ত্রিপুরা থেকে দীপঙ্কর চক্রবর্তী 

ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন ছিল আজ। কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে সকাল থেকে ভোট দান শুরু হতেই বিজেপির বিরুদ্ধে রিগিং, ভোটারদের বাধা দেওয়া ও বিরোধীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।  ভোটগ্রহণকে ঘিরে শান্তিরবাজার, ধনপুর, খয়েরপুর–সহ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের বাধাদান ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ধনপুরে ভোটারদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। অভিযোগ করেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। হাঙ্গামায় ২ সিপিএম কর্মী জখম হয়েছে বলে জানা গেছে। একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।ঘটনার ব্যাপারে গেরুয়া শিবির অভিযোগ অস্বীকার করলেও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ ব্যাপারে মামলা রুজু করেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ ভোটদানে বাধা দিয়েছে বিজেপি কর্মীরা। ভোট দিতে না পেরে পথ অবরোধও করেছে ভোটাররা। আবার বিজেপি অভিযোগ করেছে অশান্তি তৈরি করছে সিপিএম–কংগ্রেস জোট। যদিও ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক গত্তি কিরণকুমার দিনাকররাও জানিয়েছেন  কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়াই ত্রিপুরার সর্বত্র শান্তিপূর্ণ ভোটদানের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে ত্রিপুরার ভোটপর্ব।

২০১৮ সালে দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে এরাজ্যের ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তাই ত্রিপুরায় ক্ষমতা ধরে থাকা পদ্মশিবিরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। বিজেপি এবার লড়ছে আইপিএফটির সঙ্গে জোট করে। রাজ্যের ৬০ আসনের মধ্যে মোট ৫৫ আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। বাকী পাঁচটি আসন ছেড়েছে জোট সঙ্গী ইন্ডিজেনাস পিপিলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা(আইপিএফটি-কে)। তবে বাম-কংগ্রেস জোট এবারের ভোটে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে। বিজেপিকে ধাক্কা দিতে এবার জোট হয়েছে বাম-কংগ্রেসের। বামফ্রন্ট লড়ছে ৪৭ আসনে। অন্যদিকে কংগ্রেস লড়াই করছে ১৩ আসনে। বাকি আসনে অন্যান্য বাম দল। বিধানসভা ভোটে লড়াই করছে তৃণমূল কংগ্রেসও। তারা ২২টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে।   এছাড়াও তিপ্রামথা ৪২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। যার মধ্যে ২০টি আসনই আদিবাসী অধ্যুষিত।

ত্রিপুরায় এবারের নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। এই অবস্থায় ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া বিজেপি। সিপিএম-কংগ্রেসও এবার কোমর বেঁধে নেমেছে তার পুরনো জমি উদ্ধার করতে।  চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে ত্রিপুরা রাজন্যপরিবার দল তিপ্রমথাও।

তৃণমূলও ভোটে জিততে  তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে বাংলার মতোই ত্রিপুরায়ও মহিলাদের জন্য একাধিক প্রকল্প চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যেমন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, প্রাপ্তবয়ষ্ক মহিলাদের বিয়ের জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা অনুদান। এমনকী, সবুজ সাথী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মতো প্রকল্পেরও উল্লেখ রয়েছে তৃণমূলের ইস্তেহারে।

বৃহস্পতিবার  ভোট দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা সাংবাদিকদের বলেন, কংগ্রেস-সিপিএমের মধ্যে এক অশুভ জোট হয়েছে। আমরাই ফের ক্ষমতায় আসব। তিপরা মোথাকে নিয়ে ভাবছি না। প্রসঙ্গত, গতবছর মে মাসে বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে আনা হয় মানিক সাহাকে।

ভোটে উপ মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেব ভার্মা লড়াই করছেন চালিলাম আসন থেকে। ত্রিপুরা বিজেপি প্রেসিডেন্ট রাজীব ভট্টাচার্য লড়াই করছেন বনমালিপুর আসনে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক লড়াই করছেন ধানপুর আসন থেকে। ত্রিপুরা থেকে তিনিই কোনও মহিলা যদি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তিপরা মথার প্রার্থী অমিয় দয়াল নেওটিয়া। রাজ্যের বর্তমান বিধায়ক প্রাণজিত্  সিং রায়কে রাধাকিশোরপুর থেকে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। বিজেপির পাপিয়া দত্ত এবার লড়াই করছেন কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ রায় বর্মণের বিরুদ্ধে। কারবুক আসন থেকে সিপিএমের প্রিয়মনি দেববর্মা লড়াই করছেন বিজেপির অসীম ত্রিপুরা ও তিপরা মোথার সঞ্জয় মানিকের বিরুদ্ধে।

ত্রিপুরায় মোট ৩০ জন মহিলা প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সর্বোচ্চ ১২ জন মহিলাকে টিকিট দিয়েছে। সিপিএম দু-জন, টিপরা মোথা দুইজন, তৃণমূল কংগ্রেস তিনজন, কংগ্রেস একজন মহিলা প্রার্থী দিয়েছে।

গত বিধানসভায় ৩৬ আসনে জিতেছিল বিজেপি। সিপিএম পেয়েছিল ১৬ আসন। আইপিটিএফ জয়ী হয় ৮ আসনে।

এবার মোট ২৮ লক্ষ ১৪ হাজার ভোটার। মোট বুথের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৭।  নির্বাচনের ফলাফল গণনা হবে আগমী ২ মার্চ।