গোফরান পলাশ, বাংলাদেশ দক্ষিনাঞ্চল
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিনাঞ্চলীয় জেলা পটুয়াখালীর কলপাড়ায় পাঁচদিনব্যাপী রাসপূর্ণিমা উৎসব শেষ হলো। সমাপনি অনুষ্ঠানেও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় পূন্যাস্নানের মধ্য দিয়ে সোমবার (৭ নভেম্বর) থেকে কুয়াকাটায় শুরু হয় রাস উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবার (০৮ নভেম্বর) ভোর ৫ টা ৩০ মিনিটে জাগতিক সকল পাপ মোচনের আশায় কুয়াকাটার সমুদ্রে গঙ্গাস্নান সম্পন্ন করেন হিন্দুধর্মালম্বীরা।
স্নানের আগে সৈকতে মোমবাতি, আগরবাতি, বেল পাতা, ফুল, ধান, দুর্বা, হরিতকী, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্রে জলে অর্পন করে সনাতনী নারীরা। এসময় উলুধ্বনি ও মন্ত্র পাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সমুদ্র সৈকত। এ ছাড়া মাথা ন্যাড়া সহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিন্ডদান করেন অনেক মানতকারীরা। এর আগে রাতভর কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে পূজা অর্চনা, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও মহানাম কীর্তনে মেতে ওঠে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পটুয়াখালী ৪ আসনের সাংসদ অধ্যক্ষ মোঃ মুহিব্বুর রহমান মহিব রাসপূর্ণিমা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রখ্যাত শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর সংগীত পরিবেশনা দর্শকদের আনন্দিত করে। পরে অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল ধর্মীয় উৎসব শুরু হয়ে মঙ্গলবার সকালে সমুদ্র স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
রাস পূজা আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, সৈকতের পাড়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসবেন পূণ্যর্থীরা।, তারা সাগরকে সামনে রেখে নির্জনে কৃষ্ণপূজার সঙ্গে দেবতার নীল কমল আর গঙ্গাদেবীর আরাধনায় মগ্ন হন। কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে নিরাপত্তায় কঠোর ছিল প্রশাসন। আমাদের প্রায় ৪শত ৪৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত ছিল। আজকে সকালে রাসমেলার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপত্তা বহাল রাখবো। তিনি বলেন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এবছর কলাপাড়ায় রাস্উৎসবে ব্যাপক লোকের সমাগম ঘটে কুয়াকাটা ও কলাপাড়ায়।
এদিকে কলাপাড়া পৌর শহরের শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমে রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৯ টায় অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শ্রী শ্রী কৃষ্ণের ৫ দিন ব্যাপী রাস উৎসবের অনুষ্ঠিকতা। আশ্রম প্রাঙ্গন সাজানো হয় নতুন সাজে। মন্দির প্রাঙ্গনে স্থাপন করা হয়েছে ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা। একই সাথে মেলার আখড়া প্রঙ্গনে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণঢ্য মেলার। মদনমোহন মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানের দোকানীরা হরেক রকমের পশরা নিয়ে বসে। মেলায় হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে। তিনদিনের এই মেলায় ব্যাপক বানিজ্যে ব্যবসায়িরা লাভবান হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, দাপরযুগে কংশ রাজার অত্যাচারে মানবকুল যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল তখন মহান সৃষ্টি কর্তার নির্দেশে মানবকুলকে অত্যাচারী রাজার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, মানব কল্যানের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রী কৃষ্ণ আবির্ভূত হন এই ধরাধামে। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কংস রাজাকে বধ করে মানবকুলকে রক্ষা করেন। পরবর্তিতে মানুষের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি
মোচন করার মানসে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ শ্রী রাধীকাকে নিয়ে বৃন্দাবনের তমাল ও কদমকুঞ্জে নিষ্কাম প্রেমের উপাখ্যান রচনা করেন। এর পরথেকেই রাধা কৃষ্ণের অর্চনায় ঐতিজ্যবাহী রাসলীলা বা রাসপূজা উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে । ভারতের বিভিন্ন এলকায় বিশেষ করে নদীয়ার নবদ্বীপ, মথুরায়, পুরিতে ব্যাপক ভাবে এই রাসপূণিমা উক্ষসব পালিত হয়।
কলাপাড়া শ্রী শ্রী মদন মোহন সেবাশ্রম কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাথুরাম ভৌমিক বলেন, রবিবার সন্ধ্য সাড়ে ৯ টার দিকে অধিবাসের মধ্যদিয়ে ঐতিহ্যবাহী রাস লীলা উৎসব ও মেলার অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছোল। আগামী ১০ নভেম্বর ভক্তদের মাঝে কুঞ্জভঙ্গ ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।
কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, যে সকল দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিবছরের মত এবছরও পর্যপ্ত নিরাপত্তা ব্যস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জন যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত যানবাহনেরো বিশেষ ব্যবস্থা ছিল।