণ সেই ব্যাপারেও তারা বিদ্যুৎ দপ্তরকে জানিয়ে আসছে। শুধু এখানেই নয় তাদের আক্ষেপ নেপাল মারা যাবার পরও বিদ্যুৎ দপ্তরের কেউই সরেজমিনে বা ফোন করেও তার খবর নেয়নি। তার পরিবার কে সমবেদনাও জানাননি রিজনাল ম্যানেজার কৃষ্ণ কুমার মিশ্র। আর এখানেই প্রশ্ন সমাজে যারা সরকারি বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেলেও এই ঠিকা শ্রমিকরা তা পায় না কেন?
সেই কারণেই সোমবার ঠিকা বিদ্যুৎ কর্মীরা তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই মৃত বিদ্যুৎ কর্মীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিউড়ির সুপার মার্কেটে থাকা বিদ্যুৎ দপ্তরের অফিসের সামনে জমায়েত করেন। তারা দাবি তোলেন মৃত ওই যুবকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতে হবে। বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রত্যেকটি ঠিকা শ্রমিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। শুধু নেপাল বেসরা নন যারাই বিদ্যুৎ দপ্তরে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন তাদেরকে নানান সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দিতে হবে। এই নিয়ে তারা রিজিওনাল ম্যানেজার কে দায়ী করে, তাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তারা জানান মৃত ওই যুবকের পরিবারের সদস্যকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তার পরিবারের একজনকে চাকরিতে নিয়োগ করতে হবে। যদিও এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনরকম উত্তর দিতে চাননি রিজওয়ানাল ম্যানেজার কৃষ্ণ কুমার মিশ্র। কিন্তু প্রশ্ন একটাই বিদ্যুৎ দপ্তরের গাফলিতির ফলে যে জীবন চলে গেল তার পরিবারকে সমবেদনাও জানালো না বীরভূমের বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকরা এটা কোন ধরনের শিষ্টাচার? এটা যদি আজ কৃষ্ণ কুমার মিশ্র বা তার বাড়ির কেউ হতো তা হলে তিন বা তার ভূমিকা কি হতো?