গণতন্ত্র জিতেছে বলেছেন দিল্লির নতুন মেয়র
প্রণব ভট্রাচার্য্য
নয়া দিল্লি : প্রিমকোর্টের হস্তক্ষেপে অবশেষে দিল্লির মেয়র হয়েছেন শেলি ওবেরয়। নয়াদিল্লির রাজনীতিঅঙ্গনে এখন আলোচিত বিষয় এটি। কেন্দ্রের ক্ষমতাশীন বিজেপি সরকারের প্রবল বাধা আপত্তি দমাতে পারেনি তার মেয়র হওয়ার পথে।
তার জয়ের প্রতিক্রিয়ায়, বুধবার নব-নির্বাচিত মেয়র ডাঃ শেলি ওবেরয় বলেছেন, “গণতন্ত্র জিতেছে, দিল্লি জিতেছে”। দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মিনিট পর তিনি হাউজকে বলেন, “জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।” বিবৃতিতে ড. ওবেরয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া, আপ-র সদস্য এবং কাউন্সিলর বিধায়ক, সাংসদ যারা তার প্রার্থীতাকে সমর্থন করেছিলেন এবং সাথে বিশে্য করে এবং লেফটেন্যান্ট-গভর্নর ভি কে সাক্সেনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ওবেরয় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকার কথাও স্বীকার করে বলেছেন, “আমি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এবং ভারতের প্রধান বিচারপতির কাছেও অত্যন্ত কৃতজ্ঞ কারণ তাদের আদেশের কারণে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে আমার মেয়র হ্ওয়া তারই প্রকৃষ্ট উদাহরন। সুপ্রিম কোর্টের নিরপেক্ষ আদেশ আজ এমসিডি এবং আমাকে দিল্লির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার এই সুযোগ করে দিয়েছে।”
তিনি তার জয়কে দিল্লির জনগণ এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মেয়র শেলী বলেছিলেন ” এই নির্বাচনের ফলাফলও প্রমাণ করে যে গত কয়েকদিন ধরে এমসিডিতে বিরাজ করছিল ‘গুন্ডাগর্দি’ তা সত্তেও পরাজিত হয়েছে তারা এবং এটি সত্যের জয়,”
গত ৬, ২৪ জানুয়ারি ও ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সভাগুলো মেয়র ও ডেপুটি মেয়র নির্বাচন ছাড়াই মুলতবি করা হয়।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক, তিনি তার একাডেমিক খ্যাতির জন্য বেশি পরিচিত, কিন্তু তিনি ইস্ট প্যাটেল নগর ওয়ার্ড থেকে ডিসেম্বরের এমসিডি ভোটে নির্বাচনী অভিষেকে সাফল্যের স্বাদ পেয়েছিলেন — যা দিল্লি বিজেপির প্রাক্তন প্রধান আদেশ গুপ্তার হোম টার্ফ হিসাবে বিবেচিত হয়৷ তার রাজনৈতিক অভিযান এবং পরবর্তী জয়ের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি যোগ করেছেন, “আমার পরিবার এটি নিয়ে গর্বিত। আমি শিক্ষাবিদ এবং আমার সমস্ত অধ্যাপকরা আমাকে নিয়ে গর্বিত। তবে প্রত্যাশাও অনেক বেশি। সবাই খুশি এবং অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমার উপর।” প্রেস কনফারেন্সে ভাষণ দেওয়ার সময়, ওবেরাই দিল্লির ডেপুটি মেয়রের নির্বাচন পরিচালনার জন্য হাউসে ফিরে যাওয়ার আগে কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছিলেন।
” দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মানুষকে যে ১০টি গ্যারান্টি দিয়েছেন, এবং তিনি দিল্লির জন্য যে স্বপ্ন দেখেছেন, আমরা সেগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব,” মেয়র হিসাবে তার অগ্রাধিকার গুলি কী হবে সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে আপ নেতা বলেছিলেন, ” অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে আমি আমার মেয়াদকালে সেরাটাই উপহার দেব, আগামীকাল থেকে দিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে, এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে ল্যান্ডফিল সাইটগুলির পরিদর্শন করা হবে,” তিনি বলেছিলেন। আপ-র নেতা আলি মোহাম্মদ ইকবাল যিনি দিল্লির ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, বিজেপির কমল বাগরিকে ৩১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন, তিনি বলেন আমি দিল্লির জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের উন্নতির জন্য নিরলস কাজ করবো। আলি মোহাম্নদ ইকবাল কোলল বাগরির ১১৬ ভোটের বিপরীতে ১৪৭ ভোট পেয়েছেন। এই ভোট সিভিক সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নব নির্বাচিত মেয়র ড. শেলি ওবে রয় বলেন “আমরা জানি যে তীব্র বিরোধীতা করে বিজেপি ৮০ দিন নষ্ট করেছে তবে আমরা এই ঘাতটিটি আগামি আট দিনে কভার করব। আমাদের অনেক কাজ করতে হবে এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ১০টি গ্যারান্টি পূরণ করা আমাদের অগ্রাধিকার হবে। আমরা জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাজনীতিতে শেলি ওবেরয়ের যাত্রা শুরু ২০১৩ সালে। এক দশকের ব্যবধানে দিল্লির মেয়রের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন তিনি। রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষকতাও করতেন তিনি। ছিলেন দিল্লি ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক।
১৯৮৩ সালে দিল্লিতে শেলির জন্ম। শেলির বাবা সতীশ কুমার ওবেরয় একজন ব্যবসায়ী। মা সরোজ ওবেরয় গৃহিণী। পরিবারে মা-বাবা ছাড়াও এক ভাই ও এক বোন রয়েছেন শেলির।
পড়াশোনা করেছেন দিল্লির ফেইথ একাডেমি ও জানকি দেবী মেমোরিয়াল কলেজে। ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। বাণিজ্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। হিমাচল প্রদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর করেন শেলি। পরে তামিলনাড়ুর আন্নামালাই ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শনে আরেকটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ থেকে পিএইচডি করছেন শেলি।