ভারতের মাটিতে আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা দেখছেন সৌরভ গাঙ্গুলি

বাংলাদেশ থেকে হরলাল রায় সাগর

ওয়ানডেতে বরাবরই সমীহ করার মতো দল বাংলাদেশ। এই সংস্করণের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ঘিরে তাই থাকে বাড়তি প্রত্যাশা। তার উপর চলতি বছরের আসর বসবে ভারতের মাটিতে। চেনা কন্ডিশনে খেলা হওয়ায় অনেকেই আশাবাদী, এবার ভালো কিছু করবে বাংলাদেশ। তাদের মধ্যে আছেন ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের সদ্য সাবেক সভাপতি ও দেশটির সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিও। তার ধারণা, ওয়ানডে বি্শ্বকাপে নকআউট পর্বে পৌঁছে যাবেন তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানরা।

বাংলাদেশে সফরের দ্বিতীয় দিন আজ শুক্রবার বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন সৌ রভ গাঙ্গুলি। দীর্ঘ দিনের বন্ধু ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ইফতেখার রহমানের বাসায় বসে তিনি কথা বলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। এর আগে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলিকে নিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

২০০৭ আসরে শচিন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভদের ভারতকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের সামর্থ্য জানান দেয় বাংলাদেশ। তারকাখচিত দলকে বিদায় করে সেবার খেলে সুপার এইটে। এরপর ২০১৫ সালের আসরে প্রথমবারের মতো তারা খেলে কোয়ার্টার-ফাইনালে। ২০১৯ আসর থেকে বিশ্বকাপ হচ্ছে অন্য ফরম্যাটে। ১০ দলের টুর্নামেন্টে সেরা চার দল খেলে সেমি-ফাইনালে। ইংল্যান্ড আসরে অষ্টম হওয়া বাংলাদেশকে এবার নকআউট পর্বে দেখছেন সৌরভ। তবে এর জন্য কিছু শর্ত পূরণের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

‘(ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নিয়ে) আমার প্রত্যাশা অনেক। কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত আশা করি। একটু যদি ভাগ্য থাকে আর ভালো ফর্ম থাকে। বিশেষ করে স্পিনার ও ফাস্ট বোলারদের যদি ভালো ফর্ম থাকে তাহলে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল পর্যন্তও যেতে পারে।’ওয়ানডেতে নিজেদের বলার মতো অবস্থান তৈরি করলেও, সাদা বলের ক্রিকেটের অন্য সংস্করণে এখনও ধুঁকছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই ব্যাটসম্যানের দেখা পায়নি এখনও। এমন কেউ নেই যিনি মুহূর্তের মধ্যে বদলে দিতে পারেন খেলার দৃশ্যপট।

সৌরভও তুলে ধরলেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এই দিকটি। সৌরভ বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে একটু ভালো করতে হবে, একটু পাওয়ার হিটিং দরকার। পাওয়ার হিটিং মানে হেভি হিটিং যেমন হার্দিক পান্ডিয়া রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব বা ইংল্যান্ডের (জস) বাটলার, অস্ট্রেলিয়ার (গ্লেন) ম্যাক্সওয়েল, (ট্র্যাভিস) হেড, ক্যামেরন গ্রিণ… পাওয়ার হিটিংটা একটু দরকার টি-টোয়েন্টিতে। তিনি বলেন, ‘আশা করি, এখানে যারা কোচ আছে…(চান্দিকা) হাথুরুসিংহে মনে হয় নতুন কোচ হয়ে এসেছে। হয়তো একটু সময় লাগবে। টি-টোয়েন্টি এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্করণ। (বাংলাদেশে) প্রতিভা অনেক, পাওয়ার হিটিংটা একটু দরকার।’

টি-টোয়েন্টির মতো টেস্টেও পায়ের তলায় শক্ত মাটি খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ। এরপর থেকে এত দিন ধরে বাংলাদেশ দলকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে ভালো করারও পথ দেখালেন তিনি।

‘(টেস্টে) বোলিং আক্রমণ গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাটিংটাও…সবুজ গতিময় ও বাউন্সি উইকেটে একটু সাহসী ব্যাটিং দরকার। সেটা খেলতে খেলতেই হবে। আমার মনে হয়, এটা একটা এডুকেশন প্রোগ্রাম হওয়া উচিত বাংলাদেশের, টেস্ট ক্রিকেটে। ছোট থেকে মানে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকেই তাদের তৈরি করা, সিমিং ও বাউন্সি পিচে কীভাবে খেলা যায়।’

‘এটা খুব একটা শক্ত কাজ নয়। চেষ্টা করলেই হতে পারে। বাংলাদেশে এখন ফাস্ট বোলাররা আছে। তাসকিন (আহমেদ) আছে। তাসকিন ফিট থাকলে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণটা দেখতে ভালো লাগে। একটু দৃঢ় সংকল্প, একটু শক্ত মানসিকতা দরকার।’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌরভ গাঙ্গুলির সৌজন্য সাক্ষাৎ: বাংলাদেশ সফরে থাকা সৌরভ গাঙ্গুলি আজ শুক্রবার সকালে দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এই সাক্ষাতের সময় সৌরভের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলি ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।এটি শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল বলে জানিয়েছে বিসিবি সূত্র।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের আমন্ত্রণে ঢাকা সফরে এসে সৌরভ গাঙ্গুলি বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার একটি হোটেলে উদ্বোধন করেন ‘ডিএনসিসি মেয়র কাপ-২০২৩।’

উদ্বোধনী আয়োজনে নিজের বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রতি নিজের আবেগ ও এদেশের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসার কথা বারবার তুলে ধরেন ভারতের হয়ে ১১৩ টেস্ট ও ৩১১ ওয়ানডে খেলে সাড়ে ১৮ হাজার রান করা ব্যাটসমান। সৌরভ ভারতীয় বোর্ডের প্রধান থাকার সময় ভারত প্রথমবার গোলাপি বলের দিন-রাতের টেস্ট আয়োজন করে ২০১৯ সালের নভেম্বরে। সেসময় সৌরভের আমন্ত্রণে কলকাতায় খেলা উপভোগ করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তখন প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন সৌরভ। “আপনাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তিনি অবিশ্বাস্য। উনাকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা, প্রণাম। একজন প্রধানমন্ত্রী এখানে এসে বলছেন, ‘আমি সারাদিন খেলা দেখব, হোটেলে যাব না’, এটা ভাবা যায় না। উনাকে আমার তরফ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা দেবেন।’